Barak UpdatesIndia & World UpdatesFeature Story
সুযোগ পেতেই মাথাচাড়া দিল রাজীব ঝা-র বাংলাপ্রেম
২৪ অক্টোবরঃ কিশোর বয়সটা কলকাতার শ্যামবাজারে কেটেছে। তৃতীয় থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন নতুনপাড়ার আদর্শ বিদ্যালয়ে। হিন্দি মাধ্যমের স্কুল হলেও বাংলা পড়তে হয়েছে। সেই যে বাংলার প্রতি টান তৈরি হয়েছিল, তা আজও লালন করে চলেছেন হাইলাকান্দি জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক রাজীবকুমার ঝা। কিন্তু কলকাতা ছাড়ার পর আর বাংলা পড়া হয়নি। এ বার সুযোগ পেতেই ভর্তি হয়ে গেলেন বাংলার ডিপ্লোমা কোর্সে। সঙ্গে ভর্তি হয়েছেন স্ত্রী আভা কুমারীও।
দুজনেরই মূল বাড়ি বিহারের মধুবনী জেলায়। ভালো পড়াশোনার জন্য রাজীববাবুকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কাকা মহেন্দ্র ঝা সেখানে সাংবাদিকতা করতেন। কিন্তু তিনি স্বেচ্ছাবসর নিলে তাঁকেও কলকাতা ছাড়তে হয়। সঙ্গে বাংলা পড়ার সুযোগটাও। বিহার মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে মাধ্যমিক, দ্বারভাঙা মারোয়াড়ি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, বেনারস থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর কোথাও বাংলার ছোঁয়া ছিল না। ২০০৬ সালে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে চাকরির সুবাদে অসমের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রথমে ধুবড়িতে, পরে স্নাতকোত্তর শিক্ষক হিসেবে বরপেটায়। ৫ বছর সেখানে থাকার পর বদলি হন গুয়াহাটিতে। তখনই বসেন আসাম পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায়। পাশ করে নিযুক্তি পান হাইলাকান্দি জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক পদে। গত বছরের ১০ জুলাই বাঙালিপ্রধান হাইলাকান্দিতে আসেন তিনি।
রাজীববাবুর কথায়, চারদিকে সবাই বাংলায় কথা বলছেন। তা দেখেই মনে হল, এ বার বাংলা শেখা হয়ে যাবে। দুই ছেলেকে হাইলাকান্দিতে ভর্তি করান। তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে তারা। ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল হলেও বাংলা পড়ানো হয়। সুযোগ পেলেই তাদের বাংলা বইয়ের পাতা ওল্টান। এই ভাবে ফের বর্ণমালা, সংখ্যা চেনা হয়ে যায়। তাতে নতুন করে বাংলা পড়ার ইচ্ছা জাগে। ভর্তি হতে চান বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের ডিপ্লোমা কোর্সে। স্ত্রী আভাকুমারী ঝাড়খণ্ডে পড়াশোনা করেছেন। সেখানে প্রচুর বাঙালি বন্ধু-বান্ধবী ছিল তাঁর। সে সুবাদে বাংলা ভালোই বলতে পারেন। রাজীববাবুর সঙ্গে তিনিও ভর্তি হতে চান। গতমাসে দু-জনই বসেন প্রবেশিকা পরীক্ষায়। পাশও করে যান। রবিবার ভর্তি হলেন।
অসমে টেট পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রে শর্ত রয়েছে, মাধ্যমিকে বাংলা, অসমিয়া বা বড়ো একটি স্থানীয় ভাষা পাশ করতে হবে। ইংরেজি ও হিন্দি মাধ্যমের ছেলেমেয়েরা তাতে বিপাকে পড়েন। সরকার তাদের জন্য ডিপ্লোমা কোর্স চালু করে। অসমিয়া শেখানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় অসম সাহিত্য সভাকে, বাংলা বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনকে। রাজীববাবু বা আভাদেবীর অবশ্য টেট-এর ব্যাপার নেই। তাঁদের ইচ্ছে, ডিপ্লোমার মাধ্যমে বাংলাটা শেখা। তখন আর রবীন্দ্র সাহিত্যের অনুবাদ পড়তে হবে না। মৌলিক রচনারই স্বাদ নেবেন।