Barak UpdatesHappeningsCulture
সম্মিলিত লোকমঞ্চের ধামাইলে সেরার শিরোপা হাইলাকান্দির মিতালীজ গ্রুপ
ওয়ে টু বরাক, ৩১ ডিসেম্বর : শিলচরে বরাক ভিত্তিক সম্মিলিত লোকমঞ্চের ধামাইল প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান দখল করেছে হাইলাকান্দির মিতালীজ গ্রুপ। সেসঙ্গে ধামাইল কন্যার শিরোপাও ছিনিয়ে নিয়েছে এই দলটি। শিলচর শিশু উদ্যানে গত ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত বরাক ভিত্তিক সমবেত ধামাইল নৃত্য ও ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটল রবিবার। লোক সংস্কৃতির অঙ্গ ধামাইল উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে বিগত দুদিন বরাক উপত্যকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোক সংস্কৃতি প্রেমী মানুষ শহরের শিশু উদ্যানে জড়ো হয়েছিলেন। দুই মন্ত্রী কৌশিক রাই ও কৃষ্ণেন্দু পাল, হোজাইর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মানবেন্দ্র দত্ত চৌধুরী, বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী ও কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, কবি সাংবাদিক অতীন দাশ, লোক গবেষক অধ্যাপক ড. অমলেন্দু ভট্টাচার্য, সমাজসেবী স্বর্ণালী চৌধুরী, বাবুল হোড় থেকে শুরু করে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব দুদিনের এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। শিলচরে সরকারিভাবে বৃহৎ আঙ্গিকে ধামাইল উৎসব আয়োজনের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মার সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাসবাণীও শুনিয়েছেন বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী কৌশিক রাই।
উল্লেখ্য, এবারের ধামাইল প্রতিযোগিতায় মোট ২৫টি দল অংশগ্রহণ করে । প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার লাভ করেছে মিতালীজ গ্রুপ হাইলাকান্দি। দ্বিতীয় হয়েছে মা অন্নপূর্ণা ধামাইল সংস্থা দুধপাতিল এবং তৃতীয় স্থান দখল করেছে নন্দিনী গ্রুপ বড়খলা। অনুরূপভাবে ২০২৪ সালের ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার লাভ করেছে মিতালীজ গ্রুপ হাইলাকান্দির অর্পিতা গুপ্ত, দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে মা অন্নপূর্ণা ধামাইল সংস্থার সর্বানী নাথ এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে মিতালীজ গ্রুপ হাইলাকান্দির অর্পিতা দেব।
সমবেত ধামাইল নৃত্যে প্রথম পুরস্কার হিসাবে স্বর্গীয় কৃষ্ণ চন্দ্র দাস স্মৃতি পুরস্কার বাবদ নগদ সাত হাজার টাকা, স্মারক ও শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়। স্মারক ও অর্থ স্পন্সর করেন সংস্থার সদস্যা স্মৃতি দাস (পৌত্রী) । এ দিন আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে তিনি নিজেও শিল্পীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। দ্বিতীয় পুরস্কার হিসাবে স্বর্গীয় মন্মথ কুমার দাস স্মৃতি পুরস্কার বাবদ নগদ পাঁচ হাজার টাকা, স্মারক ও শংসাপত্র তুলে দেন মহোজিৎ দাস (পুত্র), পুরস্কার তুলে দেন মহোজিৎ দাসের ভ্রাতা ওঙ্কারজিৎ দাস। তৃতীয় পুরস্কার রতীশ চন্দ্র ভট্টাচার্য স্মৃতি স্মারক পুরস্কার বাবদ নগদ তিন হাজার টাকা, স্মারক ও শংসাপত্র প্রদান করা হয়। পুরস্কার স্মারক ও অর্থ স্পন্সর করেন তাঁর পুত্র রজত ভট্টাচার্য, শিল্পীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন রজত ভট্টাচার্য ও মহাশ্বেতা ভট্টাচার্য।
এদিকে ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার জগৎ মোহন সিংহ স্মৃতি স্মারক পুরস্কার হিসাবে স্মারক ও নগদ পাঁচ হাজার টাকা অর্থরাশি স্পন্সর করেন গৌতম সিনহা (পুত্র), শিল্পীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গৌতম সিনহা। ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় পুরস্কার সরোজ কুমার ভট্টাচার্য স্মৃতি স্মারক ও নগদ তিন হাজার টাকা অর্থরাশি স্পন্সর করেন সুধেন্দু ভট্টাচার্য (পুত্র) এবং তিনি নিজ হাতে শিল্পীদের পুরস্কার তুলে দেন। এবারের ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতার তৃতীয় পুরস্কার বিহারিনী নাথ স্মৃতি স্মারক ও নগদ দুই হাজার টাকা অর্থরাশি স্পন্সর করেন বিহারিনী নাথের পুত্র দীপক নাথ। শিল্পীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন দীপক নাথ ও মঙ্গলা নাথ (পুত্রবধু) । বিজয়ী দলগুলির হাতে পুরস্কার তুলে দেন সম্মিলিত লোকমঞ্চের সভাপতি ড. অনুপ কুমার রায়, আমন্ত্রিত অতিথি শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি বাবুল হোড়, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অতনু ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তথা ড্রিম্স এর সভাপতি গৌতম গুপ্ত, বরাক উপত্যকা সাংবাদিক সংস্থার চেয়ারম্যান হারাণ দে, বিশিষ্ট সমাজসেবী সীমান্ত ভট্টাচার্য প্রমুখ । ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর দাস। উল্লেখ্য দুদিনব্যাপী চলা ধামাইল নৃত্য ও ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতার বিচারক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ধর্মনগরের দৈপায়ন ভট্টাচার্য ও শিলচরের দেবলীনা চৌধুরী। গোটা অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বিপ্লব বিশ্বাস ।
এ দিকে ধামাইল উৎসবকে সামনে রেখে সন্ধ্যায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বরাক উপত্যকার বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী মঙ্গলা নাথ, তন্দ্রা রায় সহ উদীয়মান শিল্পী মনিমিতা গোস্বামী, জলি শুক্লবৈদ্য, রাজশ্রী নাথ, রুদ্রানী দাস, পূজা দাস সংগীত পরিবেশন করেন। একক লোকনৃত্য পরিবেশন করেন অপি নাথ। এদিনের অনুষ্ঠানে বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল স্বামী বিরজানন্দ বিদ্যানিকেতন ধামাইল সংস্থা নিলামবাজারের ছেলেদের পরিবেশিত সমবেত ধামাইল নৃত্য। সংস্থার তরফে তাদের আর্থিক পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়।