Barak Updates
মহালয়া যে, সদরঘাটে পৌছুনো চাই !
৮ অক্টোবরঃ বেলুন, শোভাযাত্রা, নাচগান, সেলফি আর অসংখ্য মানুষের ভিড়————এইভাবেই মহালয়ার ভোরে দেবীকে মর্ত্যে আহ্বান জানাল শিলচর।
সব জায়গাতেই এক চিত্র। কাকভোরে সেজেগুজে বেরিয়ে পড়া। উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলা। শিলচরে যেমন সবাই চান সদরঘাট সেতুতে পৌঁছুতে। হোক না ভাঙাচোরা, বিপজ্জনক ছাপ মারা। তাতেই চড়া চাই। অন্তত একবার। মহালয়ার সকাল বলে কথা। পূর্বপুরুষের উদ্দেশে তর্পণের পাশাপাশি মহালয়া যে উতসবেরও আবাহন। শিশু, কিশোর, যুবারা বেশি বেরোলেও বাদ যান না প্রৌঢ়রাও। শিশু কোলে মাঝবয়সী মাকে যেমন ভিড়ে দেখা যায়, নাতির হাত ধরে দাদু-দিদাদেরও দেখা মেলে। রাস্তার ধারের বাড়ির মানুষ গেটে দাঁড়িয়ে, দোতলার বারান্দায় বসে মহালয়া উপভোগ করেন।
ঘণ্টা তিনেকের সে কী উন্মাদনা! বেলুনে সেজে উঠেছিল গোটা শহর। হাতে বেলুন, বাইকে বেলুন। সঙ্গে বাইকের দাপাদাপি। বেরিয়েছে প্রচুর গাড়িও। অনেকের মতে, এ বার বাইকের দাপট তুলনামূলক কমেছে। কান ঝালাপালা করা হর্নের আওয়াজ ছিল না বললেই চলে। অন্য বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে পায়ে চলা মানুষের সংখ্যা। বেড়েছে নিরাপত্তা রক্ষীও। এনআরসি-র দৌলতে অভাব না থাকায় খাকি উর্দিধারীরা ছড়িয়ে ছিলেন শহরজুড়ে। মহালয়ার প্রাতর্ভ্রমণ ঘিরে কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই। বাঙালি-অবাঙালি হিন্দুদের সঙ্গে কিছু মুসলমান যুবাকেও দেখা গিয়েছে উতসবের আনন্দ ভাগ করে নিতে।
বজরং দল রাঙ্গিরখাড়িতে খিচুড়ি বিতরণ করেছে। ক্লাব রোডে সুজির হালুয়া খাইয়েছে ইয়ং ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন। সদরঘাটে বহু সংস্থা জল, সরবত, চা-বিস্কুট বিলিয়েছে বিনা মূল্যে। জেলা প্রশাসন পুজো কমিটিও জেলাশাসকের অফিসের সামনে চা খাওয়ায়। তাই বলে কেনাকাটা বন্ধ হয়ে যায়নি। খাবারের প্রতিটি দোকানে ভিড় ছিল প্রায় উপচেপড়া।
মহালয়ার জনসমাগমে শোভাযাত্রা বেরিয়েছে বেশ কয়েকটি। চণ্ডীচরণ রোড পূজা কমিটি ভোর থেকে বাদ্য বাজায়। অম্বিকাপট্টি-হসপিটাল রোড পুজোমণ্ডপে সঙ্গীতানুষ্ঠান করে দলছুট। বিক্রমজিত বাউলিয়ার দুর্গাবন্দনা দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। চলে ঝুমুর, ধামাইলও। নাজিরপট্টিতে লাগাতার নেচে চলেন রূপেন্দু দাস। হিন্দু সংহতি বড়সড় মিছিল বের করে। শোভাযাত্রার মাধ্যমে নিজেদের আত্মপ্রকাশের জানান দেয় নর্থইস্ট কনজ্যুমার সেলস অ্যাসোসিয়েশন। দেশবন্ধু রোড সর্বজনীন পূজা কমিটির এ বার ২৫ বছরের পূজা। শ্রীপল্লী সর্বজনীনের ৫০ বছর। উভয় সংস্থা শোভাযাত্রা বের করে। শ্রীপল্লীর দুর্গা-ট্যাবলো নজর কেড়েছে। দুর্গার মানবপ্রতিমায় ট্যাবলো সাজায় এনএস অ্যাভেন্যুর দ্য সেন্ট্রাল দুর্গাপূজা কমিটিও। জিম কর্নার-এর সভ্যরা লাল গেঞ্জি পরে বাইক-মিছিল করেন। কালো গেঞ্জি পরে শহরে হেঁটেছেন কোর ফিটনেস-এর সদস্যবৃন্দ। আনন্দ এনজিও দুস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করে। জেলাশাসক ডা. এস লক্ষ্মণন এই কর্মসূচির সূচনা করেন। কিন্তু তাঁর বিশাল গাড়ি ভিড়ের মধ্যে বেশকিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকায় ট্রাফিক পুলিশদের যান নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খেতে হয়। তিনি অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যে বেরিয়ে পড়েন। পরে সেখানে গান-বাজনাও হয়।
এতসব আনন্দানুষ্ঠানের মধ্যে মুশকিলে পড়তে হয় রোগীদের। বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়েও এগুনোর জায়গা পাচ্ছিল না। আর ভুগিয়েছে নোংরা আবর্জনা। বহু জায়গায় নাকে রুমাল দিয়েও নিস্তার নেই।
তবে পূর্বপুরুষদের স্মরণে যাঁরা বরাক নদীর নানা ঘাটে উপস্থিত হয়েছেন, কোনওকিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি তাঁদের কাছে। কোলাহল তাঁদের ছুঁতে পারেনি। মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে তর্পণ করেছেন শ্রদ্ধাভরে।