Barak UpdatesHappeningsBreaking News

রোগীকে ফিরিয়ে দিল, তদন্ত দাবি যুব মোর্চার, অভিযোগ অস্বীকার মেডিনোভার

6 এপ্রিলঃ অপারেশন না করেই রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল শিলচরের মেডিনোভা হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের বিরু্দ্ধে। মাখনলাল নাথ নামে সত্তর বছরের এক বৃদ্ধকে লালা থেকে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর পুত্রবধূ। পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা বৃদ্ধের। সারারাত ঘুমোতে পারেন না। কিন্তু দিনমজুর পরিবারটির পক্ষে চিকিতসার সামর্থ নেই। লালা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মেডিক্যালে পাঠানো হয় তাঁকে। গ্রামের মানুষ চাঁদা তুলে তাদের শিলচরে পাঠান। মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে শ্বশুর-পুত্রবধূ জানতে পারেন, এখন সেখানে শুধু করোনার চিকিতসা হয়। অন্য চিকিতসা হবে মউভুক্ত বাইশটি হাসপাতালে।

সেখান থেকেই মেডিনোভার কথা জানতে পারেন। রোগীর পরিজনের অভিযোগ, মেডিনোভা ভর্তি রেখে দিয়ে অটল অমৃত কার্ডের জন্য চাপ দিতে থাকে। তারা জানান, শিলচর জয়েন্ট ডিরেক্টর অফিসে কার্ড তৈরি। শুধু একবার রোগীকে নিয়ে যেতে হবে। মেডিনোভা কর্তৃপক্ষ ছাড়তে রাজি হননি। উল্টোপাল্টা কথা বলতে শুরু করেন। রোগীর পায়ে অপারেশন দরকার, কার্ড পেলেই অপারেশন হবে, বলা হচ্ছিল আগে। পরে জানায়, রোগীর হার্টের সমস্যা রয়েছে। একমাস পরে অপারেশন করাতে হবে। ততক্ষণে জয়ে্ন্ট ডিরেক্টরের অফিস থেকে কার্ড মেডিনোভায় পৌছে দেওয়া হয়।

কিন্তু মেডিনোভা কর্তৃপক্ষ তাঁদের অপারেশন এখন হবে না বলে রোগীকে নিয়ে য়েতে বলেন। তাঁদের কথায়, প্রায় বেরই করে দেওয়া হচ্ছিল। কী আর করেন তাঁরা। বিল মেটাতে গেলে তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। একদিনে কী দু-তিনটি পরীক্ষা করল। বিল দাবি করে, বারো হাজার ছাড়িয়ে। তারা বিষয়টি যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সম্পাদক সৈকত দত্তচৌধুরীকে জানান। তিনি কথা বলেন, শিলচরের সাংসদ ডা. রাজদীপ রায়ের সঙ্গে। শেষে স্থির হয়, যা পারে, তা-ই দিয়ে চলে য়েতে পারেন তারা। সেইমত চার হাজার টাকা দেন তাঁরা।

কিন্তু বিতর্ক দানা বাঁধে ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে। মুখে একমাস পরের অপারেশনের কথা বলা হলেও ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে হার্টের সমস্যার উল্লেখই নেই। বরং লেখা হয়েছে, ‘পার্টি রিফিউজড’। সৈকতবাবু এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, গরিব বলে জোর করে তাদের বের করে দিয়েছে মেডিনোভা কর্তৃপক্ষ। সরকারি অর্থে চিকিতসা হতো, সে সুযোগও দিল না মউভুক্ত হাসপাতালটি। সৈকতবাবুর প্রশ্ন, লালা থেকে শিলচরে ছুটে গিয়েছেন কি রিফিউজ করার জন্য। মানবিকতার জায়গা ছেড়ে দিলেও কার্ড তো তাদের হয়েই গিয়েছিল, এর পরও মেডিনোভা কর্তৃপক্ষ তাদের তাড়়িয়ে দিল। মউয়ের শুরুতেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে আগামী দিনগুলিতে মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কী ভুগতে হবে।

সোমবার এই ঘটনার কিছুক্ষণ পরই শিলচরে আসেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। সৈকতবাবু জানান, তাঁরা স্মারকপত্রের মাধ্যমে বিষয়টি তাঁকে জানিয়েছেন। তদন্তের দাবি করেছেন। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল বরাক উপত্যকায় আসছেন। সৈকতবাবু মাখনলাল নাথের পুত্রবধূকে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। দলীয় তরফে বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনে আন্দোলনে নামবেন। বৃদ্ধ মাখনলাল নাথের শারীরিক সমস্যা বেড়ে গেলে মেডিনোভা কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে বলেও জানিয়ে দেন।

এ দিকে, মেডিনোভার পক্ষে ডা. নিশিথেন্দু দাস জানান, শুরু থেকেই রোগীর পুত্রবধূ মিথ্যা কথা বলে চলছিলেন। ভর্তির সময়ে কার্ড সঙ্গে রয়েছে বলে জানান তিনি। সরল বিশ্বাসে চিকিতসা শুরু হয়ে যায়। পরে কার্ড খুঁজলে বলেন, বাড়ি ফেলে গিয়েছেন। শেষে জানান, রোগীকে একটু ছাড়া হলে জয়েন্ট ডিরেক্টর অফিস থেকে কার্ড নিয়ে আসবেন। কিন্তু একবার ভর্তির পরে রোগীকে এ ভাবে ছাড়া যায় না, এ কথা জানিয়ে ডা. দাস বলেন, তখনই তারা রোগীকে নিয়ে যেতে চান। নিজেরাই গাড়ি নিয়ে আসেন। নানা পরীক্ষানিরীক্ষায় বিল আসে বারো হাজার টাকার ওপরে। মাত্র চার হাজার টাকা ছিল তাদের সঙ্গে। তা রেখে আট হাজার টাকা ছেড়ে দেওয়া হয়। ডা. দাসের কথায়, হার্টের সমস্যা রয়েছে, এখনই অপারেশন সম্ভব নয়, এ যেমন সত্য, তেমনি তারা কার্ড না থাকায় রোগীকে নিজেরাই নিয়ে যাওয়ায় ‘পার্টি রিফিউজড’ লেখা হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker