Barak UpdatesHappeningsBreaking News

লক্ষণ দাসকে গান্ধী শান্তি পুরস্কার, করতালিতে অভিবাদন শিলচরবাসীর

ওয়েটুবরাক, ২ অক্টোবর : গান্ধীভবনের প্রতিটি আসনে দর্শক-শ্রোতা৷ বিশিষ্টজনদের কেউ এলে আয়োজকরা হিমশিম খাচ্ছেন, কাকে তুলে তাঁকে বসাবেন৷ কোনও বিশেষ পুরস্কার বা সম্মাননা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে শিলচরে এমন সমাগম কমই হয়৷ তাও আবার উপস্থিতদের অধিকাংশই বোদ্ধাজন৷

অনুষ্ঠানের মূলপর্বে যখন কুমার কান্তি দাস (ওরফে লক্ষণ দাস)-কে শিলচর গান্ধী শান্তি প্রতিষ্ঠানের তরফে মহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরস্কার হিসাবে শাল ও উত্তরীয় পরিয়ে অভিজ্ঞান পত্র তুলে দেওয়া হচ্ছিল, উপস্থিত সবাই তখন আনন্দে উদ্বেলিত৷ তুমুল করতালিতে তাঁকে অভিবাদন জানান, অভিনন্দিত করেন৷

ডা. কুমারকান্তি দাস বলেন, সুন্দরীমোহন সেবাসদন তথা কল্যাণী হাসপাতালের প্রত্যেকে তাঁকে সেবাকার্যে সহায়তা করে চলেছেন৷ তাই তাঁদের সকলে এই পুরস্কারের অংশীদার৷

গান্ধীজয়ন্তী উপলক্ষে গান্ধীবাগে মহাত্মা গান্ধীর প্রতিমূর্তির সামনে চরকা শোভিত তেরঙা পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে এ দিনের কার্যসূচির সূচনা করেন  শিলচর গান্ধী শান্তি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি তথা শিলচরের প্রাক্তন পুরপ্রধান শান্তনু দাস৷ গান্ধীজির মূর্তিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ প্রদানের পর গান্ধীভবনে অনুষ্ঠিত হয় সর্বধর্মপ্রার্থনা সভা, ভজন, সঙ্গীত৷ মঞ্চে শান্তনু দাস, লক্ষণ দাস ছাড়াও ছিলেন শিলচর রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রমের সচিব স্বামী গণধীশানন্দ মহারাজ, পদ্মশ্রী-ম্যাগসেসেতে ভূষিত ডা. রবি কান্নান এবং শিলচর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডা. দেবীদাস দত্ত ৷

স্বাগত ভাষণে শিলচর গান্ধী শান্তি প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক অশোক দেব বলেন, কথায় আছে, ভগবানের পরেই ডাক্তারের স্থান৷ কিন্তু কুমার কান্তি দাস বা লক্ষণ দাসকে তাঁর রোগীরা ভগবানের পরে নয়, ভগবান বলেই ডাকেন৷ ডা. রবি কান্নান জানান, তিনি শিলচরে আসার শুরুর দিকে এক রোগী বললেন, তিনি ভগবান দাসকে দেখিয়েছেন৷ কিন্তু কান্নান তখন ভগবান দাসকে চিনতে পারেননি৷ খোঁজ করে পরে ডাক্তারের ভগবান হয়ে ওঠার কাহিনি জানতে পারেন৷ তাঁর কথায়, “মানুষ আমাকে প্রশ্ন করেন, চেন্নাই থেকে শিলচরের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় কেন এলেন৷ কিন্তু লক্ষণ দাস আমেরিকার মতো শহরে ডাক্তারি করছিলেন৷ সেখান থেকে শিলচরে চলে এসেছেন৷ তাঁর ত্যাগের কাছে আমার চেন্নাই ছেড়ে আসাটা অতি নগণ্য৷”

ডা. দেবীদাস দত্তও লক্ষণ দাসের ত্যাগীজীবনের কথা উল্লেখ করেন৷ বলেন, “আমেরিকার বিরহামটনে ডা. দাস চিকিৎসা করতেন৷ আমি গিয়েছি সেখানে, ছবির মতো শহর৷ সেখান থেকে শ্রীকোণায় হাসপাতালের এককোঠায় দিন কাটানো এবং হাসপাতাল থেকে একটি টাকা বেতন না নেওয়া বিরল ঘটনাই বটে৷” তিনি জানান, লক্ষণ দাসের ঠাকুরদা রায়বাহাদুর গঙ্গেশচন্দ্র দাস এবং পিতা গোপেশচন্দ্র দাসও ছিলেন জনপ্রিয় চিকিৎসক৷

স্বামী গণধীশানন্দ মহারাজের প্রাঞ্জল বক্তব্য, এমন যাঁরা সেবাব্রতী, তাঁদের গেরুয়া না পরলেও চলে, মন্দিরে না গেলেও হয়৷

অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন কল্যাণী দাম ও সহশিল্পীরা৷ কল্যাণী দাম ডা. লক্ষণ দাসের ওপর সুমঙ্গল দাসের লেখা একটি গান নিজের সুরে গেয়ে শোনান৷ কস্তুরি হোমচৌধুরীর লেখা কবিতা পাঠ করেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মনোজ দেব৷ ডা. দাসের পরিচিতি পাঠ করে শোনান নীহাররঞ্জন পাল এবং শতরূপা দাস৷ অভিজ্ঞান পত্র পাঠ করেন শেখর পালচৌধুরী৷

শান্তনু দাস জানান, এটি তাঁদের প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় মহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরস্কার৷ প্রথমবার পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল শিক্ষাব্রতী সমরেন্দ্র দাসকে৷

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker