Barak UpdatesHappeningsBreaking News
১০৮ অ্যাম্বুলেন্সেই প্রসব, চব্বিশ ঘন্টায় দুই ঘটনা, সুস্থ মা-সন্তানেরা
ওয়েটুবরাক, ২ জুলাইঃ ১০৮ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু হওয়া এবং তাদের প্রশিক্ষিত ইএমটি-রা অ্যাম্বুলেন্সে কর্তব্যরত থাকেন বলে কাছাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রসূতিরা নিরাপদে সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন। নইলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে প্রসব হয়ে কত মা যে অশেষ কষ্ট ভোগ করতেন, কত সদ্যোজাত জন্মেই হয়তো পৃথিবী থেকে বিদায় নিত।
মঙ্গলবারই কাছাড়ের ১০৮ অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে জন্ম দিয়েছেন দুই প্রসূতি। তাঁদের পক্ষে হাসপাতালে আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার, সহ্য করার সুযোগ ছিল না। কিন্তু দুটি ঘটনাতেই মা ও সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন। ১০৮ পরিষেবার কাছাড় জেলার ইনচার্জ পল্লবীতা শর্মা বলেন, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে তিনটায় সিভিল হাসপাতালের ১০৮ অ্যাম্বুলেন্সের ইএমটি জহিরুল ইসলামের কাছে ফোন আসে, কাঁঠাল রোড এলাকায় একজন গর্ভবতী মহিলা প্রসব বেদনায় কষ্ট পাচ্ছেন। তখন জহিরুল ইসলাম এবং গাড়িচালক ইসলাম উদ্দিন দ্রুত প্রসূতির বাড়ি পৌঁছান এবং তাঁকে নিয়ে শিলচর মেডিক্যাল কলেজের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। কিন্তু মাঝপথে প্রসববেদনা এত প্রচণ্ড হয় যে, জহিরুল ইসলাম নিজে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই সন্তান প্রসব করান। ভোর ৪টা ৭ মিনিটে সুস্থ ফুটফুটে বাচ্চা জহিরুল তুলে দেন মায়ের হাতে। তারপর মা এবং সন্তানকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ভর্তি করানো হয়। এখন উভয়েই সুস্থ আছেন।
একই রকমের ঘটনা ঘটে এ দিন দুপুরে। আরকাটিপুর থেকে একজন প্রসূতিকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার সময় মাঝ রাস্তায় তাঁর প্রসব যন্ত্রণা তীব্র হয়ে ওঠে। ১০৮ পরিষেবার ইএমটি হাসিম আলী নিখুঁত ভাবে প্রসব করান। পরে মা ও সদ্যোজাতকে সুস্থ অবস্থায় শিলচর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়।
পল্লবীতা বলেন, ১০৮ পরিষেবা এই ভাবে ২৪ ঘণ্টা মানুষের সেবা করে চলেছে। এই পরিষেবা যে আবার সাধারণ প্রক্রিয়াতেই তাঁরা দিতে পারেন, তা কিন্তু নয়। অনেকসময়েই তাঁদের নানা প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করতে হয়। জহিরুল ইসলাম, হাসিম আলির মতো ইএমটি এবং তাঁদের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা ওই সব প্রতিকূলতা কাটিয়েই হিরোর মতো কাজ করে যাচ্ছেন।
১০৮ পরিষেবার কাছাড় জেলার ইনচার্জের দাবি, গ্রাম বরাকের অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় বেহাল সড়ক। এমনকী শহরেরও বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি চালানোর উপায় নেই। কোথাও আবার জলে ডোবা রাস্তা। রোগীদের সঠিক সময়ে পরিষেবা দিতে ওই সব প্রতিকূলতার মোকাবিলা করতে হয় তাঁদের। বাজে রাস্তায় দিনরাত চালানোর দরুন গাড়ির অবস্থাও অনেক খারাপ। কিছুদিন পর পর বরাক-ব্রহ্মপুত্র সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় কারণেও এই অঞ্চলের রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়া যায় না। তখন তাদের জনরোষের সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু এতসবের পরেও ১০৮ পরিষেবার কর্মীদের পরিশ্রমে কোনও ভাটা পড়ে না বলে তাঁদের সাধুবাদ জানান পল্লবীতা। তিনি বলেন, তাঁরা রোগীর জীবন বাঁচানোর নিরন্তর যুদ্ধ চালিয়ে যান। যদি বরাকের প্রত্যেকটি রাস্তা চলাচলযোগ্য করা হয় তাহলে কোনও রোগীই ১০৮ পরিষেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন না বলে জোর গলায় দাবি করেন পল্লবীতা।