Barak UpdatesHappeningsBreaking News
সংক্রমিত হননি গ্রামের কেউ, তবু করোনাতেই বাধা দুর্গাপূজা আয়োজনে
ওয়েটুবরাক, ১২ অক্টোবর : কাঁটাতারের বেড়া তাদের মূল ভূখণ্ড থেকে পৃথক করে দিলেও দুর্গোৎসবের আনন্দে ভাটা পড়েনি কখনও৷ মহালয়ার আগেই করিমগঞ্জ জেলার গোবিন্দপুরে শুরু হয়ে যেত মণ্ডপ বাঁধা, চাঁদা তোলা৷ দুই বছর ধরে ছবিটা বদলে গিয়েছে৷ পুজো আয়োজনের বদলে সবাই গেটের পাশে ঘোরাফেরা করতে থাকেন, কেউ ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এলেন কিনা! কোনও সংস্থা নতুন বা পুরনো কাপড় দিতে এসে গেট থেকে ফিরে যায়নি তো!
কাঁটাতার যা করতে পারেনি, তা-ই করে দেখাল করোনা ৷ গত বছর অতিমারির দরুন আন্তর্জাতিক সীমান্ত পুরো সিল করা হয়৷ কাঁটাতার ঘেরা গেটগুলি সময় ধরে খোলা-লাগানো বন্ধ হয়ে যায়৷ সরকারের এমন সিদ্ধান্তে গোবিন্দপুরের আড়াই শতাধিক মানুষ অর্ধাহারে দিন কাটান৷
সত্তর পেরনো শশীন্দ্র নমঃশূদ্র বললেন, “ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে না এলে অনাহারে কত জন যে মারা যেত!” চম্পারানি নমঃশূদ্রের কথায়, ওই অবস্থায় দুর্গাপূজার কথা ভাববারই সুযোগ ছিল না৷ এ বার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে৷ সময় ধরে গেট খোলা হয়৷ কিন্তু বছরভর উপার্জনশূন্য থাকাটা কতদিনে পুষিয়ে ওঠা যাবে হিসেব কষতে পারছেন না সুনীল নমঃশূদ্র, বিপুল নমঃশূদ্ররা ৷ তাই এ বারও দুর্গাপূজা আয়োজনের কথা পাড়েননি কেউ৷ সে জন্য মনের যন্ত্রণা কম নয় তাঁদের৷ সুনীল-বিপুল বলেন, কাঁটাতারের বেড়া বসতেই অন্যত্র পূজা দেখা বন্ধ হয়ে যায়৷ তাই ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে পাড়াতেই পূজা করা হচ্ছিল৷ দুই বছর ধরে তাও বন্ধ৷
গেটে প্রহরারত বিএসএফ জওয়ানরা জানান, সব মন্দের মধ্যেও একটা ভাল দিক রয়েছে৷ গোবিন্দপুরে ৪০ পরিবার হিন্দু, ২ পরিবার মুসলমান৷ গত দেড় বছরে কারও শরীরে করোনা সংক্রমণ ঘটেনি৷ প্রতি মাসে স্বাস্থ্যকর্মীদের এনে সবার কোভিড টেস্ট করানো হয় এরই মধ্যে ১৮-ঊর্ধ্ব সকলের দুই ডোজ করোনা প্রতিষেধক নেওয়া হয়ে গিয়েছে৷ কাঠমিস্ত্রি বিপুল নমঃশূদ্র, দিনমজুর নিখিল নমঃশূদ্র শোনালেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামী বছর কাঁটাতারের ও পারে দুর্গাপূজা হবে৷ পাশে দাঁড়িয়ে মইনুল হকের স্বগতোক্তি, “কর না আয়োজন, আমরাও আগের মতোই যেটুকু পারি, সাহায্য করব৷”