Barak UpdatesHappeningsBreaking News
শিলচর বঙ্গভবনে ছিয়াশির শহিদ পরিবারকে সংবর্ধনা
ওয়েটুবরাক, ২১ জুলাই : ক্ষমতার অলিন্দ থেকে এ রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী বাঙালির ভাষার অধিকার হরণের চেষ্টায় যে চক্রান্ত জাল বোনা হয়েছিল তা আজ নাগরিকত্ব এবং অর্থনৈতিক অধিকার থেকে জাতিকে চিরদিনের জন্য বঞ্চিত করার প্রণালীবদ্ধ প্রয়াসে রূপান্তরিত হয়েছে। রবিবার শিলচর বঙ্গভবনে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের শিলচর শহর আঞ্চলিক সমিতি আয়োজিত ছিয়াশির ভাষা আন্দোলনের শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠানে এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করা হয়। অনুষ্ঠান থেকে জাতির এই বিপন্ন সময়ে সব গণ্ডির উর্ধ্বে উঠে বাঙালির আত্মপরিচয় ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার রক্ষায় সরব হতে জনপ্রতিনিধি সহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এদিন শহিদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরে শিলচর শহর আঞ্চলিক সমিতির সহ-সভাপতি বাপি রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কার্যক্রমে শহিদ জগন্ময় দেবের পরিবারকে সংবর্ধনা প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরিবারের পক্ষে সংবর্ধনা গ্রহণ করেন জগন্ময় দেবের সহোদর জয়ন্ত দেব ও ভ্রাতুষ্পুত্রী ত্রিপর্ণা দেব।
আলোচনা পর্বের সূচনা করে সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সমিতির কোষাধ্যক্ষ আশিস চৌধুরী ৮৬র ভাষা আন্দোলনের সেই রক্তমাখা সন্ত্রাসের ভয়ংকর দিনগুলোর কথা সবিস্তারে তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, ৮৬ সালের ২১ জুলাই এবং তার পরবর্তী দিনগুলোতে করিমগঞ্জ শহরে যেভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলেছিল সেটা ব্রিটিশ আমলকেও হার মানিয়েছিল। তিনি বলেন, শহিদ দিবস উদযাপন কার্যক্রমে ভাষা সহ বাঙালির সার্বিক আত্মপরিচয় রক্ষায় সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য নতুনভাবে অঙ্গীকার গ্রহণ সময়ের দাবি।
তিনি বলেন , প্রতিনিয়ত এ রাজ্যে বাঙালির অধিকার খর্ব করার জন্য যে সব চেষ্টা চলছে তা দেখেও একাংশের নির্বিকার মনোভাব খুবই বেদনাদায়ক । এ দিনের আলোচনার আরেক নির্ধারিত বক্তা প্রবীণ লেখক ও গবেষক আবিদ রাজা মজুমদার বলেন, ৬১ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় কিংবা পরবর্তী পর্যায়ে শাসক এবং বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধি, নেতৃত্ব এবং তাদের অনুসারীরা সব ধরনের দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে যেভাবে একমঞ্চে সামিল হয়েছিলেন, পরিতাপের বিষয় আজ ক্ষমতার কুটিল চক্রান্তে সেই চিত্র বদলে গেছে। ভাষার অধিকার থেকে এখন বাঙালিকে অর্থনৈতিকভাবেও পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে৷ কিন্তু আমাদের নেতৃত্ব নির্বিকার ভূমিকায়।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বরাকবঙ্গের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত বরাকের বহমান ভাষা আন্দোলনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ক্ষমতায় মুখ বদল হলেও ভাষিক আগ্রাসন, নাগরিকত্ব ও অর্থনৈতিক অধিকার হরনের অবিরত প্রয়াস নয়া নয়া মাত্রায় পরিব্যপ্ত হচ্ছে। রাজ্যের উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তিকে তুষ্ট করতে দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী বাঙালিকে অধিকারহারা জাতিতে রূপান্তরের প্রণালীবদ্ধ চেষ্টায় বিপন্নতা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে । ৮৬ সালে স্বাধীন ভারতের একজন মুখ্যমন্ত্রী আবর্ত ভবনে অবস্থান করে করিমগঞ্জের ভাষা সংগ্রামীদের কন্ঠরোধ করতে গুলি চালানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সেই মানসিকতা আজ কালের যাত্রায় নবায়িত হচ্ছে । তিনি বলেন ,বরাক উপত্যকার নেতৃত্ব রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে যদি ভাষা, নাগরিকত্ব এবং নিযুক্তি সহ সব ধরনের অর্থনৈতিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে মুখ না খোলেন তাহলে ইতিহাসের পাতায় তা লিপিবদ্ধ হবে। কেউ স্থায়ী নন, ইতিহাস এই শিক্ষাই দেয়। সাধারণ সম্পাদক দত্ত এই উপত্যকার জনগণকে বাস্তব স্থিতি অনুধাবন করার আহ্বান রেখে বলেন, নির্বিকার থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একদিন তাদের দিকেও আঙ্গুল তুলবে।
এদিন আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শহিদ জগন্ময়ের সহোদর জয়ন্ত দেব , সব্যসাচী পুরকায়স্থ, উত্তম কুমার সাহা, ড. জয়ন্ত দেবরায়, অনিল পাল, ড. শুভদীপ রায়চৌধুরী, ড. নবেন্দু বণিক প্রমুখ । সঙ্গীত পরিবেশন করেন তাপসী দত্ত, আবৃত্তি করে শোনান রণধীর চক্রবর্তী৷ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আঞ্চলিক সম্পাদক সুশান্ত সেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কোষাধ্যক্ষ সুপ্রদীপ দত্তরায়।