NE UpdatesHappeningsCulture
বাংলা সাহিত্য সভার রাজ্য কার্যালয় উদ্বোধন ও প্রতিবাদী সভা
ওয়ে টু বরাক, ২৭ আগস্ট : এক অভূতপূর্ব প্রতিবাদী সভার সাক্ষী হয়ে রইল গুয়াহাটি। বাংলা সাহিত্য সভার রাজ্য কার্যালয় উদ্বোধন হলো গত রবিবার। সেইসঙ্গে সাম্প্রতিক ভয়ংকর ঘটনাবলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সভাও ছিল কার্যসূচিতে।
সভার শুরুতেই গর্জে উঠেছেন পদ্মশ্রী অজয় দত্ত। বাংলাদেশ, অসম ও পশ্চিমবঙ্গের নারকীয় সভ্যতা বিরোধী ঘটনাবলির উল্লেখ করে তিনি বিস্ফোরক মন্তব্য করেন, ‘এমন দুর্দিনে শখের গানবাজনা বা সাহিত্য করছে কারা ? এখন তো সময় প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের। সভ্যতার সংকটে শিল্পী সাহিত্যিকেরা মানুষকে জাগান। সেটাই সবচেয়ে পবিত্র কর্ম। অসমিয়া বাঙালির একটা সুমধুর সম্পর্ক ছিল। সেই ধারাকে আবারও আনতে হবে।”
এরপর একের পর এক বিশিষ্টজনেরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। কে ছিলেন না এদিনের সভায়? রীতিমতো চাঁদের হাট বসেছিল বাংলা সাহিত্য সভার নতুন কার্যালয়ে। ছিলেন ড° উষারঞ্জন ভট্টাচার্য, দৈনিক যুগশঙ্খর কর্ণধার বিজয়কৃষ্ণ নাথ, কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর রমেশচন্দ্র ডেকা, অসম প্রকাশন পরিষদের সচিব প্রমোদ কলিতা, চিন্তাবিদ দেবব্রত চৌধুরী, গুয়াহাটির ডেপুটি মেয়র স্মিতা রায় দাস, অন্নপূর্ণা ইন্ডাস্ট্রির কর্ণধার সুবীর ঘোষ, সাউথ পয়েন্ট স্কুলের অধ্যক্ষ কৃষ্ণাঞ্জন চন্দ প্রমুখ।
এ দিন রিহাবাড়ির হরমোহন দাস পথের চার নম্বর গৃহ “অন্নদা ভবন”-এর ওপর তলায় বাংলা সাহিত্য সভার রাজ্য কার্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন পদ্মশ্রী অজয় দত্ত। এরপর এই মহতী গাম্ভীর্যপূর্ণ সভায় বক্তারা অসমিয়া-বাঙালির সম্পর্ক ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। ড. উষারঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “আমার মন ভারাক্রান্ত। বাংলাদেশে পশ্চিমবঙ্গে ও অসমে যা চলছে এর পরিণতি হয়তো আরও ভয়াবহ। এক প্রচণ্ড দুর্যোগের আবহ চারপাশে। আমাদের আরও সংঘবদ্ধ হতে হবে।”
দৈনিক যুগশঙ্খ-র কর্ণধার বিজয়কৃষ্ণ নাথ তাঁর জীবনের নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “দেশভাগের ফল আমরা ভুগছি। মৌলবাদীরা তখনও সক্রিয় ছিল। এখন আরও হয়েছে। অসমকে বাঁচানো দরকার। সকলে মিলে আমরা ভয়ংকর আগ্রাসন রুখতে পারব।” বাংলা সাহিত্য সভা অসমের মধ্যে মেলবন্ধনের যে বিরাট কার্যসূচি হাতে নিয়েছে, তিনি তার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
অসম প্রকাশন পরিষদের সচিব প্রমোদ কলিতা বলেন, ” অসমের সার্বিক জীবনে অসমিয়া বাঙালির সম্পর্ক আরও নিবিড় হোক। এটা সময়ের দাবি।” কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর রমেশচন্দ্র ডেকা বলেন, ” বাংলা সাহিত্য অত্যন্ত উন্নত একটি সাহিত্য। অসমের বাঙালিরা বাংলার পাশাপাশি অসমিয়া চর্চা করুন। এতে সবার মঙ্গল।” অন্নপূর্ণা ইনডাস্ট্রির কর্ণধার সুবীর ঘোষ গ্লোবালাইজেশনের যুগে কীভাবে সাহিত্যকেও যুগপোযোগী করে মানুষ ও সমাজের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, সে-বিষয়ে আলোকপাত করেন।
ডেপুটি মেয়র স্মিতা রায় দাস অসমিয়া ও বাঙালি সমাজের যৌথ প্রয়াসের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সভা পরিচালনা করেন সভাপতি খগেনচন্দ্র দাস ও সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ড. প্রশান্ত চক্রবর্তী। ড. চক্রবর্তী উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ কলকাতার ঘটনার সময় গুয়াহাটিতে একদল শখের বাঙালি শিল্পী গানবাজনায় মত্ত ছিল। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিক্ষেপ করায় একদল তথাকথিত শিল্পী তাঁকে নির্বিচারে গালিগালাজ করেছিল ও চরিত্র হনন তথা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। তিনি বলেন, পদ্মশ্রী অজয় দত্ত ও ড. উষারঞ্জন ভট্টাচার্যের তীব্র বক্তব্য এইসব শৌখিন লোকদের উপযুক্ত জবাব ও সচেতনতার সাবধানবাণী।
সভার শেষে মৌসুমি শিকদার ও কটনের ছাত্রী শর্মিষ্ঠা গুহর নেতৃত্বে ড. ভূপেন হাজরিকার “আহ আহ ওলাই আহ সজাগ জনতা” সমবেত কণ্ঠে গীত হয়। আয়োজনের সামগ্রিক দায়িত্বে ছিলেন জয়া নাথ, অসীম সরকার ও তুহিন কাশ্যপ দেব প্রমুখ।