Barak UpdatesHappeningsBreaking News

ভাস্কর স্যারের মৃত্যু, তৈরি হল এক অপূরণীয় অভাবের জায়গা, লিখেছেন শতাক্ষী ভট্টাচার্য

//শতাক্ষী ভট্টাচার্য//

“করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। ঘর থেকে বেশি বেরোবে না। কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলবে। আমরা ছেলেমানুষ, আসা-যাওয়া লেগেই থাকে। এক ফাঁকে না হয় তোমার জরুরি সামগ্রী এনে দিয়ে গেলাম, তাতে কি আর আমার গায়ের টুকরো খসে পড়বে?’

ভাস্কর স্যারের এই কথাগুলো কানে বোধ হয় বাজতেই থাকবে। হ্যাঁ, বাজছে এখনও। এই তো ২২ আগস্ট অনেকক্ষণ কথা বললেন। আমার সঙ্গে এটাই ছিল তাঁর শেষ বার্তালাপ। অন্যান্য প্রসঙ্গের পাশাপাশি আমাকে এভাবেই একদিকে সতর্কবার্তা যেমন দিয়েছেন, তেমনি দিয়েছেন সাহায্যের আশ্বাসও। শুধু আমি বলে নয়, তাঁর এই হেল্পফুল মানসিকতা সম্পর্কে মনে হয় পরিচিতজনেরা সবাই কম-বেশি জানেন।

আজ সকালে যখন তাঁর অকালমৃত্যুর খবর পেলাম, কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। এটাই ছিল স্বাভাবিক। অনুভব করলাম, স্বজন হারালে বোধ হয় যন্ত্রণাটা এমনই হয়।

মা মারা যাওয়ার মাস দিনও হয়নি। তারমধ্যে নিজেও পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন ভাস্কর স্যার। সেদিন আক্ষেপ প্রকাশ করে বলছিলেন, ‘মায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সহ আনুষঙ্গিক দিকগুলো নিজের ইচ্ছেমতো করতে পারিনি। কোভিড করতে দিল না। কোনোভাবে সেরে নিতে হয়েছে। এই দুঃখ তো থাকবেই।’

শিলচর মহর্ষি বিদ্যমন্দিরের এক বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন ফাইন আর্টস শিক্ষক ভাস্কর গুপ্ত (বাপি), আমাদের সবার প্রিয় ভাস্কর স্যার। সহকর্মী হিসেবে আমি যতটুকু জানি, স্কুলের যে কোনও অনুষ্ঠানই হোক না কেন , যতক্ষণ না পর্যন্ত সাজসজ্জা তৃপ্তিদায়ক হচ্ছে, হাল ছাড়তেন না। সেরা প্রস্তুতির একটা নাছোড় মনোভাব কাজ করত তাঁর মধ্যে। শিলচর মহর্ষি বিদ্যামন্দিরের রজত জয়ন্তী উদযাপন পর্বে পড়ুয়াদের নিয়ে স্যারের তৈরি দর্শনীয় আর্ট গ্যালারি, তাঁর এমন প্রত্যয়ী চিন্তাধারার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

স্যারের সঙ্গে মোটামুটি দশ বছরের পরিচয়। ছোট বোনের মতো স্নেহ করতেন। মাঝে-মধ্যে মতের অমিল হলে অভিমানও করতাম। স্যার নিজে থেকে এসেই কথা বলতেন। কোনও কারণে সমস্যায় পড়লে সাধ্যমতো সমাধান করার চেষ্টা করতেন। পরামর্শ দিতেন। কিন্তু এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা এক পলকে সবকিছুই কেড়ে নিয়েছে। তৈরি করেছে এক অপূরণীয় অভাবের জায়গা।

একজন সহকর্মী যেমন হারিয়েছি, ঠিক সেভাবে হারিয়েছি এক বড় ভাইয়ের স্নেহের জায়গাটুকুও। তবে, ভাস্কর স্যার তাঁর কর্মনিষ্ঠা, প্রতিভা ও ভাবনার মধ্য দিয়ে সবসময় পাশে থাকবেন, আমি এটাই মনে করি। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। সমবেদনা জানাই শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি। স্যার, আমার শ্রদ্ধা নেবেন। আপনি যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন। শুধু আমি নয়, শিলচর মহর্ষি বিদ্যামন্দির আপনার অবদান চিরদিন মনে রাখবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker