NE UpdatesBarak UpdatesHappeningsCultureBreaking News
বাংলা সাহিত্য সভা, অসম’-এর উদ্যোগে বাইশে শ্রাবণ উদযাপন
ওয়েটুবরাক, ১০ আগস্ট : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মহাপ্রয়াণ দিবস উপলক্ষে ‘বাংলা সাহিত্য সভা, অসম’-এর উদ্যোগে সংগীতে-নৃত্যে-কথায়-কবিতায় কবিকে স্মরণ করা হল। কোভিড প্রটোকল মেনে এই আয়োজন ছিল ভার্চুয়ালি। ছিল দিনভর নানা রকমের আয়োজন। সন্ধ্যায় ব্রহ্মপুত্র ও বরাক–উভয় উপত্যকার স্বনামধন্য শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন। ‘বাংলা সাহিত্য সভা, অসম’-এর সাংস্কৃতিক সম্পাদক দুই উপত্যকার দুই সুপরিচিত শিল্পী, যথাক্রমে দেবাশিস ভট্টাচার্য (ব্রহ্মপুত্র) ও বিক্রমজিৎ বাউলিয়া (বরাক) অশেষ যত্নে এই অনুষ্ঠানটি সাজিয়েছিলেন। তাঁদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অসমের অবাঙালি শিল্পীরাও রবীন্দ্রস্মরণ করেন নানাভাবে।
এদিন, উত্তরপূর্বের অন্যতম বিখ্যাত সরোদিয়া তরুণ কলিতা সরোদে “এসো শ্যামল সুন্দর” বাজিয়ে শোনান। শিল্পী জিতেন বসুমতারি এদিন প্রথমে বড়ো ও পরে বাংলায় কবির “আমি কী গান গাব যে, ভেবে না-পাই” গেয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করে তোলেন ভার্চুয়াল শ্রোতা-দর্শকদের। রবীন্দ্রনাথ যে কেবল বাঙালির নন–সেই বার্তাটি এদিনের অনুষ্ঠানে বারবার উঠে আসে।
যেমন, নামনি অসমের নলবাড়ির অসমিয়া শিল্পী রাজশ্রী দাস বাংলায় গেয়ে শোনান~”সখী ভাবনা কাহারে বলে”। কিংবা, বেণুধর কলিতার অসমিয়া অনুবাদে “আগুনের পরশমণি” সমবেতকণ্ঠে অসমিয়া শিল্পীরা পরিবেশন করেন। তবলা, সেতার ও সামগ্রিক পরিচালনায় ছিলেন শিল্পীভগ্নীদ্বয় রূপালি ও জোনালি কেঁওট।
এদিন, বাংলাদেশ থেকে বিশেষ আমন্ত্রিত শিল্পী ছিলেন মুক্তা মজুমদার। তিনি গেয়ে শোনান বহুশ্রুত “শ্রাবণের ধারার মতো”। এই গানটি উজান অসমের তিনসুকিয়ার শীলা দে সরকারও গেয়ে শুনিয়েছেন সেদিন। বরাকের সুপরিচিত বাচিকশিল্পী সংগীতা দত্ত চৌধুরী ও অনির্বাণজ্যোতি গুপ্ত আবৃত্তি করে শোনান। সংগীতার কণ্ঠে “এমনদিনে তারে বলা যায়” দারুণ লেগেছে। শবনম মেঘালি মধ্য অসমের নগাঁও থেকে শান্তিনিকেতনের সংগীতভবনের ছাত্রী। গাইলেন “নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে।”
গোটা অসমের বিভিন্ন জনপদ যেন এদিন উঠে এসেছিল। বঙাইগাঁওর রাজু দাস শোনালেন “আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাঁধনে”। আবার লামডিঙের শিল্পী প্রিয়াঞ্জলি দাসের কণ্ঠে শোনা গেল ” আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে”।
‘বাংলা সাহিত্য সভা, অসম’-এর আসরে সেদিন তারকাশিল্পীদেরও সমাবেশ ছিল চোখে পড়ার মতো। জিটিভি-খ্যাত তেজপুরের জয়িতা সেন যেমন শোনালেন “নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে”, তেমনি জি-বাংলা-খ্যাত পাণ্ডুর চন্দ্রা শিকিদারের কণ্ঠে শোনা গেল “দিবস রজনি আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি”।
গানে-গানে এদিন সবার মন জয় করেছেন গুয়াহাটির পার্বতী ভট্টাচার্য (“পথহারা তুমি পথিক”), লামডিঙের অহেলি দাস (“দাঁড়াও মন অনন্ত প্রভাত মাঝে”), শিলচরের দেবশ্রী দত্ত (“মহারাজ, একী সাজে”), গুয়াহাটির অর্ঘ্য মহাপাত্র (“আহা তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা”), কোকরাঝাড়ের সুপ্রিয় সূত্রধর (“আমার পরান যাহা চায়), মধ্যপ্রদেশের রায়পুরের বাসিন্দা ইরাবান হালদার (“দাঁড়িয়ে আছো”) প্রমুখ।
এই ব্যতিক্রমী বাইশে শ্রাবণে প্রত্যন্ত এলাকার ক্ষুদে আনকোরা কিছু উজ্জ্বল মুখও দেখা গেল। যমুনামুখের অনামিকা চন্দের ‘স্মরণ’ কবিতাটির পাশাপাশি ছোট্ট পল্লিবালিকা মেহেরুন সুলতানা খুব সুন্দর করে শোনাল “প্রার্থনা”।
বাচিক শিল্পী শিবশংকর দাসের মায়াময় ভরাট কণ্ঠ ছিল উপরি পাওনা। ছিল অনেকগুলো নৃত্য। দেবাশিস সাহা ও জয়ত্রী সরকার “সেদিন দুজনে”-র সঙ্গে অসম্ভব সুন্দর নাচলেন। রামকৃষ্ণনগরের রাই চন্দ ও স্নেহা মল্লিকের নৃত্য এবং বঙাইগাঁওর ‘ভানুসিংহের পদাবলি’-র ‘গহনকুসুমকুঞ্জ মাঝে’-র নৃত্যটি দারুণ উপভোগ্য ছিল। যন্ত্রসংগীতে রবীন্দ্রসুর (“যদি তোর ডাক শুনে কেউ না-আসে”) বাজিয়ে মাত করেছেন পিতাপুত্র কুণাল ভট্টাচার্য (মেন্ডোলিন) ও কৌস্তভ ভট্টাচার্য(গিটার)।
সেদিন সকাল থেকেই চিত্রীদের আঁকা রবীন্দ্রপ্রতিকৃতি দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর দিনভর অংশগ্রহণ করেছেন স্বরচিত কবিতায় গুয়াহাটির বিমলেন্দু চক্রবর্তী ও শিলচরের শর্মিষ্ঠা দেব পুরকায়স্থ, গুয়াহাটির সুব্রত ধর(আবৃত্তি), দিগরখালের সুদীপ্তা দাস(নৃত্য), গুয়াহাটির সুচয়িতা চক্রবর্তী (সংগীত), রামকৃষ্ণনগরের সঞ্চিতা নাগ(আবৃত্তি), বঙাইগাঁওর শ্রেষ্ঠা ঘোষ(নৃত্য), অরুণাচলের ক্ষুদে শিল্পী নীরাঞ্জনা দেব(নৃত্য), শিলচরের তানিশা চক্রবর্তী (নৃত্যে ও সংগীতে), করিমগঞ্জের অনয়া সিংহ (নৃত্য), রামকৃষ্ণনগরের সৌম্যজ্যোতি দেব (আবৃত্তি), অদ্রিজা কর (নৃত্য), শিলচরের ব্রততী দেব পুরকায়স্থ (সংগীত) ও শিবাজি দেব পুরকায়স্থ (তবলা বাদন), গুয়াহাটির অভিলাষা চক্রবর্তী (সংগীত) প্রমুখ।
দেবাশিস ভট্টাচার্য মাউথ অর্গানে শোনালেন “মোর ভাবনারে কী হাওয়ায় মাতালো দোলে মন দোলে অকারণ হরষে।” বিক্রমজিৎ শোনালেন “আকাশভরা সূর্য-তারা”।