CultureBreaking News
সুন্দরীদের হাটে শারদ বন্দনায় আমরা
৩o অক্টোবর : শারদীয়া পুজো যে জাত-পাত ও সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে, তা আরও একবার প্রমাণিত হল ‘আমরা’ আয়োজিত শারদ উৎসবে। কারণ দুর্গোৎসব আজ বিশ্বজনীন রূপ নিয়েছে। সব ধর্মের মানুষই পুজোর দিনগুলোতে এক আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে কাটান। আমরা’র শারদ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় লক্ষ্য করার মতো বিষয় হল, এক মুসলিম সুন্দরীর শিরোপা প্রাপ্তি।
শারদ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় তৃতীয় অর্থাৎ সেকেন্ড রানার্স আপ হয়েছেন সিমরন সোনিয়া লস্কর। তিনি এ বিষয়ে বলেওছেন, ধর্মের মোড়কে এই শারদ সুন্দরী প্রতিযোগিতাকে তিনি দেখেননি। বাঙালিয়ানা ও সৌন্দর্য প্রকাশের ভাবনা থেকেই পুরো বিষয়টি তিনি দেখেছেন। সিমরন যখন পারফরম্যান্স রাউন্ডে ধুনুচি নৃত্য প্রদর্শন করলেন, তখন বাস্তবিকই ধন্যবাদ না জানিয়ে পারা যায়নি। ২০১৮-র শারদ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ানের খেতাব ছিনিয়ে এনেছেন পূজা চৌধুরী এবং দ্বিতীয় অর্থাৎ ফার্স্ট রানার্স আপ হয়েছেন অনসূয়া আচার্য। এছাড়াও বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে একঝাক সুন্দরী বিভিন্ন শিরোপা পেয়েছেন।
পুজোর মুখেই ছিল আমরা আয়োজিত এই সুন্দরী প্রতিযোগিতা। নির্দিষ্ট দিনে বাঙালিয়ানায় এক অনন্য সাজে সেজে উঠেছিল শহরের বঙ্গ ভবনও। সন্ধ্যায় মঞ্চের পর্দা উঠতেই দেখা গেল দেবী দুর্গার প্রতিমার সামনে কয়েকজন আরতি করছেন। ধুনুচি নৃত্য ভঙ্গিমায় কোমর দুলিয়ে মহিলারাই ঢাকের তালে দেবীর বন্দনায় রত। লালপাড় শাড়ি পরে মঞ্চেই দাঁড়িয়ে আমরার সব সদস্য।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে অন্যতম শিপ্রা পুরকায়স্থ মঞ্চে আহবান জানালেন তিন বিচারক মিসেস ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল বিজয়ী স্মিতা দেব, লেখক-প্রাবন্ধিক অঞ্জু এন্দো এবং বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব রাহুল দাশগুপ্তকে। ছিলেন আমরার সভাপতি মৌসুমী ঘোষ ও সম্পাদক কলিতা ঘোষ সহ অন্যরা। ‘সর্ব মঙ্গলা মঙ্গল্যে’ নেপথ্য স্তোত্রগানের সঙ্গে প্রদীপ প্রজ্বলন করে শুরু হল অনুষ্ঠান। এরপর আয়োজকদের পক্ষ থেকে বিচারকদের সংবর্ধনা জানানো হয়। তার ঠিক পরেই শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান।
ঘোষক অংশুমান আচার্য ‘আমরা’ সম্পর্কে কিছু কথা বলে অনুষ্ঠান শুরু করেন। তিনি মঞ্চে একে একে আহবান করেন তিনি সুন্দরীদের। প্রথমেই ছিল পরিচয় পর্ব। এই রাউন্ডে দু’জন করে প্রতিযোগী ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের সঙ্গে ক্যাটওয়াক করে মঞ্চে আসেন। তাঁরা প্রত্যেকেই নিজেদের পরিচয় সাবলীলভাবে তুলে ধরেন। দ্বিতীয় পর্বটি ছিল প্রপস রাউন্ড। এই পর্বে প্রতিযোগীরা পুজো ও আরাধনায় ব্যবহারের সামগ্রী নিয়ে মঞ্চে আসেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা যে যার মতো করে প্রদর্শন করেন।
