Barak UpdatesHappeningsBreaking News
২৫ ডিসেম্বর সমাবর্তন কেন? সড়ক মন্ত্রী কেন দীক্ষান্ত ভাষণ দেবেন? লিখেছেন দিলীপকুমার দে
৯ ডিসেম্বরঃ জেনে বিস্মিত হলাম, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে পবিত্র উৎসব ও জাতীয় ছুটির দিনে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবার (২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২০) সমাবর্তনের আয়োজন করেছেন। আরও বিস্মিত হলাম যে তাঁরা কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গাড়কারিকে দিয়ে দীক্ষান্ত ভাষণ দেওয়ানোর জন্য মুখ্য অতিথির আসনে বসাবেন।
খবর সত্যি হলে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের অপরিণত আচরনের তীব্র প্রতিবাদ করতেই হয়। এটি নজিরবিহীন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও নীতিবিরোধী সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল, এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল ও কোর্ট সদস্যরাও কি জ্ঞান-বুদ্ধির প্রয়োগ বিস্মৃত হয়েছেন?
আমি উপাচার্য অধ্যাপক দিলীপ চন্দ্র নাথের নজিরবিহীন অনৈতিক কাণ্ডকারখানা ও বিদগ্ধ শিক্ষকমণ্ডলীর নীরবতা দেখে হতবাক হয়ে গেছি। কারণ, আমিও দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলাম৷ সেজন্য জেলও খেটেছি (অন্য সাথীদের সাথে, শিলচর ও গৌহাটি কেন্দ্রীয় জেলে)৷ নিজের যোগ্যতায় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল, বোর্ড অব স্টাডিজ (পোস্ট গ্রাজুয়েট সহ), অনুমোদন, পরীক্ষা সহ অনেক নীতিনির্ধারণী সমিতির সদস্য ছিলাম। অবসরের পর রাজ্যপালের প্রতিনিধি হিসেবে কোর্ট সদস্য ছিলাম। আমি জানি, নানা কমিটিতে শিক্ষকসদস্যদের সম্মতি ছাড়া, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়া উপাচার্য দিলীপ চন্দ্র নাথের মত একজন কর্মকর্তা সড়ক পরিবহন মন্ত্রীকে দিয়ে ডি-লিট, ডি-এসসি, পিএইচডি, এমফিল, এমনকি বিএ/বিএসসি/বিটেক/বিএড ডিগ্রিও দেওয়াতে পারেন না। স্বয়ং আচার্য পারেন, দেশবরেণ্য কোন শিক্ষাবিদ আমন্ত্রিত হতে পারেন।
আমি মাননীয় সড়ক মন্ত্রী নীতীন গাড়কারিকে অতিথিরূপে সম্মান জানাচ্ছি। তিনি বরাকে আসুন। শ্রদ্ধেয় বাজপেয়ীজির স্বপ্নের ‘মহাসড়ক’ কতটুকু হয়েছে, কারা সেখানে হরির লুট চালাচ্ছে, তার যথাযথ খোঁজ নিন। বাজপেয়ীজির প্রতি সামান্য কৃতজ্ঞতাবোধ অবশিষ্ট থাকলে মহাসড়কের কাজ আর দেরি না করে শুকনো মরসুমে সম্পন্ন করুন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের পবিত্র নিয়মনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। প্রয়োজন কী এই সমাবর্তনে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের পরিবর্তে নিজেকে মুখ্য অতিথি হিসেবে জাহির করে উচ্চতম ডিগ্রি বিতরণ করার, আর দীক্ষান্ত ভাষণ দেবার? তিনি বিশিষ্ট সর্বভারতীয় রাজনীতিবিদ। প্রধানমন্ত্রিত্ব করার যোগ্যতা তাঁর রয়েছে। জেনেশুনে কেন এক কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ভঙ্গের ভাগীদার হতে যাবেন, চাটুকারদের নিয়মবহির্ভূত আহ্বানে?
অধ্যাপক দিলীপ চন্দ্র নাথ সাধারণ সৌজন্য বোধরহিত, তার দৃষ্টান্ত অনেক রেখেছেন। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেবাকাল শেষ হলে আর নবীকরণের প্রয়োজন নেই, সময়কাল না বাড়িয়ে আবার আগের ক্লাসরুমে ফিরে যান। বরাকের ও পাহাড়ি জেলার জন্য স্থাপিত ‘আসাম বিশ্ববিদ্যালয়’ -এর আর অবনমন আমরা দেখতে চাই না। আমরা তাকে অসম্মান করতেও চাই না। তিনি বরাকের মানুষ। ইচ্ছে করলে শিক্ষাঙ্গন ছেড়ে বাইরে রাজনীতির ময়দানে যোগ দিতে পারেন। কিন্তু দেশের শিক্ষাজগতে এমন দুষ্কর্মের ঘাটি হিসেবে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জড়াবেন না, যাতে আমাদের মাথা হেট হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্মোহ অনুরোধ, ২৫ ডিসেম্বর তারিখে সমাবর্তন করবেন না৷ মাননীয় সড়কমন্ত্রীকে মুখ্য অতিথি রূপে আমন্ত্রণ করে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন না। ইতিমধ্যে আমন্ত্রণ করে থাকলে তা ফিরিয়ে নিন।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞ শিক্ষকদের প্রতি বিনম্র অনুরোধ, আপনারা উপাচার্যকে বোঝান, নীতিহীনতার পথ থেকে সরে আসতে। দায়িত্ব আপনাদেরও আছে। কারও প্রতি ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নিয়ে এই প্রতিবাদ বা অনুরোধ করছি না। শিক্ষা আর দলীয় রাজনীতি এক নয়।
(অধ্যাপক দিলীপ কুমার দে শিলচর সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ৷)