Barak UpdatesHappeningsBreaking News
শিক্ষাবৈঠকঃ বাঙালিকে উপেক্ষা করার প্রবণতা এখন অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে, খেদ বরাকবঙ্গের
ওয়েটুবরাক, ২ সেপ্টেম্বর : রাজ্যে শিক্ষা, সংস্কৃতি, নিযুক্তি এবং সামাজিক ও আর্থিক ক্ষেত্রে বাঙালি জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পিতভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রবাদী ভাবনায় এই জনগোষ্ঠীর অবদানের কথা ইতিহাস-স্বীকৃত হলেও আজকে এ রাজ্যে তারা নিদারুণভাবে বঞ্চিত ও অবহেলিত। বুধবার এভাবেই ক্ষোভ ব্যক্ত করেছে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। তাদের অভিযোগ, রাজ্যে শিক্ষার ভবিষ্যত বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য সোমবার সরকারি তরফে ৩৪টি জনগোষ্ঠীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বৈঠক করা হলেও ওখানে কোনও বাঙালি সংগঠনকে ডাকা হয়নি। উপেক্ষিত হিন্দিভাষীরাও। এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে গোটা বরাক উপত্যকাকে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পরিসরে এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত, পক্ষপাতদুষ্ট ও সমন্বয় ভাবনার পরিপন্থী।
বিষয়টি নিয়ে বরাকবঙ্গের মনোভাব জানিয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত বলেন, সরকার কাদের নিয়ে বৈঠক করবেন, এটা একান্তভাবেই সরকারি এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়। এ নিয়ে কিছু বলার ছিল না। কিন্তু যখন দেখা গেল এক এক করে খোঁজে ৩৪ টি জনগোষ্ঠীর সংগঠনকে সরকারিভাবে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হল তখন রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী বাঙালি প্রত্যাশা করতেই পারে তাদেরও বৈঠকে ডাকা উচিত ছিল। শিক্ষার ভবিষ্যত বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় রাজ্যের মোট জনসংখ্যার তিরিশ শতাংশ বাঙালি এবং বরাক উপত্যকাকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে কোন বার্তা দেওয়া হলো সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এটাই প্রথম নয়, এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত সরকারি বৈঠক আয়োজন করার সময়ও অনুরূপ সরকারি মনোভাব দেখা গেছে। সবাইকে ডাকা হলেও অনাহূত ছিল বাঙালি ও বরাক উপত্যকা । হিন্দিভাষীদের প্রতিও একই আচরণ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে দত্ত বলেছেন, শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়েই যখন কথা হবে তখন এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা বিভিন্ন ভাষাভাষী ছাত্র ছাত্রীদের সর্বভারতীয় ছাত্র সংগঠন এবিভিপি, এনএসইউআই, এসএফআই, ডিএসও সকলের মতামত শোনা দরকার ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রবাদী ভাবধারার সরকারের শাসনে সর্বভারতীয় ছাত্র সংগঠনগুলোকে আমন্ত্রণ না জানানোর ঘটনা বাস্তবিকই বিষ্ময়কর। শুধু জনগোষ্ঠীগত সংগঠন শিক্ষা বিষয়ে মতামত দেওয়ার একমাত্র অধিকারী হতে পারে না।
শিক্ষা সংক্রান্ত বৈঠক থেকে শুরু করে কর্পাস ফান্ডের অর্থ মঞ্জুরি, সরকারি নিযুক্তি প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাঙালিকে উপেক্ষা করার প্রবণতা এখন প্রায় অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে বলে খেদ ব্যক্ত করে বরাকবঙ্গ। সাধারণ সম্পাদক দত্ত বলেছেন, এ নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কোনও হেলদোল দেখা যাচ্ছে না। কর্পাস ফান্ড থেকে রাজ্য সরকার তেইশটি জনগোষ্ঠীকে তাদের ভাষা-সংষ্কৃতির বিকাশের জন্য দশ লক্ষ থেকে শুরু করে তিন কোটি পর্যন্ত মঞ্জুরি দিয়েছে। এখানে নব্বই লক্ষের জনগোষ্ঠী বাঙালিকে বিবেচনার পর্যায়েই রাখা হয়নি। হিন্দিভাষীদের ক্ষেত্রেও একই মনোভাব দেখা গেছে। বিধানসভায় বলা হয়েছিল , বরাকবঙ্গ আবেদন করলে তা দেখা হবে। কিন্তু আবেদন করার পরও সংস্থা কিছুই পায়নি। উল্টো সংস্থাকে এতদিন সৃজনশীল কাজের জন্য যেখানে বছরে চার লক্ষ করে দেওয়া হতো এ বছর তা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত সংস্থা পেয়েছে দেড় লক্ষ টাকা।
সাধারণ সম্পাদক দত্ত বলেছেন, রাজ্যের সব ভাষাগোষ্ঠীর সমন্বয়েই এক সমৃদ্ধ অসম গড়ে উঠতে পারে। এ জন্য পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সমমর্যাদা ও সহনশীলতার আবহ গড়ে তোলা দরকার। এক বিরাট সংখ্যক মানুষকে দূরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চললে সমৃদ্ধির প্রয়াস সাবলীল ছন্দে এগুতে পারবে না। অসমিয়া সহ রাজ্যের ছোট-বড় সব ভাষার প্রতিই বাঙালি ও বরাকবঙ্গ শ্রদ্ধাশীল এ কথা উল্লেখ করে দত্ত বলেছেন, ভাষা কখনই বিরোধের হাতিহার হতে পারে না । আন্তরিকভাবে ভাষা ও সাহিত্যচর্চা মনকে পরিশীলিত, সংযমী ও সহনশীল করে, বিদ্বেষ শেখায় না।