Barak UpdatesHappeningsBreaking News
বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি হার বাড়িয়ে মিটারকে দুষছেন হিমন্ত, অভিযোগ জেলা কংগ্রেসের
বন্যাক্রান্তদের আর্থিক প্যাকেজের বদলে মাশুল বৃদ্ধি, আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
ওয়েটুবরাক, ২১ সেপ্টেম্বর : কয়েকমাস থেকে অস্বাভাবিক হারে বিদ্যুৎ বিল আসছে৷ এ নিয়ে মানুষ শঙ্কিত, আতঙ্কিত। উদ্বিগ্ন শিলচর জেলা কংগ্রেস কমিটিও৷ তাদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার কোনও ধরণের সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ না করে উল্টো বয়ানবাজি করে বিভ্রান্ত করছে মানুষকে। মুখ্যমন্ত্রী কিছুদিন আগে এই অস্বাভাবিক হারে বর্ধিত বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে সাফাই দিতে গিয়ে বললেন, স্মার্ট মিটারই এর জন্য দায়ী। মঙ্গলবার জানালেন, যারা মনে করছেন বিল বেশি আসছে, তাঁরা ইচ্ছে করলে মিটার যন্ত্র পরীক্ষা করাতে পারবেন৷ গরমের জন্যই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ করছেন মানুষ তাই বিলও বেশি আসছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি তমালকান্তি বণিকের প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের জনগণকে এত আহাম্মক ভাবেন কেন? যা খুশি একটা বলে দেবেন, আর মানুষ সেটা মেনে নেবে সেরকম ভাবনারই বা কারণ কী? তাঁর কথায়, বর্তমানে যে নিয়মে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হচ্ছে সে অনুযায়ী যদি কেউ বিদ্যুৎ বিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা না করেন, তবে তাঁকে জরিমানা দিয়ে সেটা পরের মাসের বিলের সঙ্গে জমা করতে হয়। বর্তমানের স্মার্ট মিটারের ক্ষেত্রে প্রথম বিল জমা না করতে পারলে দ্বিতীয় বিল তৈরি হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই গুয়াহাটি থেকে ওই লাইনে বিদ্যুৎ বিতরণ বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ পুনঃস্থাপনের জন্য ৪০০ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়। যদি কারও মিটারে কোনও গোলযোগ দেখা দেয়, তবে তাঁকে এভারেজ বিল হিসাবে, গোলযোগ সৃষ্টি হওয়া বিলের অনুপাতিক হারেই বিল জমা করতে হয়।
সরকারি তরফের ঘোষণায় মিটার পরীক্ষা চলাকালীন বর্ধিত হারের আনুমানিক বিল, মানুষের কাছে টাকা-পয়সা থাকুক আর না ই থাকুক, সবাইকে পরিশোধ করতেই হবে। বিদ্যুতের হাজার হাজার মিটার পরীক্ষা করার জন্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন, না হলে মিটার জমা করার কতদিন পর সেটা ফেরৎ আসবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। অপ্রতুল পরিকাঠামো রেখে এই ধরণের বয়ানবাজি মানুষের চোখে ধুলো ঝাড়ারই নামান্তর বলে মন্তব্য করেন তমাল।
তিনি বলেন, বিভিন্ন ধাপে বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম যেভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেই বর্ধিত মূল্য হ্রাস করার ন্যূনতম প্রচেষ্টা না করে সমস্ত দোষ বিদ্যুৎ মিটার যন্ত্রের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে এবং মিটার পরীক্ষা করানোর কাল্পনিক কথা বলে সরকার যে মানুষের এই জ্বলন্ত সমস্যার থেকে নজর ঘুরিয়ে নিতে চাইছে, সেটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার।
কোভিড এবং সরকার সৃষ্ট প্রলয়ঙ্করী বন্যার পর কাছাড়ের মানুষের অর্থনৈতিক ভিত অনেকটাই নড়বড়ে। সেক্ষেত্রে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণার দাবিকে উপেক্ষা করে, মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ বিদ্যুতের মাশুল বাড়িয়ে দিয়ে অতিরিক্ত পয়সা দিতে বাধ্য করে সরকার যে বার্তা দিতে চাইছেন সেটা তুঘলকি রাজেরই নামান্তর। তাই সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে জনহিতার্থে অবিলম্বে বিদ্যুৎ মাশুল কম করার জোরালো দাবি জানায় শিলচর জেলা কংগ্রেস৷ নইলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তীব্র গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে পিছপা হবেন না বলেও জানিয়ে দেন সভাপতি তমাল।
বরাকের শাসক দল ও তার মিত্র বিধায়কদের তিনি অনুরোধ করেন, “জনগণের স্বার্থের বাইরে গিয়ে দলীয় লেজুরবৃত্তি না করে বরাক উপত্যকার বন্যা বিধ্বস্ত জনগণের জন্য আর্থিক প্যাকেজের দাবিতে গলা মেলান। এই দাবি জনগণের দাবি, কংগ্রেস দল এই দাবি থেকে একচুলও নড়বে না।”
তিনি হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, “মানুষের বর্তমান অর্থনৈতিক অক্ষমতার জন্য দায়ী যেহেতু সরকারের অপদার্থতা, তাই অতিরিক্ত মাশুল বাড়িয়ে কর চাপিয়ে মানুষের অসহায়তাকে উপহাস করবেন না।”