India & World UpdatesHappeningsBreaking News
মৌন থেকেই মহান তিনি, সিংহের জীবনাবসান
ওয়েটুবরাক, ২৬ ডিসেম্বর: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের জীবনাবসান ঘটেছে। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লি এইমসে ভর্তি করা হয় তাঁকে। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
দিল্লি এইমসের তরফে জানানো হয়েছে, “বয়সজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার বাড়িতেই হঠাৎ সংজ্ঞা হারান তিনি। রাত ৮টা ৬ মিনিটে তাঁকে দিল্লি এইমসের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসক দলের সবরকম চেষ্টার পরেও তাঁকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। রাত ৯টা ৫১ মিনিটে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।”
মাত্রাতিরিক্ত নীরব, শান্ত একজন মানুষের পদক্ষেপে রাতারাতি এক নতুন যুগ শুরু হয়েছিল দেশে। ১৯৯১ সালে পিভি নরসিংহ রাও তখন প্রধানমন্ত্রী। মনমোহন তাঁর অর্থমন্ত্রী। ভারতীয় অর্থনীতি তখন রীতিমতো ধুঁকছে। জিডিপি মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিদেশি মুদ্রাভাণ্ডারে ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের মতো। এই পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে উদারনীতি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর ওই এক পদক্ষেপেই বিশ্বের অন্যতম অর্থনীতি হয়ে ওঠে ভারত।
কম কথা বলার মানুষ হলেও মনমোহন নিজের কাজে ও সিদ্ধান্তে ছিলেন স্থিতপ্রজ্ঞ। ২০০৮ সালে ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির সময় তাঁর অনমনীয় মনোভাব সবাইকে চমকে দিয়েছিল। সরকার পড়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কার মধ্যেও তিনি ছিলেন অবিচল।
অথচ তাঁকে নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। নানা কুরুচিকর, ব্যক্তিগত মন্তব্যকে হেলায় সরিয়ে রেখেছিলেন তিনি।
১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত একটানা রাষ্ট্রপুঞ্জের বাণিজ্য ও উন্নয়ন শাখায় কাজ করেন।
১৯৬৯ সালে মনমোহন শুরু করেন শিক্ষকতা। দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সে যোগ দেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অধ্যাপক হিসেবে। কয়েক বছরের মধ্যেই অবশ্য সরকারি দায়িত্বের ক্ষেত্রে প্রবেশ তাঁর। ১৯৭২ সালে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হন। ১৯৭৬ সালে হন কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থসচিব। ১৯৮০ সাল থেকে টানা দু’বছর মনমোহন ছিলেন যোজনা কমিশনে। প্রণব মুখোপাধ্যায় তখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। ১৯৮২ সালে মনমোহনকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর করা হয়। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সেই পদে ছিলেন। এর পর দু’বছর (১৯৮৫-৮৭) তিনি যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন।
১৯৮৭ সালে অর্থনীতি বিষয়ক স্বাধীন সংস্থা সাউথ কমিশনের মহাসচিব পদে বসেন মনমোহন। যার সদর দফতর সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনিভায়। সেখানেই ১৯৯০ পর্যন্ত ছিলেন মনমোহন। ১৯৯০ সালে দেশে ফিরে আসেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। ১৯৯১ সালের মার্চে তিনি ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশন (ইউজিসি)-র চেয়ারম্যান পদে বসেন।
১৯৯১ সালের জুন মাসে নতুন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাও তাঁর সরকারে মনমোহনকে অর্থমন্ত্রী করেন।