Barak UpdatesHappeningsBreaking News
মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কে অরাজকতা! অ্যাকশন ফোরাম গড়ল স্বেচ্ছা রক্তদাতা সংগঠনগুলি
ওয়েটুবরাক, ২৫ জুন: স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের এনজিও লাইফলাইন ফাউন্ডেশনের আহ্বানে গত বৃহস্পতিবার বরাক উপত্যকার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও বিশিষ্ট সমাজকর্মীদের নিয়ে গুগল মিট-এর মাধ্যমে এক বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ তাতে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ব্লাড ব্যাংকের কিছু কর্মীর দুর্ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়৷ তাদের জন্য রোগীর পরিবার এবং রক্তদাতারা যে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন, তা আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পায়।
বরাক উপত্যকার বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা যেমন লাইফলাইন ফাউন্ডেশন, স্মাইল, বরাক ভ্যালি ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম, হৃদয় এনজিও, সক্ষম, রাইজিং ইয়ুথ সোসাইটি, নেতাজি যুব ছাত্র সংস্থা, সেবা ভারতী, সহকার ভারতী, বৃহত্তর বাঙালি উন্নয়ন সমিতি, থেলাসেমিয়া সোসাইটি, সংযোগ এনজিও, রোটারি ক্লাব হাইলাকান্দি শাখা এবং স্মার্ট ফিটনেস ক্লাব লক্ষীপুরের প্রতিনিধিরা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন৷ অনেকেই শিলচর মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাংকে নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। বহু বছর ধরে শিলচর মেডিক্যাল কলেজে বিশাল শক্তিশালী দালাল চক্র কাজ করছে বলে সবাই অভিযোগ করেন৷ তাঁদের কথায়, এই চক্রান্তের শেকড় বহুদূর বিস্তৃত। সে জন্য কোনও রক্তদাতা সকালে রক্ত দিতে গেলে তার রক্ত দিয়ে বেরিয়ে আসতে বিকেল হয়ে যায়। এরা কাজের চাপ না থাকা সময়েও ইচ্ছাকৃতভাবে রক্তদাতা ও পরিজনদের দাঁড় করিয়ে রাখেন । প্রায় সকলের অভিমত, শিলচর মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাংক সাধারণ জনগণের কাছে আতঙ্কস্থলে পরিণত হয়েছে।
গুগল মিটের মাধ্যমে লক্ষীপুর থেকে সমাজকর্মী অমিত দাস বললেন, কিছুদিন আগে তাঁর এক নিকটাত্মীয়ের দুটো কিডনি বিকল হয়ে যায়৷ তাঁকে মেডিক্যাল কলেজ ভর্তি করা হয়। ডাক্তার ডায়ালিসিসের জন্য জরুরি ভিত্তিতে রক্তের ব্যবস্থা করতে বলেন । তখন অমিতবাবু এক্সচেঞ্জে রক্ত নিতে যান। সব রকমের নিয়ম-নীতি মানার পরও তাঁকে ডাক্তার নেই বলে ঘণ্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয়। অমিত দাসের বক্তব্য, তখন ব্লাড ব্যাংকের ভেতরে একজন ডাক্তার পায়চারি করছিলেন, কিন্তু ইচ্ছে করেই তাঁকে বসিয়ে রাখা হয়। চারঘন্টা পর ডাক্তার রুমে যান৷ তখন অমিতবাবু তাঁকে বলেন, “আপনার এরকম করা ঠিক হচ্ছে না৷ রোগী মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে৷ আপনি পারতেন অনেক আগেই রক্ত দিতে৷” উত্তরে ডাক্তার বললেন “আমি চাইলে আপনাকে আরও অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখতে পারি৷”
এ দিকে, থেলাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের ২০ দিন পর পর দুই ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। যেহেতু শিলচর মেডিকেল কলেজের ব্লাড ব্যাংক ছাড়া বরাক উপত্যকার কোনও হাসপাতালে পিআরবিসি বানানোর মেশিন নেই, তাই তাদের বাধ্য হয়ে শিলচর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হয়। গত বছর শিলচরের জেলাশাসক কীর্তি জল্লি শিলচর মেডিকেল কলেজের ব্লাড ব্যাংককে থেলাসেমিয়া আক্রান্তদের এক্সচেঞ্জ ছাড়াই রক্ত দেওয়ার আদেশ দেন৷ কিছুদিন তাঁর নির্দেশ কার্যকর হয়৷ এর পরই ব্লাড ব্যাংকের ইনচার্জ এই পরিষেবা বন্ধ করে দেন। তাই রোগীদের পরিবার আগের মতোই রক্তের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকে। অনেকেই রক্ত না পেয়ে ফিরে যান। এই সমস্যা সমাধানের জন্য রোগীর অভিবাবকরা থেলাসেমিয়া সোসাইটি গঠন করেন৷ হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জে দুটি রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করেন। কিন্তু দুই-দুই বার শিলচর মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাংকের ইনচার্জ তাদের শিবির বাতিল করে দেন। তারপর তারা আর রক্তদান শিবির করেননি।
কিছুদিন আগে শিলচর মেডিক্যাল কলেজের মাঠে কিছু রক্তের প্যাকেট অর্ধ জ্বলন্ত অবস্থায় পড়ে থাকা, ব্লাড ব্যাংকের ইনচার্জের এফআইআর করা ও পরে প্রত্যাহারের প্রসঙ্গও চর্চায় উঠে আসে৷ গুগল মিট বৈঠকে সব্যসাচী রুদ্রগুপ্ত ও পরিতোষ দত্ত দুজনেই নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাঁরা অনেক বারই মেডিকেল কলেজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের কাছে ব্লাড ব্যাংক যাতে সুস্থ ভাবে পরিচালিত হয় এবং রোগীরা যেন সহজে রক্ত পান, সেই ব্যবস্থা করার দাবি জানান। মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যর কাছেও আবেদন জানিয়েছিলেন এবং তিনি তাদের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন৷ কিন্তু শিলচর মেডিকেল কলেজের ব্লাড ব্যাংক তাঁর কথাও মানেনি। রাতুল ভট্টাচার্য বলেন, রক্তদাতারা খুব তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেরেন ও দ্বিতীয়বার রক্ত দিতে মেডিকেল কলেজ যেতে চান না।
বিভিন্ন সমাজসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা বলেছেন, একজন রক্তদাতাকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে মেডিকেল কলেজ নিয়ে যাওয়া সহজ কথা নয়৷ পরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিয়ম নীতির অজুহাতে দাঁড় করিয়ে রাখলে রক্তদাতা অপমানিত বোধ করেন৷ এই সব কারণে সেবা ভারতী ও আরও অনেক সংস্থা শিলচর মেডিক্যাল কলেজে রক্ত দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এই অবস্থা বেরিয়ে আসার জন্য গুগল মিটে উপস্থিত সবাই মিলে ব্লাড ভলান্টিয়ারস অ্যাকশন কমিটি গঠন করেন। এ বার সংগঠিতভাবে শিলচর মেডিকেল কলেজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসনের কাছে নিজেদের দাবি তুলে ধরবেন এবং সেসব দাবি পূরণ না হলে আন্দোলনের ডাক দেবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়।
তাঁরা বলেন, একদিকে এই করোনা মহামারির সময়ে শিলচর মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল, সুপারিন্টেন্ডেন্ট এবং ডাক্তাররা দিন-রাত এক করে রোগীর সেবা করছেন, মানুষের জীবন রক্ষায় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন, অন্যদিকে সমগ্র অসমে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ যে কারণে সম্মান কুড়িয়েছে, সেই ব্লাড ব্যাংকের দুর্নীতি চলছে৷ প্রশ্ন ওঠে, ব্লাড ব্যাংক প্রত্যেক ইউনিট রক্তের বদলে এক্সচেঞ্জ নিলে রক্তদান শিবিরের রক্তগুলো কোথায় যাচ্ছে?