Barak UpdatesHappeningsBreaking News
সিইউইটি ছাড়াই বরাকের কলেজে ভর্তির দাবিতে সোচ্চার এআইডিএসও
ওয়েটুবরাক, ২৩ মে : ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সিকে দিয়ে সিইউইটি পরীক্ষার মাধ্যমে স্নাতকস্তরে ছাত্র ছাত্রীদের ভর্তির যোগ্যতা যাচাইয়ের পদ্ধতি কেন্দ্র সরকার চালু করার পর থেকে এআইডিএসও সর্বভারতীয় স্তরে এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। বৃহস্পতিবার শিলচরে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এই দাবি করেন এআইডিএসওর রাজ্য সভাপতি প্রোজ্জ্বল কুমার দেব ও সহসভাপতি হিল্লোল ভট্টাচার্য৷ তাঁরা জানান, সিইউইটি পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি ছাত্র ছাত্রীদের অনলাইনে প্রপত্র পূরণের জন্য আধার কার্ডকে বাধ্যতামূলক করে এবং আসামের পরীক্ষার্থীদের শুধু মাত্র ইংরেজি ও অসমিয়া ভাষায় পরীক্ষা দিতে নির্দেশনা জারি করে। এছাড়াও ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে পরীক্ষার ফিজ হিসেবে ১৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত সংগ্রহ করে এবং বরাক উপত্যকার ছাত্র ছাত্রীদের জন্য শুধু কাছাড় জেলায় সেন্টার ধার্য করে৷ এর পরই গত ১৭ মার্চ এআইডিএসও’র কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলা কমিটির পক্ষ থেকে আধারকার্ডহীন ছাত্র ছাত্রীদের পরীক্ষা প্রদানের সুযোগ প্রদান, বরাক উপত্যকার তিন জেলায় সিইউইটির সেন্টার প্রদান, উচ্চ মাধ্যমিকে ছাত্র ছাত্রীরা যে মাধ্যমে পড়াশোনা করেছে সেই ভাষায় তাদের প্রশ্নপত্র তৈরি করা এবং ছাত্রছাত্রীদের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া এই পরীক্ষার কোনও মাশুল সংগ্রহ না করার দাবি জানিয়ে একটি স্মারকপত্র এনটিএ এর চেয়ারম্যান এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর নিকট প্রদান করা হয়। এছাড়াও ২৭ মার্চ করিমগঞ্জ সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে উক্ত দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং ২৮ মার্চ রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থাকে প্রচুর সংখ্যক ইমেইলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়।
তাঁদের কথায়, সেই সময় ছাত্রছাত্রীদের এই সমস্যা সমাধানে অন্য কোনও ছাত্র সংগঠন বা কোনও জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেনি। পরে বরাক উপত্যকায় শুধু কাছাড় জেলায় পরীক্ষাকেন্দ্র করা হলে পুনরায় এআইডিএসও আন্দোলন শুরু করে। করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলার ছাত্রছাত্রীদের কাছাড় জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে সময়মতো পৌঁছানো যে কঠিন তা তখন তুলে ধরা হয়। সবাই তখন শীতঘুমে ছিলেন। ১৫ মে অনুষ্ঠিত পরীক্ষা দিতে আসার পথে পরীক্ষার্থীদের বদরপুর রেলওয়ে ব্রিজে আটকে পড়া এবং সময়মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে অনেকের পৌঁছাতে না পারার সংবাদ প্রকাশিত হলেও এখানকার জনপ্রতিনিধিরা ছিলেন কার্যতঃ নীরব। কিন্তু বরাক উপত্যকার ছাত্রছাত্রীদের বাংলা ও পরিবেশ বিজ্ঞানের পরীক্ষা কেন্দ্র বরাক উপত্যকার বাইরে যথাক্রমে আইজল, শিলং, কোকড়াঝাড়, আগরতলা, যোরহাট, গুয়াহাটি ইত্যাদি স্থানে দেওয়ার এনটিএ এর চরম অবিবেচক কাজের বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভ প্রকাশ হতে শুরু করে তখন রাজ্যের শিক্ষা বিভাগের সচিব ও পরবর্তীতে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী একটি চিঠি এনটিএর চেয়ারম্যানের নিকট পাঠিয়ে বিষয়টি অবিহিত করান এবং বরাক উপত্যকায় সেন্টারে বরাক উপত্যকার ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলেন।
