Barak UpdatesHappeningsAnalyticsBreaking News
শিলচরে এখন সবই নেতাসর্বস্ব, প্রার্থীরা নিমিত্তমাত্র
ওয়েটুবরাক, ২৪ এপ্রিলঃ শিলচর লোকসভা আসনে পাঁচবার বিজয়ী হয়েছেন সন্তোষমোহন দেব। তিনবার কবীন্দ্র পুরকায়স্থ। অধিকাংশ নির্বাচনে লড়াই হয়েছে এই দুই নেতার মধ্যে। প্রচারে গুরুত্ব পেত বিগত দিনে এলাকার মানুষের জন্য কী করতে পেরেছেন তাঁরা, আগামী দিনে কী করতে চান। কিন্তু এখন সবই নেতাসর্বস্ব, প্রার্থীরা নিমিত্তমাত্র। শাসক দল বিজেপির টিকিটে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন রাজ্যের মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য। পূর্ত, মীন, আবগারি, পরিবেশ, বন, পরিবহন—গত আট বছরে বিভিন্ন দফতর সামলেছেন তিনি। কিন্তু ভোটের ময়দানে মন্ত্রী হিসাবে তাঁর কোনও কৃতিত্বের দাবি নেই, না পারার জন্য কোনও কৈফিয়তও নেই। সকাল-সন্ধ্যা, শহরে-গ্রামে ভোট চেয়েছেন মোদীর নামে। গত দশ বছরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদী কী কী করতে পেরেছেন, তাঁর দীর্ঘ তালিকা পেশ করেই মোদীর জন্য এ বার পদ্মফুল চিহ্নে ভোট দেওয়ার আর্জি জানান।
তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী রাধেশ্যাম বিশ্বাসও রাজ্যসভার সদস্যা সুস্মিতা দেবকে ছাড়া এক পা নড়েন না। ২০১৪ সালে পাশের করিমগঞ্জ আসন থেকে ইউডিএফ টিকিটে সাংসদ হয়েছিলেন। কিন্তু ভোট চাইতে গিয়ে তাঁর পাঁচ বছরের সাংসদ থাকাকালে বরাক উপত্যকার সমস্যাগুলি নিয়ে কী করলেন, কী বললেন, এর স্পষ্ট কোনও উল্লেখ নেই। এ বার সাংসদ হলে কী করবেন, তাও সুস্মিতাকে ছাড়তে চান না। বললেন, দিল্লি গিয়ে লোকসভায় আমি ও রাজ্যসভায় সুস্মিতা একযোগে আওয়াজ তুলব। শনিবার মুখ্যনন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কাছাড় জেলার বড়খলায় আয়োজিত জনসভায় বললেন, তৃণমূল নাকি এখানে প্রার্থী দিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসার পর তা জানলাম। কথাটা মন্দ বলেননি তিনি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শিলচরে এসে সভা করার পরই সাধারণ ভোটারদের কাছে প্রার্থিত্বের বার্তাটা পৌঁছেছে।
অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে শিলচরে আটজন প্রার্থী। প্রতিদ্বন্ধিতা হবে মূলত তিন পক্ষে। পরিমল-রাধেশ্যাম ছাড়াও লড়াইয়ে রয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী সূর্যকান্ত সরকার। মনোনয়ন পত্র জমার দিনে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা পরিমল শুক্লবৈদ্যর পাশে ছিলেন। সুস্মিতাই নেতৃত্ব দিয়ে রাধেশ্যামকে এগিয়ে দিয়েছেন। ছিলেন দুই দলেরই প্রদেশ সভাপতিরা। কিন্তু সূর্যকান্ত না পেয়েছেন হিমন্ত-সুস্মিতার মতো কোনও নেতা, না পেয়েছেন দলের প্রদেশ সভাপতিকে। বিজেপি প্রার্থী যেমন সবকিছু মোদীর ওপর ছেড়ে ভোট বৈতরণী পার হওয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী, সূর্যকান্তের সামনে এমন কোনও মুখও নেই। মল্লিকার্জুন খাড়গেকে অধিকাংশ ভোটার চেনেন না, অনেকে নামও শোনেননি। রাহুল গান্ধীর কথা বলবেন, সে উপায়ও নেই। রাহুল নিজেই বলেছেন, ইন্ডিয়া জোটের নেতা বাছাই হবে ভোটের পর। ফলে প্রধানমন্ত্রী কে হচ্ছেন, এরও কোনও জবাব নেই কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে। তবু শেষমুহূর্তে গৌরব গগৈ এসে রোডশো করে দলীয় কর্মীদের অক্সিজেন জুগিয়ে গেলেন।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি অভিজিত পাল অবশ্য বলেন, মানুষের সমস্যার সমাধান না করতে পারলে বড় বড় নামে কী আসে-যায়।
কিন্তু নিজেদের সমস্যা নিয়ে আদৌ কি ভোটের সময়ে মানুষ ভাবেন? কিছুদিন আগেই ডিলিমিটেশনের নামে বরাক উপত্যকা থেকে দুটো বিধানসভা আসন কমিয়ে দেওয়া হল। গর্ব করেই হিমন্ত বিশ্ব ডিলিমিটেশনের কৃতিত্ব দাবি করেন। কিন্তু কেন বরাকের আসন দুটো কমালেন, কেউ জানতে চান না।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আইনে পরিণত হল বটে, কিন্তু এর বিধি প্রণয়নে সময় লাগল চার বছর। এত সময় ধরে তৈরি বিধির ফল কী মিলল। অসমে গত একমাসে মাত্র একজন উদ্বাস্তু নাগরিকত্বের আবেদন জানালেন। তাহলে আর সিএএ এনেছি বলে এত কীসের কৃতিত্ব? না, এমন প্রশ্ন কেউ জিজ্ঞেস করেন না।
এমন ভাবনায় এনআরসির কাজ শুরু হল যে, অসমের সব বঙ্গভাষীই যেন বাংলাদেশি। লিগ্যাসি ডেটা, ফ্যামিলি ট্রি কত ভাবে যে আটকানোর চেষ্টা। এখন সব ফেলে রাখা। হিমন্ত সরকারের দাবি, আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশিরা রয়ে গিয়েছেন প্রতীক হাজেলার তালিকায়। তবে বাংলাদেশিদের কাছে ভোটভিক্ষা কেন, এমন প্রশ্ন শোনাই গেল না।
এনআরসির প্রথম তালিকা প্রকাশের পর একে অসম্পূর্ণ বলে বারবার কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছেন। এরপরও ওই তালিকায় যাদের নাম নেই এবং তখনও যাদের আধার হয়নি, তাদের সকলের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করে আটকে রাখা হয়েছে। পরবর্তী তালিকায় তাদের নাম উঠলেও বায়োমেট্রিক তথ্য আটকে রাখার দরুন লক্ষ লক্ষ মানুষ আধারবঞ্চিত। এর দরুন তাঁরা সমস্ত ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ নিয়ে তেমন আওয়াজ শোনা যায় না।
কেন কথা বলেন না মানুষ? ভয়ে না আশ্বস্ত হয়ে? ১০৪ বছরের চন্দ্রধর দাস মৃত্যুর কিছুদিন আগেও ভারতীয় প্রমাণে ট্রাইবুনালের বারান্দায় শুয়ে শুয়ে বলছিলেন, নরেন্দ্র মোদী এর একটা বিহিত করবেনই। শেষপর্যন্ত সন্দেহভাজন নাগরিক হিসেবেই প্রয়াত হয়েছেন চন্দ্রধর দাস। এর পরও চন্দ্রধরের উত্তর প্রজন্মের কাছে কতটা ভরসার পাত্র হয়ে উঠতে পেরেছে কংগ্রেস বা তৃণমূল? নাকি বিনা পয়সার চাল, অরুণোদয় আর আয়ুষ্মান কার্ডের ‘মোদী-গ্যারান্টি’র সামনে দাঁড়াতেই পারছেন না তারা ? ২৬ এপ্রিল কিছুটা আঁচ মিললেও, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ৪ জুন পর্যন্ত।