Barak Updates
২১ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ, উত্তর করিমগঞ্জের জিপি সচিব উধাও, মামলা
১৫ ফেব্রুয়ারি: পঞ্চায়েত সচিব, জিপি সভাপতি ও আমলাদের একটি চক্র করিমগঞ্জ জেলায় কোটি কোটি টাকার কাজ কাগজেপত্রে দেখিয়ে আত্মসাৎ করে নিচ্ছে l পক্ষকাল আগে করিমগঞ্জের জেলাশাসকের দ্বারস্থ হন উত্তর করিমগঞ্জ বিধানসভার কৃষ্ণনগর জিপির জনগণ৷ অভিযোগ জানান, ২১ লক্ষ টাকার কাজ না করিয়ে আত্মসাৎ করে নেওয়া হয় l প্রাক্তন জিপি সভাপতি ও বর্তমান জিপি সভাপতির সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রাক্তন জিপি সচিব সেই টাকা পঞ্চায়েতের অ্যাকাউন্ট থেকে ধাপে ধাপে তুলে নেন l প্রাক্তন জিপি সচিবের দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ সহ জেলাশাসকের কাছে তুলে ধরেন পাঁচজন গ্রুপ সদস্য l জেলাশাসক সঙ্গে সঙ্গে জেলা পরিষদের সভাপতি ও সিইওকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলেন l পরে জেলা পরিষদ থেকে দক্ষিণ করিমগঞ্জ উন্নয়ন খন্ডের বিডিওকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় l বিডিও প্রাথমিক তদন্ত করে জানতে পারেন, শুধু চতুর্দশ অর্থ কমিশনের প্রকল্প থেকে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২১ লক্ষ টাকা কোনও কাজ না করিয়ে আত্মসাৎ হয় l প্রাথমিক পর্যায়ে দুর্নীতি প্রমাণ হওয়াতে আইনি পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দেন জেলাশাসক আম্বামুথন এমপি l
এদিকে জেলাশাসকের নির্দেশে বিডিও কৃষ্ণনগর জিপির প্রাক্তন সচিব কৃপাশংকর দত্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন৷ লঙ্গাই পুলিশ পেট্রোল পোস্টে মামলা নং ১২৭/১৯৷ এখন পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে৷ তার বাড়িতে হানা দিয়েও সন্ধান নেই l এমনকি মোবাইল সুইচ অফ করে রেখেছেন প্রাক্তন সচিবের। তবে দীর্ঘ দিন থেকে তার সন্ধান না পাওয়াতে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে বিডিও সংবাদ মাধ্যমকে অবগত করেন । তিনি জানান পাঁচ গ্ৰুপ সদস্যের অভিযোগে তদন্তে নেমে দেখতে পান ২০১৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জিপির অ্যাকাউন্টে ১৬ লক্ষ ৮০ হাজার 335 টাকা জমা হয়।এই টাকা ছিল চতুর্দশ অর্থ কমিশনের প্রথম কিস্তির টাকা। ঐ বছর ৩ মার্চ দুটি চেক দিয়ে ৬৫ হাজার এবং ১ লক্ষ ১২ হাজার টাকা উঠানো হয়।চেক নম্বর ছিল যথাক্রমে 011684 এবং 011683 । একি বছর মার্চের ১৫ তারিখ 011685নম্বরের চেক দিয়ে 1লক্ষ 95 হাজার টাকা উঠানো হয়। মোট এগারটি চেক দিয়ে এই বছরের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত সবগুলো টাকা তুলে নেওয়া হয়। একাউন্ট ছিল সেন্ট্রাল ব্যাংকের করিমগঞ্জ শাখায় সচিব কৃপা শংকর দত্ত ও পঞ্চায়েত সভানেত্রী মিত্রা পুরকায়স্থের নামে।
২০১৯ পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর সভানেত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন জিপির তিন বারের প্রাক্তন সভাপতি আব্দুল জলিলের পুত্রবধূ মনোয়ারা বেগম। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ২ মার্চ চতুর্দশ অর্থ কমিশনের দ্বিতীয় কিস্তির ১৬ লক্ষ ৯২ হাজার ৬২১ টাকা ব্যাঙ্কে জমা হয় l এই টাকা থেকে জিপির উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে । জিপি সচিব বুদ্বিকরে প্রাক্তন সভানেত্রীর নাম একাউন্ট থেকে কি ভাবে উন্নয়ন হয়েছে তা অবগত করানো নবনির্বাচিত সভানেত্রী মনোয়ারা বেগমকে l সচিব বলেন উন্নয়ন কি করে করতে হয়ে তা তিনি জানিয়ে দেবেন l নিয়ম মতে প্রাক্তন জিপি সভাপতির নাম কর্তন করে নতুন সভানেত্রীর নাম একাউন্টে অন্তর্ভুক্ত করান । এর পর 2019 সালে 18 মে ১৯ লক্ষ ৫৫ হাজার ৬৬২ টাকা আবার ব্যাঙ্কে জমা হয় জিপির একাউন্টে । এই মাসের ২৮ তারিখ 011671 নম্বরের চেক দিয়ে ৮০ হাজার টাকা উঠানো হয়। তিন কিস্তিতে মোট পাঁচ লক্ষ সত্তর হাজার টাকা উঠানো হয় বর্তমান সভানেত্রী মনোয়ারা বেগমের সময়ে। কৃষ্ণনগর জিপির গ্ৰুপ সদস্য, ইকবাল আহমেদ তাপাদার. আব্দুল রকিব. ফকরুল ইসলাম প্রমুখ অভিযোগকারীরা জানান, বিগত ও বর্তমান পঞ্চায়েতের সময়ে যত টাকা আত্মসাৎ হয়েছে তার হিসাব দিতে হবে প্রাক্তন সচিব, প্রাক্তন সভানেত্রী ও বর্তমান সভানেত্রীকে। কারণ তাদের যৌথ স্বাক্ষর ছাড়া ব্যাংক থেকে কোন ধরনের লেনদেন করা যায় না । তারা বলেন প্রাক্তন জিপি সচিব কৃপা শঙ্কর দত্তের কার্য্য কালে বিভিন্ন প্রকল্পের তদন্ত করলে অনেক দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসবে l
এদিকে জেলা পরিষদের সভাপতি আশিস নাথ যুগশঙ্খকে বলেন করিমগঞ্জের পঞ্চায়েতর উন্নয়নের নামে বিগত দিনের সব দুর্নীতির তদন্ত হবে l তিনি বলেন গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন পঞ্চায়েত দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রাজ্যের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী পঞ্চায়েত গুলোতেও রাস্তা, স্কুলের বাউন্ডারি, কালভার্ট প্রভৃতি নির্মাণ হচ্ছে। করিমগঞ্জের অনেক জিপিতে কাজ হয়েছেঠিক কিন্তু সঙ্গে দুর্নীতির আবাসও মিলেছে তবে সব দুর্নীতির তদন্ত হবে এবং দোষীর উপযুক্ত শাস্তিও হবে l