শারদ সুন্দরী প্রতিযোগিতার তৃতীয় পর্বে ছিল বিচারকদের প্রশ্নোত্তর। প্রতিযোগীদের কেউ কেউ খুব সুন্দরভাবে জবাব দিতে গিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেছেন, আবার কেউ একেবারেই মানানসই উত্তর দেননি। তবে এই রাউন্ড থেকেই নম্বরের মাত্রা স্থির হয়ে গিয়েছিল। তা চূড়ান্ত রূপ পায় রাতে সুন্দরীদের মাথায় দেবী দুর্গার মুকুট পরিয়ে দিয়েই। সে এক অন্যরকম পরিবেশের অবতারণা করেছিলেন আমরার সদস্যরা। ঠিক যেন একটি কাঠাম, মাঝখানে প্রথম, দু’পাশে দ্বিতীয় ও তৃতীয়। বাঙালি সংস্কৃতি ও পরম্পরার এক মূর্ত রূপ।
এ তো গেল মূল অনুষ্ঠানের কথা। কিন্তু এ দিন আমরার মঞ্চের এক বড় অংশ জুড়ে ছিল শিশুরা। বড়দের থেকে ওরা কম যায়নি, র্যাম্প ওয়াক বা প্রতিভা প্রদর্শন দুটো ক্ষেত্রেই শিশুরা সমানতালে পাল্লা দিয়েছে। বরং কয়েকটি ক্ষেত্রে ওরা বড়দের থেকেও এগিয়ে ছিল। শিশুদের পর্বে প্রথম হয়েছে সমৃদ্ধি কংসবণিক, দ্বিতীয় অঙ্কিতা দাস ও তৃতীয় পরিধি সূত্রধর।
এ দিন অনুষ্ঠানের ফাঁকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন উদ্যোক্তারা। এতে বিভিন্ন আমন্ত্রিত দলের সদস্যরা তাদের অনুষ্ঠান নিয়ে হাজির ছিল। নৃত্যালয়মের প্রায় ৬০ জন শিশুশিল্পী একটি অনবদ্য পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে হাজির হয়। অন্য কয়েকটি দলের মধ্যে ছিল দ্য ফিট ফিমেল ড্যান্স স্কুল, মালুগ্রাম ড্যান্স অ্যাকাডেমি, বর্ণালী তিওয়ারি ও তাঁর দল। প্রত্যেকেই ভাল প্রদর্শন করেছেন।
আমরা এ দিন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেছেন, এমন কয়েকজনকে সংবর্ধনাও জানায়। প্রতিযোগিতা পর্ব শেষ হওয়ার পর মিসেস ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল খেতাব বিজয়ী স্মিতা দেবও মঞ্চে ক্যাটওয়াকে অংশগ্রহণ করেন। শিলচরের মেয়ে স্মিতা এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে তাঁর উচ্ছ্বাস ব্যক্ত করেন।
আমরা আয়োজিত এই শারদ সুন্দরী প্রতিযোগিতা আসলে ছিল বেশ বড় মাপেরই অনুষ্ঠান। কারণ প্রতিযোগিতার শেষে বিজয়ীরা নগদ অর্থ সহ প্রচুর সংখ্যক পুরস্কার পেয়েছেন। বিজয়ী তিনজন ৫ হজার, ৩ হাজার ও ২ হাজার টাকা নগদ পেয়েছেন। গিফট আইটেম ও কূপনের ছিল ছড়াছড়ি।। কিন্তু একটা কথা হল, টাইম ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে পুরোপুরি মাইনাস পয়েন্টে ছিল আমরা। যখন সেরাদের মাথায় মুকুট উঠেছে তখন রাত প্রায় সাড়ে বারোটা। ফলে তাড়াহুড়ো করেই শেষ করতে হয়েছে। অনুষ্ঠানের তালিকায় আইটেম কিছু কম রাখলেই তা সময়ে শেষ হতো। নিশ্চয় আমরার সদস্যরা আগামীতে তা ভেবে দেখবেন।