NE UpdatesBarak UpdatesHappenings
স্মৃতিচারণায় সতু রায়: বহুবার দেখা-কথা হয়েছে আমাদের!
//সতু রায়//
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক সেই ১৯৭৬-৭৭ সাল থেকে। কতবার যে তাঁর সঙ্গে দেখা-কথা হয়েছে। গুয়াহাটি, দিল্লি, শিলচর, করিমগঞ্জে। রাজনীতির কথা হয়েছে, রাজনীতির বাইরের কথা হয়েছে।
করিমগঞ্জের চিত্রবাণী সিনেমা হলে এক সভায় তিনি এসেছিলেন। আমি তাঁকে ‘বর্তমান সময়ের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ বলে উল্লেখ করেছিলাম। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি হওয়ার জন্য যে সব মানবিক গুণাবলীর প্রয়োজন, এখন পর্যন্ত আমি তা অর্জন করতে পারিনি।’
আমি দেখেছি, প্রণব মুখার্জি একজন খাঁটি বাঙালি ছিলেন। কিন্তু অতি বাঙালিয়ানা পছন্দ করতেন না। সকল ধর্মের, সকল সম্প্রদায়ের, সকল ভাষাভাষী মানুষের অপূর্ব সম্মিলনে এক অখণ্ড জাতিসত্তা গঠনে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই রাষ্ট্রপতি হয়েও তিনি বারবার বহুত্ববাদের কথা বলেছেন।
রাজনীতির বাইরেও মানবিক প্রণববাবুকে দেখেছি। তখন আমি যুব কংগ্রেস সভাপতি। করিমগঞ্জে এসেছিলেন প্রণববাবু। আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, রাজনীতি ছাড়া আর কী করেন? আমি বলেছিলাম, একটা স্কুলে চাকরি করতাম। যুব কংগ্রেস সভাপতি হয়ে সেটা ছেড়ে দিয়েছি। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ‘আগে নিজের উপার্জনের কথা ভাবুন। রাজনীতি তো করবেন, নিজের কথাও যে ভাবতে হবে।’ বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথাবার্তা হয় সে দিন। তিনি গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন, করিমগঞ্জ সীমান্তশহর। ফলে আপনাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। এই শহরকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।
হোটেল ব্রহ্মপুত্র অশোকাতে তাঁর সঙ্গে একান্তভাবে কথা বলি। আমি ও আব্দুল মুক্তাদির চৌধুরী। সেদিন তিনি বারবার বলছিলেন, আমাদের সামনে ঘোর দুর্দিন। ধর্মনিরপেক্ষ জাতিসত্তা গঠনের যে প্রতিশ্রুতি আমাদের জাতীয় নেতারা দিয়ে গিয়েছিলেন, আমাদের কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।
যখনই যেখানে কথা বলেছি, শুনেছি মূল্যবান পরামর্শ। আজও আমার মনে পড়ছে রথীন সেনের বাড়িতে খেতে খেতে কথা বলছিলেন। বলছিলেন, সুস্থ রাজনীতি করতে হবে, তাহলেই সুস্থ সমাজ গড়ে উঠবে। রাজনীতি যে একটা সাধনার জায়গা, তাঁর মুখেই শুনেছিলাম। আর নিজের জীবনেও তিনি তা প্রয়োগ করে গিয়েছেন।
এমন তাপসের প্রয়াণে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হল।