Barak UpdatesHappeningsBreaking News
স্মৃতিকুঞ্জে অপরূপা কবি অন্নপূর্ণা দেবী বার্মা, লিখেছেন মিতা দাসপুরকায়স্থ
//মিতা দাসপুরকায়স্থ//
কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নামটি দেখেছি অনেকবার। বেশ গালভরা নাম। নামের মধ্যে দৈবী ভাব। ছাপা দেখলে শ্রদ্ধাশীল হয় মন কবির প্রতি। মনে ভাবি ইনি কি বরাক উপত্যকার মানুষ না বহির্বরাকের, একবার দেখার খুব ইচ্ছে জাগলো কারণ সময়ে সময়ে তার কবিতা হিন্দি ও বাংলায় আমি দেখেছি । মনের অদম্য ইচ্ছার আকর্ষণ কোনোদিন আমার অসফল হয় না৷ মনের ইচ্ছা সব দিনই আমার পূর্ণ হয়৷ একদিন হঠাৎই আমার শ্যামাপ্রসাদ রোড ‘নতুন দিগন্ত প্রকাশনী’র কার্যালয়ে অশোক বার্মা সস্ত্রীক এসে উপস্থিত হলেন৷ পরিচয় করিয়ে দিলেন ‘আমার সহধর্মিণী অন্নপূর্ণা দেবী বার্মা’ । অত্যাশ্চর্য হলাম, ভাবতে পারিনি অন্নপূর্ণা দেবী ভার্মা কবি-গদ্যকার- অনুবাদক অশোক বার্মার স্ত্রী। মনে মনে অন্নপূর্ণা দেবীকে সামনে থেকে দেখে পুলকিত। সত্যিই যেন মায়ের মত। অন্নপূর্ণা। অনেকটা মাকে সামনে থেকে দেখার অনুভূতি হল। হাসি মুখ, মুখে শান্ত সৌম্য ভাব, প্রশান্তি। অশোক বর্মার সঙ্গে অসামান্য বন্ধুত্বপূর্ণ জুটি । অশোক বার্মা তখন আমার ‘নতুন দিগন্ত প্রকাশনী’ থেকে বই করছিলেন ‘ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে আমি’ যার গদ্যাংশগুলি আমার সম্পাদনায় সাপ্তাহিক ‘বরাকের নতুন দিগন্ত’ ও মাসিক ‘দিগন্তিকা’য় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল।
সেই শুরু । তারপর অশোক বার্মার সঙ্গে আরো কয়েকবার এসেছেন প্রকাশনীর অফিসে , প্রত্যেকবারই তাঁর প্রসন্ন হাসি মুখ ও অমায়িক ব্যবহার দেখেছি । তিনি নিজেও শিক্ষিকা এবং শিক্ষকের স্ত্রী । তাঁর ব্যবহারে সংস্কারে তিনি অবশ্যই আদর্শ শিক্ষকের মত পথ দেখিয়েছেন আমাদের মত অনেককে । সম্প্রতি ‘বালার্ক প্রকাশনী’র ইউটিউব চ্যানেলে কবি অন্নপূর্ণা দেবী বার্মা আমার একটি স্বরচিত কবিতা হিন্দিতে অনুবাদ করে পাঠ করেছেন খুব সুন্দর ভাবে বলিষ্ঠ আওয়াজে স্পষ্ট উচ্চারণে মূল ভাবের সঙ্গে সংগতি রেখে। আমি তাঁর কাছে ও তাঁর বন্ধু স্বামী কবি-অনুবাদক-গদ্যকার অশোক বার্মার কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি আমার কাছে অপরূপা । আমার দেখা ও শোনা মতে তিনি ‘বালার্ক প্রকাশনী’র ইউটিউব চ্যানেল ও অন্যান্য কাজকর্মে অশোক বার্মার সঙ্গে যোগ্য সহযোগিতা করেছেন৷ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সব সময় পাশে থেকেছেন । তিনি বেঙ্গালুরুতে ছিলেন গত কয়েক বছর৷ কিন্তু সেখানে তিনি অসুস্থ হলেও তাঁর নিজের তৈরি শিলচরের বাসস্থানে এসে এখানেই পরপারে যাত্রা করেন। বিদেশ বিভুঁইয়ে কিছু না হয়ে পরিচিতজনদের মধ্যে এখানে শিলচরে তাঁর মৃত্যু হয়েছে৷ ব্যাপারটি লক্ষণীয় ও প্রয়াতার কাছে শান্তি ও স্বস্তির । রেখে গিয়েছেন স্বামী, পুত্র, পুত্রবধূ ও ছোট্ট নাতিকে। তাঁর সুশিক্ষায় পুত্র ও পুত্রবধূ তাঁরই মত অতিথিবৎসল বন্ধুপরায়ণ।
তাঁর হিন্দি ও বাংলা কবিতা মিলে একটা বই প্রকাশের উদ্যোগ অবশ্যই অশোক বার্মা নেবেন বলে আশা করছি।
আমি অশোক বার্মার সপুত্র সুস্বাস্থ্য দীর্ঘজীবন কামনা করি৷ পরম মঙ্গলময়ের কাছে প্রার্থনা করি তাঁর সৃষ্টিশীলতা ও উদারতা যেন বজায় থাকে।
মৃত্যু অত্যন্ত স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, কার জীবনে কখন আসবে কেউ বলতে পারে না। মৃত্যুকে আমি চোখের সামনে দেখেছি প্রাণ ছিনিয়ে নিতে, ধরে রাখার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি । শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ধরতে চেয়েছি, জড়িয়ে ধরতে চেয়েছি, তবুও প্রাণবায়ুকে আটকানো যায়নি । তাই জীবনবন্ধু হারানোর অপরিসীম বেদনা উপলব্ধি করি৷ ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, কবি-অনুবাদক অশোক বার্মার স্ত্রীবিয়োগের শূন্যতা পূরণ হোক তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে সৃজনশীল কাজেকর্মে। যেখানেই থাকুন কবি অন্নপূর্ণা দেবী বার্মা, তাঁর আত্মার চিরশান্তি হোক। যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন । জীবনের মত মৃত্যুর ওপারেও সদা প্রসন্ন থাকুন। ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি।