Barak UpdatesHappeningsBreaking News

বাড়ি গিয়ে দেখি, বিবস্ত্র কিশোরীটি আমারই মেয়ে, বললেন ময়নাগড়ের ধর্ষিতার পিতা

//ধর্ষিতার পিতা//

পরনে কিছুই নেই, প্যান্টটা গলায় ধরে হেঁটে চলেছে বিবস্ত্র কিশোরী। দূর থেকে এক ঝলক দেখতেই চোখ নামাই। এমনিতেই দূরের জিনিস ভালো দেখতে পাই না। ময়নাগড় বাগানেই ঘুগনি-চপের দোকান আমার। পাশে দাঁড়িয়েছিল এলাকারই এক যুবক। তাকে বলি, কে এই মেয়েটা। এই অবস্থায় মেয়েটিকে দেখে মুখের দিকে তাকাতে পারেনি সে-ও। অনুমান করে বলে, ও-ই পাগলি পিসি হবে।

তবু মনটা আনচান করছিল। মেয়েটা বাগানের মণ্ডপে সিনেমা দেখতে রাতে বেরিয়েছে। সবাই বাড়ি ফিরলেও সে এখনও আসেনি। দুই-একজনের কাছে জেনেছি, এলাকার যুবক সঞ্জয় তেলির সঙ্গে শিলচর শহরে পূজা দেখতে গিয়েছে। কত কী ভাবতে ভাবতেই খদ্দেরদের কাউকে কাগজে মুড়ে চপ দিচ্ছিলাম, কাউকে  এগিয়ে দিচ্ছিলাম ঘুগনির প্লেট। তখনই আমার ছোট ভাই ছুটে গিয়ে বললেন, “বাড়ি এসো। সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে।” কী হয়েছে, সে বলতে পারছিল না। উৎকণ্ঠায় দৌড়তে দৌড়তে বাড়ি গিয়ে দেখি, ওই বিবস্ত্র কিশোরীটি আমারই মেয়ে। ততক্ষণে অবশ্য কাপড় পরানো হয়েছে তাকে। কী করে এই অবস্থা হল, জানতে চাইলে রক্তমাখা হাতে লিখে দিল, মহাষ্টমীর রাতে সঞ্জয় তাঁকে ধর্ষণ করেছে। পরে ছুরি দিয়ে তার গলার অনেকটা কেটে ফেলে। গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছিল। আর কিছু মনে নেই তার।

তখনও গলা দিয়ে রক্ত ঝরছিল। কাঁপাকাঁপা হাতে দশম শ্রেণির ছাত্রী লিখে চলে, “আজ (নবমীর দিন) সকালে আমার জ্ঞান ফেরে। দেখি আমি বস্তাবন্দি। চিৎকার করতে চেয়েছি, গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয়নি। চেষ্টা করেছি আঙুল বার করে বস্তা ছেড়ার। দাঁত দিয়েও কেটেছি কতটা। পরে কোনওক্রমে হাত বার করি। বস্তার মুখ খুলে বেরিয়ে আসি।”

স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসক তার অবস্থা দেখেই শিলচর মেডিক্যাল কলেজে পাঠান। এখন সেখানেই চিকিৎসাধীন সে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়েছিল৷ আঙুরলতার লেখা পড়ে সঞ্জয় তেলিকে গ্রেফতার করেছে। শুনেছি, জিজ্ঞাসাবাদে সঞ্জয় দোষ স্বীকার করে নিয়েছে। চা বাগানের ঘন জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে তাকে দিয়েই ছুরি বার করা হয়েছে। কাছেই পড়েছিল বস্তাটি। পুলিশ সেটি পরীক্ষা করতে গিয়ে আমার মেয়ের ফ্রকটিও ভেতরে পায়।

কী হবে যে এখন আমার মেয়ের! একবার গলায় অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখন তরলজাতীয় পদার্থ টিউবের সাহায্যে খেতে দেওয়া হচ্ছে। ডাক্তাররা বলেছেন, কিছুদিন না গেলে তাঁরাও বলতে পারছেন না, মেয়েটি আর কথা বলতে পারবে কিনা, আর কোনওদিন বাবা বলে ডাকতে পারবে কিনা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker