Barak UpdatesHappeningsCultureBreaking News
ভাবীকালের সফল নাটক “মৃত্যুর সাথে অভিসার”, লিখেছেন শান্তনু সেনগুপ্ত
//শান্তনু সেনগুপ্ত//
ভাবীকালের নাটক “মৃত্যুর সাথে অভিসার” নিয়ে লিখতে গিয়ে একটা কথা প্রথমেই অকপটে স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে, এটা কোনো বিদগ্ধজনের নাট্য পর্যালোচনা নয়। এটা নেহাতই একজন নাটকপাগল দর্শকের এই নাটকের অনেক ভালো লাগা এবং সেই সঙ্গে অল্প কিছু সেই ভাবে ভালো না-লাগা অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
ভাবীকালের প্রাণপুরুষ এবং আমার অনুজপ্রতিম ও অত্যন্ত ভালোবাসার মানুষ শান্তনু পালের আমন্ত্রণে ওদের নাটক দেখতে হাজির হই বঙ্গভবনে ২৭ মের সন্ধ্যায়। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত একটি অনুষ্ঠান সেদিনই গান্ধীভবনে থাকায় ওইদিনের প্রথম নাটকটি আমার দেখা হয়নি। আমি যখন হলে প্রবেশ করি, তখন দ্বিতীয় নাটক অল্পক্ষণ হয় শুরু হয়েছে। তাই সেদিনের প্রথম নাটক ” অনাগত” নিয়ে কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে শুনেছি নাটকটি ভালো হয়েছে।
একজন সাধারণ দর্শক হিসেবেই সেদিন নাটক দেখতে গিয়েছিলাম। তাই এই নাটক নিয়ে কিছু লিখতে হবে এটা একেবারেই আমার জানা ছিল না। তাই সেরকম কোনো প্রস্তুতি নিয়ে আমি সেদিন কিন্তু যাইনি। সে কারণে আমার নিতান্তই কিছু ব্যক্তিগত অনুভূতি এখানে তুলে ধরবার চেষ্টা করছি।
প্রথমেই আমি এই নাটকের টেকনিক্যাল সাইড নিয়ে কথা বলতে চাই। এই নাটকে সিনেমাটোগ্রাফির এক অসাধারণ প্রয়োগ আমরা দেখতে পাই। সেই সঙ্গে শেষ দৃশ্যে ব্যাক স্ক্রিনে লাইট অ্যান্ড শেডের প্রয়োগ আমাদের মুগ্ধ করেছে। আর গুলি করার পর স্ক্রিনে যে রক্তের খেলা দেখানো হয়েছে, তা এককথায় “চেরি অন দ্য টপ।” অপূর্ব সুন্দর উপস্থাপনা। হ্যাটস্ অফ্- পুরো টিম অনুপম সিংহ, কেতন পাল, পঙ্কজ বৈষ্ণব ও বিপ্লব ঘোষকে। এই নাটক সফল করার ব্যাপার এদের অবদান অনস্বীকার্য।
সেট নিয়ে ভাল কাজ করেছেন সায়ন্তনি মিঠি, রঞ্জিত সিংহ, গৌরব রবিদাস ও সুপ্রিয়া সিনহা। আলোর পরিকল্পনায় খুবই ভালো কাজ করেছেন সেজুতি বাগচি। তবে আলো প্রক্ষেপণে কিছু জায়গায় খামতি থেকে গেছে। অনেক সময় একটু দেরিতে আলো পড়েছে। শান্তনুকে বেশ কয়েকটি জায়গায় অন্ধকারেই অভিনয় করতে হয়েছে। এছাড়া স্ক্রিনে প্রজেকশন চলাকালীন একেবারে আপ স্টেজে কোণায় যে আলোর ব্যবহার করা হয়েছে শান্তনুকে ধরার জন্যে, সেটা যথাযথ হয়নি। এর ফলে দর্শকদের ডেস্ট্রাকশন হচ্ছিল দেখতে। প্রথম প্রোডাকশন হিসেবে এটা খুবই সাধারণ ঘটনা। পরবর্তীকালে দেবস্মিতা দাস অবশ্যই খামতিগুলো শুধরে নেবেন, এটা আমাদের বিশ্বাস। বিশেষত আমাদের এখানে যেহেতু সেই অর্থে আলোর জন্যে প্রফেশনাল মানুষ নেই। নাটকের নির্দেশককেই এক মাথায় সব কিছু ভাবতে হয়, সেই জন্যে প্রথম প্রোডাকশনে সেই পারফেকশনটা আসে না। আসা সম্ভব নয়। বাইরের বড় দলগুলোর নাটকে আমরা দেখতে পাই, একজন প্রফেশনাল মানুষ পুরো ব্যাপারটা দেখাশোনা করছেন। নির্দেশক এক্ষেত্রে শুধু একজন ক্যাটালিস্টের কাজ করেন। আবহসংগীত নিয়ে খুবই ভালো কাজ করেছেন সায়ন্তনি পাল। বেশীরভাগ জায়গাই নাটককে এগিয়ে নিয়ে যেতে আবহ সাহায্য করে গেছে। তবে এধরনের মনস্তাত্ত্বিক নাটকে একটা সিগনেচার টিউন থাকাটা খুবই দরকার বলে আমার মনে হয়, যা কিনা মানসিক দ্বন্দ্বের জায়গাগুলোকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলবে। এটার একটু অভাব ছিল। এছাড়া আবহসংগীতের কাজ যথেষ্ট ভালো।
এবারে আসি অভিনয় প্রসঙ্গে। শান্তনু পাল এ অঞ্চলের একজন অত্যন্ত ডাকসাইটে অভিনেতা। তার অনেক ভালো ভালো অভিনয় আমরা দেখেছি, হনুয়া কা বেটা, চোর, কোর্ট মার্শাল, ম্যাকবেথ প্রভৃতি নাটকে। মঞ্চে ওর সাবলীল অভিনয় সবসময়ই আমাদের মুগ্ধ করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সোয়া ঘন্টা ধরে প্রায় একা নাটকটি টেনে নিয়ে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। এখানেই শান্তনুর অভিনয়ের নৈপুণ্য প্রকাশ পায়। আমাদের মুগ্ধতা বাড়ে। সেই সঙ্গে ছোট্ট একটি চরিত্রে অনিন্দ্য সেন আমাদের মুগ্ধ করেছেন।
সব কিছু মিলিয়ে ভাবীকালের একটি যথার্থ মঞ্চসফল নাটক “মৃত্যুর সাথে অভিসার”। কারিগরি দক্ষতার চূড়ান্ত সফল প্রয়োগ ঘটিয়ে এই নাটক মঞ্চস্থ করে ভাবীকাল দেখিয়ে দিল, আমরাও পারি। শিলচরের নাট্য আন্দোলন এভাবেই এগিয়ে চলুক।