India & World UpdatesHappeningsBreaking News

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রের মৃত্যুতে নানা প্রশ্ন

ওয়েটুবরাক, ১৩ আগস্ট : নতুন ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে নানা প্রশ্নের মুখে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সামনে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢিলেঢালা প্রশাসনিক অবস্থা। পুলিশ মেন হস্টেলের আবাসিক প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে৷ বিষয়টি নিয়ে পড়ুয়া, গবেষকেরা সমাজমাধ্যমে সরব।

ডিন অব স্টুডেন্টস রজত রায়ের দাবি, বুধবার রাতে মেন হস্টেল থেকে স্বপ্নদীপের বিষয়ে এক ছাত্রের ফোন পাওয়ার পরে তিনি সুপারকে বিষয়টি দেখতে বলেছিলেন। কিন্তু কেন তিনি নিজে যাননি? বিষয়টি নিয়ে সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত বলেন, অভ্যন্তরীণ কমিটির তদন্ত চলছে।

বুধবার রাতে হোস্টেলের তিনতলা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে স্বপ্নদীপের৷ তাঁর পরিবারের দাবি, রেগিংয়ের শিকার হয়েছেন তাঁদের ছেলে৷ তাঁকে খুন করা হয়েছে৷

যাদবপুরে কোনও হস্টেলে সিসি-ক্যামেরা নেই। অথচ ইউজিসি র‌্যাগিং বিরোধী নির্দেশিকায় হস্টেলে তা বসানোর কথা বলেছে। অনেকের বক্তব্য, মেন হস্টেলে সিসি-ক্যামেরা থাকলে বাংলা স্নাতকের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপের মৃত্যুরহস্য অনেকটা পরিষ্কার হত।

এই মৃত্যুর পরে মেন হস্টেলে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের নানা ঘটনা তুলে ধরছেন বর্তমান ও প্রাক্তনদের অনেকে।  বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশের প্রশ্ন, হস্টেলের অন্দরে মেস কমিটি কেন এত ক্ষমতাবান? সুপার বা ডিন অব স্টুডেন্টস কেন তাদের কিছু বলতে পারেন না?

বিভিন্ন হস্টেলের একাধিক আবাসিকের মতে, ছাত্রদের নিয়ে গড়া মেস কমিটি হস্টেলের বিষয়ে বহু সিদ্ধান্তের শেষ কথা। কমিটিতে থাকা সিনিয়ররাই নির্ধারণ করে দেন, প্রাক্তন কোন ছাত্র হস্টেলে থাকবেন। সুপার অথবা ডিন অব স্টুডেন্টস-এর কোনও ভূমিকাই নাকি থাকে না। পুলিশ যে প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে, তিনিও মেন হস্টেলের মেস কমিটির সদস্য ছিলেন। হস্টেলে প্রাক্তনীদের এই ‘সাম্রাজ্য’ কেন? কলা বিভাগের ছাত্র সংসদের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক শুভায়ন আচার্য মজুমদার বলেন, “সুপার হিসেবে যাঁরা কাজ করছেন তাঁদের বদল করা হোক। এক শ্রেণির আবাসিকের চাপে অথবা ভয়ে এঁরা কাজ করতে পারেন না।”

এক অধ্যাপকের কথায়, ‘‘গণতান্ত্রিক খোলামেলা পরিবেশকে বদ্ধ করার সাহস কর্তৃপক্ষের নেই। তা হলেই শুরু হবে আন্দোলন, ঘেরাও।’’ কিন্তু মুক্ত পরিবেশের নামে নতুনদের উপরে অত্যাচার চললে তা সহনীয়? উত্তর নেই। সহ-উপাচার্য জানালেন, এই নিয়েও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

ক্যাম্পাসের অনেকের ব্যাখ্যা, ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে’ হস্টেল-সহ ক্যাম্পাসে একটি ছোট ছাত্রগোষ্ঠী সব সময় সরব। কর্তৃপক্ষের একক সিদ্ধান্ত এখানে খাটে না।

 

শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘পুলিশ এ পর্যন্ত এক জনকে গ্রেফতার করেছে। আমরা দাবি জানাচ্ছি, ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সকলকে গ্রেফতার করতে হবে।’’

পার্থপ্রতিম রায় সহকর্মীদের এ দিন যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তাতে লিখেছেন, ‘আগেও বারে বারে দেখেছি যে র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে এক শ্রেণির ছাত্র বা অছাত্র তাদের বাঁচানোর জন্য ঘেরাও থেকে শুরু করে সব রকমের পন্থা অবলম্বন করে। আর আমরা শিক্ষকরা সব দেখে-জেনেও চুপ থাকি বা পরোক্ষ সমর্থন করি। তা হলে সাধারণ মানুষ আমাদের শ্রদ্ধা করা দূরে থাকুক, ঘৃণা করবে। এটি প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান বাঁচানোর লড়াই। আসুন, সবাই মিলে এক বার শেষ চেষ্টা করে দেখি।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker