Barak UpdatesHappeningsBreaking News
হে প্রভু: শিলচরের বিশালের কণ্ঠ ছড়িয়ে পড়েছে রিলে-রিলে
ওয়েটুবরাক, ৩০ মার্চঃ “হে প্রভু, হে হরিনাম কৃষ্ণ জগন্নাথো…”৷ এমন বাক্য এখন মানুষের মুখে মুখে৷ শুধু কি আর শিলচর বা অসম, দেশে এখন একশো রিল তৈরি হলে পঞ্চাশটির নেপথ্যেই শোনা যায় “হে প্রভু”৷ এমনকী দেশের বাইরেও রিলে রিলে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে তাঁর কণ্ঠ৷
কীভাবে হল ব্যাপারটা, তা নিজেও বুঝতে পারছেন না শিলচর কনকপুর রোডের যুবক বিশাল দেবনাথ৷ কোনও চালাকি নেই, সোজাসাপ্টা বললেন, “রিল-টিল কিচ্ছু নয়, এ এক সাধারণ ভিডিয়ো৷ কোনও স্ক্রিপ্ট ছিল না, ছিল না কোনও পরিকল্পনাও৷”
২০২২ সালের জুনে বরাক নদীর বাঁধ ভেঙে বন্যায় ভাসে গোটা শিলচর৷ বহু জায়গায় একতলার ছাদের ওপর দিয়ে নদী বয়ে চলে৷ কনকপুরে তাদের একতলা বাড়িটিও পুরো ডুবে যায়৷ বাবা-মা-ছেলে পরিবারের তিনজনই গিয়ে পিসির বাড়ি আশ্রয় নেন৷ পাশেই দোতলা বাড়ি তাদের৷ সাতদিন পরে জল নামতে শুরু করে৷ দুই পিসতুতো ভাইকে নিয়ে নিচতলায় যান বিশাল৷ সেখানে তখনও গলাজল৷ সামনের দিকে এগোচ্ছিলেন তিন ভাই৷ আচমকা ভিকি বহু কষ্টে সঙ্গে রাখা মোবাইলের ক্যামেরা অন করেন৷ আর এক ভাই বাপন দেবনাথ বলে ওঠেন, “হে প্রভু”৷ বিশালের কথায়, “ওই দুই শব্দ ধরেই যা যা মনে আসছিল, বলতে থাকি৷ একসময় কিছু আবোলতাবোলও বলে দিই৷”
পরে ভিকিই তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তা পোস্ট করে৷ প্রথম তিনদিনে দর্শক জুটে যায় ১.০৭ লক্ষ৷ এর পর আর হিসেব নেই৷ ফেসবুকে শেয়ারের পর শেয়ার, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম কোথায় নেই “হে প্রভু”৷ বিভিন্ন ভাষায় কমেডি, নন-কমেডি রিলে শোনা যায় বিশালের গলা৷ কিছু ব্লগার তাঁর শব্দগুচ্ছের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেও দর্শক টানছেন৷ এমনও হয়েছে, লক্ষ্যে পৌঁছুতে এক গেমার তার অনলাইন গেমেও জুড়ে দিলেন বিশালের “হে প্রভু”৷ ওড়িশায় এক সঙ্গীতানুষ্ঠানে বিশালের কথার অংশবিশেষ নিয়ে প্রদর্শন করা হয়েছে লাইট অ্যান্ড মিউজিক শো৷ রেডিও জকিরাও তাঁদের অনুষ্ঠানে কথায় কথায় “হে প্রভু” বলে হাসছেন, হাসাচ্ছেন৷ মিম, কমেডি সবেতেই উপস্থিত বিশালের “প্রভু”৷
এত ভাইরাল, এত রিলে যুক্ত হচ্ছে যাঁর কণ্ঠ, দুই বছরে তাঁর জীবনযাত্রায় কি কোনও ফারাক নেই? “কী করে হবে”, বিশাল বললেন, “একটি টাকাও আমার বা ভিকির অ্যাকাউন্টে জমা পড়েনি৷” কী করে ওই সূত্রে রাজস্ব আসে, কার কাছে কণ্ঠ ব্যবহারের মাশুল দাবি করতে হয়, কিছুই জানেন না রাধামাধব কলেজের প্রাক্তনী, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এমকম পডুয়া৷ তবু তিনি খুশি, বন্যার কথা মানুষ ভুলতে বসলেও ভুলেনি তাঁর “হে প্রভু হে হরিনাম”৷ এখনও রাস্তায় বের হলে তাঁকে দেখে পরিচিত-অপরিচিতরা বলে ওঠেন “হে প্রভু”৷