Barak UpdatesHappeningsBreaking News
ভাষা আগ্রাসন নিযুক্তির দুয়ারও বন্ধ করে দিচ্ছে, বরাকবঙ্গের সতর্কবার্তা
July 23, 2021
ওয়েটুবরাক, ২৩ জুলাই : শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, নিযুক্তির ক্ষেত্রেও এ রাজ্যে ভাষিক আগ্রাসন শুরু হয়ে গেছে। এর ফলে বাঙালি সহ অনসমিয়া জনগোষ্ঠীগুলোর কর্মপ্রার্থীদের চাকরির দুয়ার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । ভাষিক আগ্রাসনের নীতি এখন পরিব্যাপ্ত রূপে সংখ্যালঘু ভাষাভাষী মানুষের রুজি রোজগারের ক্ষেত্রেও থাবা বসাচ্ছে। ছিয়াশির ভাষা আন্দোলন স্মরণে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত আলোচনা সভা থেকে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীগুলোর সুরক্ষায় সংবিধান প্রদত্ত অধিকার সংরক্ষণে ঐক্যবদ্ধ না হলে শিক্ষার সঙ্গে কর্মের অধিকারও হারাতে পারেন কর্মপ্রার্থীরা ।
বিশিষ্ট লেখক দীপক সেনগুপ্তের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ‘প্রেক্ষিত ২১ জুলাই : ভাষার জন্য সংগ্রাম ‘ শীর্ষক আন্তর্জালিক পর্যায়ে আলোচনায় বলা হয়, এ রাজ্য একটি বহুভাষিক, বহুজাতিক ও বহুধর্মীয় জনপদ। এখানে বসবাসকারী প্রত্যেকে রাজ্যের সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে চলেছেন । তাই এখানে ভাষিক আগ্রাসন নীতি নিয়ে শিক্ষা ও নিযুক্তির ক্ষেত্রে অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা রাজ্যে অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে। আলোচনার সূচনা করে বরাক বঙ্গের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতিশ ভট্টাচার্য বলেন , বরাক উপত্যকায় ভাষার জন্য বহমান সংগ্রাম চলছে। ৬১ , ৭২ ,এবং ৮৬ সালের ভাষা আন্দোলন প্রকৃতপক্ষে অনসমিয়া জনগণের অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অখণ্ড বাঙালি জাতিসত্বার পোষকতা করে নীতিশ ভট্টাচার্য্য বলেন, খণ্ড চিন্তায় বিভাজিত হলে তার খেসারত দিতে হবে গোটা জাতিকেই।
করিমগঞ্জের বিশিষ্ট কবি ও সাংস্কৃতিক সংগঠক মৃন্ময় রায় আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বলেন , আগ্রাসনের স্রোত পরিকল্পিতভাবে ধেয়ে আসছে। এই অবস্থায় বরাক উপত্যকা সহ রাজ্যের অনসমিয়া জনগোষ্ঠীগুলোকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে না থেকে বৃহত্তর স্বার্থে কাছাকাছি এগিয়ে আসা দরকার। সমঝোতার পথে না চললে উত্তর প্রজন্ম খেসারত দেবেন। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক, লেখক বিশ্বতোষ চৌধুরী বলেন ,বাংলা কখনোই আগ্রাসনের ভাষা নয় । বরং সব ভাষা থেকেই আহরণ করে সে নিজেকে আরও গতিশীল করে তুলেছে । কিন্তু এই ধারার পাশাপাশি বাংলাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করার এক প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। এর বিপজ্জনক পরিণতি সম্পর্কে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বরাক বঙ্গের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত আলোচনায় যোগ দিয়ে এ রাজ্যে ভাষা আগ্রাসনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। বললেন, স্বাধীনতা প্রাপ্তির লগ্নে রাজ্য বিধানসভায় এক্ষেত্রে যে দর্শনের কথা উচ্চারিত হয়, সেটাই বিগত ছয় দশকে দফায় দফায় নবায়িত হয়েছে বিভিন্ন রূপ ধরে। কিন্তু আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মানুষের যে আবেগ তার সঙ্গে স্বজাতির রাজনৈতিক অভিভাবকরা সহমর্মিতা প্রকাশ করছেন না৷ এই খেদ ব্যক্ত করে দত্ত বলেন, জাতি ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার হারালে এক সময় রাজনৈতিক অধিকারও লুপ্ত হতে পারে। ইতিহাসের এই শিক্ষা গ্রহণে কোনও আগ্রহ নেই এখানকার রাজনৈতিক নেতাদের। এই আত্মঘাতী প্রবণতার মূল্য একদিন তাদেরও দিতে হতে পারে ।
আলোচনার অভিমুখ বেঁধে দিয়ে সঞ্চালক দীপক সেনগুপ্ত বলেন, এই কঠিন সময়ে সুচিন্তিত অভিমত আমাদের পথ দেখাতে পারে । আলোচনার প্রারম্ভে বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী বিধায়ক ভট্টাচার্য ভাষাশহিদদের স্মৃতির উদ্দেশে দুখানা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। আলোচনায় বরাক বঙ্গের কাছাড় জেলা সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরীরও অংশগ্রহণের কথা ছিল, কারিগরি ত্রুটির জন্য তিনি অংশ নিতে পারেননি৷
উল্লেখ করা যেতে পারে, বরাকবঙ্গ একুশে জুলাই শহিদ দিবসে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জালিক মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেছে। এখন থেকে এখানে অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে কাজ করবে সংগঠন। ইতিমধ্যে ফেসবুকের সঙ্গে টুইটার মিডিয়ায়ও নিজেকে তুলে ধরছে বরাকবঙ্গ।