Barak UpdatesCulture
বাকনকরজির জন্ম শতবর্ষে সংস্কার ভারতীর অনুষ্ঠান শিলচরে
৮ জুলাই : পদ্মশ্রী ড. বিষ্ণু শ্রীধর বাকণকরজির জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে শিলচর বঙ্গভবনে সংস্কার ভারতী দক্ষিণ আসাম কমিটি এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ৬ জুলাই প্রথমপর্বের অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তি সহ শহরের এবং শহরের বাইরের অনেক শিল্পীগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করে। শুরুতে স্বাগত ভাষণ দেন সংস্কার ভারতীর পূর্বোত্তর সম্পাদক প্রসেনজিৎ রায়চৌধুরী। প্রদীপ প্রজ্জ্বোলন করেন তিন ভাষিক গোষ্ঠীর শিল্পী বাংলাভাষী সুস্মিতা চক্রবর্তী, বিষ্ণুপ্রিয়া মিতালি সিনহা ও মৈথেই মণিপুরি শিল্পী নীরু শর্মা। একেই সঙ্গে ছিল সমবেত ধেওগীত। পরিচালনায় যুথিকা দত্তবণিক।
অন্যান্য অনুষ্ঠানে সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করেন সমীর দাসচৌধুরী ও সম্প্রদায়। একক নৃত্য পরিবেশন করেন সুস্মিতা চক্রবর্তী। সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিলচর ইয়ুথ কয়্যারের শিল্পীরা। দ্বিতীয় পর্বে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-এর জন্মদিন উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ। ড. বিষ্ণু শ্রীধর বাকণকরজীর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে সংস্কার ভারতীর সর্বভারতীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অভিজিৎ গোখলে বক্তব্য রাখেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সর্বভারতীয় সম্পাদক অশোক তেওয়ারী, ধনঞ্জয় কোশে, দীপক বক্সি, করুণাময় পাল এবং যোগেন সিনহা। অনুষ্ঠানের ফাঁকে অতিথিরা বই উন্মোচন করেন। অতিথিদের মঞ্চে সন্মান জানায় আয়োজক কমিটি।
তৃতীয় পর্বে কার্তিক রায়ের পরিচালনায় সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করেন লক্ষীপুর সংস্কার ভারতীর শিল্পীরা। সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন মণিমালা নৃত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ছিল নবনীতা দেবের পরিচালনায় নৃত্যালয়ম-এর শিল্পীদের সমবেত নৃত্য, জিরিঘাট সংস্কার ভারতীর ঝুমুর নাচ, আইরংমারা সংস্কার ভারতীর ধামাইল নৃত্য সহ যুথিকা দত্তবণিক, ঝিমি রায় এবং অনামিকা দেবের একক সঙ্গীত। শিল্পীদের যন্ত্রসঙ্গীতে সহযোগিতা করেন তবলা ও বাংলা ঢোলে সন্তোষ চন্দ, পরিমল দাস, কীবোর্ডে বিপ্রদীপ রায় ও প্রদীপ চক্রবর্তী, অক্টোপ্যাডে নির্মল রায়, দোতারায় শিরলাল দাস। সঞ্চালনায় ছিলেন সব্যসাচী পুরকায়স্থ ও নবনীতা দেব। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন দক্ষিণ আসামের সাংগঠনিক সম্পাদক বিশ্বতোষ দেব এবং প্রসেনজিৎ রায়চৌধুরী।
আয়োজক কমিটির পক্ষে জানানো হয়, সর্বভারতীয় স্তরে এই অনুষ্ঠান হবে বছরব্যাপী। তবে শিলচরে এই প্রথম। চলবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৪ এপ্রিল সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। বিশ্বতোষ দেব জানান, দক্ষিণ আসাম কমিটি বর্ষব্যাপী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও কলাসাধক সঙ্গমের আয়োজন করেছে। দক্ষিণ আসামের চারটি জেলা কাছাড়, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি সহ ডিমাহাসাও-এ এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। ইচ্ছুক প্রতিযোগীরা সংস্কার ভারতীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনুরোধ রেখেছেন।
উল্লেখ্য, ডাঃ বিষ্ণু শ্রীধর বাকণকরজি সংস্কার ভারতীর প্রথম অখিল ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তিনি দেশের একজন বিশিষ্ট পুরাতত্ত্ববিদও ছিলেন। ভোপালের কাছে ভীমভেটকার প্রাচীন শিলাচিত্র তিনি অন্বেষণ করেন। এই চিত্রগুলি আনুমানিক ১,৭৫,০০০ বছরের পুরনো। ১৯৭৫ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সন্মানে ভূষিত করে। শ্রী বাকণকরজী সারা জীবন ভারতবর্ষের প্রাচীন সংস্কৃতি ও সভ্যতা নিয়ে গবেষণা করে বিশ্বের সন্মুখে ভারতের গৌরবশালী প্রাচীন সভ্যতাকে তুলে ধরেছেন। তিনি অদৃশ্য সরস্বতী নদীর উপর গবেষণা করে সরস্বতী নদীর গতিপথও নির্ণয় করেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘে যোগদানের পর আদিবাসী অঞ্চলের লোকেদের সামাজিক ও শৈক্ষিক বিকাশের জন্য প্রায় ৫০ বছর কাজ করেছেন। সংস্কার ভারতী এই বিশ্বখ্যাত কলাসাধককে জন্মশতবর্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে সর্বভারতীয় স্তরে বর্ষব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।