NE UpdatesBarak UpdatesHappeningsBreaking News
বাঙালি জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বকে অস্বীকার করার সুকৌশলী চেষ্টা চলছে, উদ্বিগ্ন বরাক বঙ্গ
ওয়েটুবরাক, ৪ অক্টোবর : বরাক উপত্যকায় জনগোষ্ঠীগত বিভাজনের যে রাজনীতি শুরু হয়েছে এবং পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলোতে পঞ্চাশ শতাংশ হারে অসমিয়া ভাষাশিক্ষা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগে গভীর উৎকণ্ঠা ব্যক্ত করেছে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। এ সম্পর্কে রাজ্য সরকারের কাছে আর্জি জানিয়ে বলেছে, অবিলম্বে এ ধরনের তৎপরতা বন্ধ করা হোক। সংগঠন এই অভিমত পোষণ করেছে, এই চেষ্টা উপত্যকায় জনগোষ্ঠীগত দীর্ঘদিনের যে শান্তি ও সদ্ভাব রয়েছে তাতে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। অন্যদিকে, অসম সরকারি ভাষা আইন ও ঘোষিত সরকারি সিদ্ধান্ত বদলে বরাকে বিদ্যাশিক্ষায় অসমিয়া ভাষা বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা হলে তাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে উপত্যকায় অসন্তোষ ধূমায়িত হচ্ছে বলে বরাকবঙ্গ বৈঠক থেকে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে ।
বরাকবঙ্গের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক সমিতি রবিবার করিমগঞ্জের বিপিন পাল স্মৃতি ভবনে বৈঠকে বসে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে স্থির করেছে, বিষয়গুলো নিয়ে জনমত গঠনে তারা উপত্যকার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্ব ও সুশীল সমাজের কাছে যাবে। নীতিশ ভট্টাচার্যের পৌরোহিত্য অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে শান্তির দ্বীপ এই উপত্যকায় ব্যক্তিস্বার্থে স্থিতিশীলতা নষ্ট করার জন্য কিছু কিছু মহল থেকে যে চেষ্টা চলছে তাতে সাম্প্রতিক সরকারি তৎপরতা উৎসাহ যোগাতে পারে বলে সদস্যরা গভীর শঙ্কা ব্যক্ত করেছেন । বৈঠকে সুস্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, বরাক উপত্যকার নিজস্ব ভাষিক পরিচিতি রয়েছে। এখানে সংখ্যাগুরু বাঙালি এবং অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক মেলবন্ধন সুপ্রাচীন এবং প্রত্যেকেই সুপ্রতিবেশীর মনোভাব নিয়ে নিজস্ব ছন্দে আপন ভাষা-সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশ এবং আদানপ্রদানের কাজ করে চলেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিককালে কিছু সরকারি কর্তা এবং একাংশ জনপ্রতিনিধি বাঙালি জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বকে অস্বীকার করার সুকৌশলী চেষ্টায় মেতে উঠেছেন। এ ধরনের বিভাজনমূলক তৎপরতা কোনভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়, এ থেকে বিরত থাকা উচিত।
বৈঠকে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, এ রাজ্য একটি বহুভাষিক, বহুজাতিক এবং বহু ধর্মীয় লোকের অঞ্চল। প্রত্যেকের বিকাশের মধ্য দিয়েই এ রাজ্য দেশের সমৃদ্ধ প্রদেশে পরিণত হতে পারে। বাঙালি জনগণ চায়, অসমীয়া সহ সব ভাষার চর্চা ও বিকাশের ধারা অব্যাহত থাকুক এবং এই জনগোষ্ঠী তাতে বরাবরই সহায়তা জানাবে। তবে বাংলা ভাষা এবং বাঙালির সংবিধান প্রদত্ত অধিকার সংকুচিত করার চেষ্টা হলে সমবেতভাবে তার বিরোধিতাও করবে।
বৈঠকে পরমানন্দ রাজবংশী নেতৃত্বাধীন বিধানসভার প্রতিনিধিদলের বরাক উপত্যকা সফরের ঘটনাক্রম এবং অসমিয়া ভাষা বাধ্যতামূলকভাবে বরাকের পড়ুয়াদের শিখতে হবে বলে যে ফরমান জারি করা হয়েছে তার তীব্র বিরোধিতা করা হয়। বলা হয়েছে, বরাকের মানুষ অসমিয়া বিরোধী নন। তবে অসম ভাষা আইন অনুসারে বরাক উপত্যকার আঞ্চলিক সরকারি ভাষা বাংলা। রাজ্য সরকারের শিক্ষা সংক্রান্ত গেজেট নোটিফিকেশন এবং মন্ত্রিসভার গৃহীত সিদ্ধান্ত মর্মে বরাকের পঠন-পাঠনে বাংলা অব্যাহত থাকবে বলে ইতিমধ্যেই বিধানসভার ভেতরে ও বাইরে ঘোষণা করা হয়েছে । এই ঘোষিত সরকারি অবস্থান থেকে সরে এসে যদি বাঁকাপথে বাধ্যতামূলকভাবে অসমিয়া শেখানোর ব্যবস্থার চেষ্টায় পরমানন্দ রাজবংশীরা মেতে উঠেন তবে সমস্ত রাজনীতি ঊর্ধ্বে উঠে এই উপত্যকার মানুষ একযোগে তার বিরোধিতা করবেন।
বৈঠকে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি বিভাগ এবং আদালতে বরাকের বাংলা মাধ্যমে পড়ুয়া কর্মপ্রার্থীদের অসমিয়া ভাষাজ্ঞান পরীক্ষা দেওয়া বাধ্যতামূলক করার চেষ্টায় গভীর উৎকণ্ঠা ব্যক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এর ফলে বরাকের ছেলেমেয়েদের রাজ্য সরকারের চাকরির দুয়ার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নীরব থাকায় সদস্যরা বিষয় ব্যক্ত করেন।
সাম্প্রতিককালে রাজ্যে বাঙালি বিদ্বেষী প্ররোচনা দেওয়ার যে চেষ্টা চলছে এবং সিপাঝারের গরুখুটিতে যে অমানবিক ঘটনা ঘটেছে বরাকবঙ্গ তার নিন্দা জানিয়েছে। বলা হয়েছে, সহনশীলতার পথ থেকে রাজ্য সরে এলে সেটা কারো জন্য মঙ্গলদায়ক হবে না। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা যে সমৃদ্ধ অসমের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সেটা সম্মিলিত তৎপরতায় বাস্তবায়িত হতে পারে। এজন্য শান্তি ও সম্প্রীতি প্রাথমিক শর্ত বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে বরাকবঙ্গ।