এআইডিএসও কিন্তু বসে থাকেনি, প্রতিদিন ধারাবাহিক ভাবে একের পর এক আন্দোলন চালিয়ে যেতে শুরু করে। আন্দোলনের ফলে যে চাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে তাতে শাসকদলের একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে দেখা করতে বাধ্য হন। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা বাইরে গিয়ে পরীক্ষা দেবে কী না সে ব্যাপারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী কেউ কোনও কথা বলতে পারেন নি। শিলচরের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. তপোধীর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে এই বিষয় সমাধানে সচেষ্ট হন।
এআইডিএসওর নেতাদের অভিযোগ, এই ব্যাপারে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ ছাত্র সংগঠন এবিভিপির কোনও ভূমিকা কারও চোখে পড়েনি। শেষ পর্যন্ত একদিকে ছাত্র ছাত্রীদের সংগঠিত করে এআইডিএসও’র ধারাবাহিক আন্দোলন ও শিলচরের সুশীল সমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের উপস্থিতিতে একটি সভার আয়োজন করে ছাত্র ছাত্রীদের কলেজে ভর্তির জন্য গত মার্চ মাসে প্রদান করা সার্কুলার পরিবর্তন করে ৮০ শতাংশ ছাত্র ছাত্রীদের সিইউইটি পরীক্ষার ফলাফল ছাড়া ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়, তখনই শীতঘুমে থাকা ছাত্র সংগঠনগুলো মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও জনৈক বিধায়ককে ধন্যবাদ দিয়ে তারা নিজেদের প্রশংসা করতে শুরু করে, এটা বড়ই দুর্ভাগ্যের বিষয়।
প্রোজ্জ্বল-হিল্লোলের আক্ষেপ, বরাক উপত্যকার ছাত্রছাত্রীরা যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তার বিরুদ্ধে সমস্ত ছাত্র সংগঠন আন্দোলন গড়ে তুললে বহু আগেই সমস্যা সমাধান হতে পারত। কিন্তু রাজনৈতিক দলের তল্পিবাহক হয়ে নিজেদের আখের গোছানো ছাড়া এসব ছাত্র সংগঠনের ছাত্র স্বার্থে কোনও ভূমিকা নেই। তাঁদের কথায়, এই ঘটনায় বরাক উপত্যকার নির্বাচিত প্রতিনিধি ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীর চরম ব্যর্থতা আবারও প্রকাশ পেল।
এআইডিএসও নেতাদের বক্তব্য, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল ইত্যাদি কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষা আয়োজনের প্রয়োজন থাকলেও বি’এ, বিএসসি, বি’কম এর জন্য সাধারণ কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে সিইউইটি পরীক্ষা আয়োজনের কোনও যুক্তি নেই। বরং এই পরীক্ষা আয়োজনের জন্য ছাত্র ছাত্রীদের যে বাড়তি টাকা ফিজ হিসেবে দিতে হচ্ছে তা তাদের পড়াশোনার খরচ বৃদ্ধি করবে। এই পরীক্ষা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ছাত্র ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষা লাভের পথ আটকে দেওয়া এবং শিক্ষার কেন্দ্রীয়করণ ঘটানো। সিইউইটি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় এআইডিএসও৷
এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে মত বিনিময় করেন করিমগঞ্জ সভাপতি সুজিৎ পাল, কাছাড় জেলা সভাপতি স্বাগতা ভট্টাচার্য, সম্পাদক গৌরচন্দ্র দাস ও রাজ্য কমিটির কার্যবাহী সদস্য পল্লব ভট্টাচার্য৷