Barak UpdatesHappeningsBreaking News

৩০০ শয্যা চাইতে গিয়ে ধরা পড়ে, সিভিল হাসপাতালে সমস্যার পাহাড়, আন্দোলনমুখর দাবি কমিটি

দেখা করার সময় দিচ্ছেন না জেলাশাসক, বিধায়ক!

ওয়েটুবরাক, ২৮ জানুয়ারি : ১০০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও শিলচর সিভিল হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসা পরিকাঠামো  গড়ে ওঠেনি৷ প্রতিবাদে সংগঠিত হয়েছেন শিলচরের বিভিন্ন সংস্থা-সংগঠন৷ গঠন করেন পৃথক সংস্থা শিলচর সিভিল হাসপাতাল আধুনিকীকরণ দাবি কমিটি৷ তাঁদের অভিযোগ, এই অঞ্চলের রোগীরা আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। হাসপাতালটির অবস্থা অনেকদিন ধরেই জরাজীর্ণ। অথচ শিলচর শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই হাসপাতালের উন্নতি হলে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ওপর চাপ অনেকটাই কমে আসার কথা।

শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে কমিটির মুখ্য আহ্বায়ক কমল চক্রবর্তী বলেন, ২০২০ সালের নভেম্বরে ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসাবে সিভিল হাসপাতালের শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে এসে ঘোষণা করেছিলেন, এই হাসপাতালকে ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী চলে যাবার পর পরই বিশাল এক সার্ভে টিম এসে এগারো দিন ধরে পুরো হাসপাতাল জরিপ করে। তারপর থেকে সব চুপচাপ৷ গত সপ্তাহে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শিলচরে এলে দাবি কমিটির এক প্রতিনিধি দল তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে৷ তাঁরা তাঁরই করা ঘোষণার কথা মনে করিয়ে দেন৷ তিনি এ দিন প্রতিনিধিদের আশ্বস্ত করেন বটে, কিন্তু এ পর্যন্ত কোনও উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানাতে পারেননি৷ শুধু পাশে বসা সাংসদ রাজদীপ রায়কে বলেন বিষয়টি মনিটরিং করার জন্য৷

শুক্রবারের সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি কমিটির পক্ষে কৃশানু ভট্টাচার্য, নির্মল দাস প্রমুখ বলেন, এই হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ২০১৯ সাল থেকেই কাজ করছিল মার্চ ফর সায়েন্স, শিলচর শাখা এবং পিপলস সায়েন্স সোসাইটি। তাদেরই উদ্যোগে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের বাস্তবায়নের দাবিতে গত ৩ অক্টোবর ২০২১ সালে একটি নাগরিক সভা হয়৷ সেখানেই গড়ে ওঠে “শিলচর সিভিল হাসপাতাল আধুনিকীকরণ দাবি কমিটি”। গত চার মাসে ২০টি সংগঠন দাবির সমর্থনে এগিয়ে আসে।
কিন্তু সিভিল হাসপাতালের আধুনিকীকরণের দাবি নিয়ে ভেতরে ঢুকে তাঁরা বিস্মিত৷ প্রত্যেক জায়গায় নানা ধরনের সমস্যা৷ হাসপাতালের ব্লাড ব‍্যাংকের কর্মী অপ্রতুলতার জন্য রক্ত সংগ্ৰহ করার কাজ অনেক সময় আটকে যায়। তাছাড়া সেখানে রক্তের কম্পোনেন্ট আলাদা করার ব‍্যবস্থা নেই।

হাসপাতালে আইসিইউ না থাকায় রোগীদের মুমূর্ষু অবস্থায় মেডিক্যাল কলেজে পাঠাতে হয়৷ এ ছাড়া, হাসপাতালের জল সরবরাহ ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে আছে। সরবরাহের লাইনগুলো বহু পুরনো হ‌ওয়ার দরুণ ঠিক মত জল পৌঁছায় না। পুরো হাসপাতাল চত্বর আবর্জনায় ভরা। যেদিকে তাকানো যায়, সেদিকেই ঝোপঝাড়, জঙ্গল ও আবর্জনা। সিভিল হাসপাতাল চত্বর প্রায় ১০ একর জমির উপর অবস্থিত। এই বিস্তৃত জায়গায় বর্জ্য জল বেরিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও নালা-নর্দমা নেই বললেই চলে। সব জঙ্গল ও আবর্জনায় ঢাকা পড়ে আছে। কিছু পাকা নালা যা-ও ছিল, বেশিরভাগই ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে। হাসপাতাল চত্বরে ম্যালেরিয়া বিভাগের অফিসে অনেক মহিলা কর্মী কাজ করা সত্বেও শৌচাগারে জল নেই৷ এমনকী, অফিসে খাওয়ার জলের ব‍্যবস্থাও নেই। ম্যালেরিয়া বিভাগের দিকে হাসপাতালের যে বাউন্ডারি দেওয়াল আছে তার অনেকটাই পাশের বাড়িগুলো জবর দখল করে নিয়েছে। হাসপাতাল চত্বরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রক্ষীর অভাব থাকার দরুন প্রায়ই অসামাজিক কার্যকলাপ ঘটে থাকে৷

দাবি কমিটির সদস্য হরিদাস দত্ত ও পরিতোষ দত্ত বলেন, এই অবস্থা দেখে তাঁরা তিনশো শয্যার দাবির পাশাপাশি ওই সমস্যাগুলির নিরসনেও সক্রিয় হন৷ স্থানে স্থানে স্মারকলিপি পাঠান৷ চারমাস ধরে স্বাস্থ্য বিভাগের যুগ্ম সঞ্চালক, সিভিল হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেন৷ জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর এবং পুরসভায়ও বহুবার যান তাঁরা৷ নিজেরা উপস্থিত থেকে পুরসভা থেকে শ্রমিক এনে চারমাস ধরে জঞ্জাল নিষ্কাশন চলছে৷ ষাট গাড়ি জঞ্জাল তুলে ট্রেঞ্চিং গ্রাউন্ডে পাঠানো হয়৷ দিনের পর দিন কমিটির সদস্য এবং সমর্থনকারীরা শ্রমিকদের টিফিন সহ আনুষঙ্গিক খরচ বহন করছেন৷

বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত সিভিল হাসপাতালের সমস্যা সমাধানের জন্য শিলচরের বর্তমান সাংসদ ডাঃ রাজদীপ রায়ের সঙ্গেও দেখা করেন কমিটির সদস্যরা। শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী ও জেলাশাসক কীর্তি জল্লির সঙ্গেও আলোচনা করতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু লিখিত আর্জি জানানোর পরও না আইএএস অফিসার সময় দিলেন, না কথা বলতে চাইলেন শিলচরবাসীর ভোটে নির্বাচিত বিধায়ক। কেন তাঁরা সময় দিচ্ছেন না, এ রহস্যজনক ঠেকছে আধুনিকীকরণ দাবি কমিটির৷ কারণ তাঁরা যুগ্ম সঞ্চালকের সঙ্গে কথা বললে তিনি সিভিলের সুপারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন৷ সুপার জানান, তাঁর ক্ষমতা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত৷ সব সিদ্ধান্ত নেয় এগজিকিউটিভ কমিটি৷ ওই কমিটির চেয়ারম্যান হলেন জেলাশাসক৷ আর দীপায়ন চক্রবর্তীর তো বিধায়ক হিসাবে এগিয়ে আসারই কথা ছিল৷

কমিটির কর্মকর্তা হিল্লোল ভট্টাচার্য জানান, তাদের এখন হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং আধুনিকীকরণের দাবিতে আন্দোলনে নামা ছাড়া উপায় নেই৷ ৩০০ শয্যার আধুনিক মানের সিভিল হাসপাতালের দাবি নিয়ে তাঁরা শীঘ্রই জনগণের কাছে যাবেন৷ প্রচার অভিযান চালাবেন, একটি স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে নামবেন৷ সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক হানিফ আহমেদ বড়ভুইয়া, বিবেক আচার্য, নিখিল পাল, সুরজিৎ সোম প্রমুখ৷

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker