NE UpdatesHappeningsBreaking News
বাংলা সাহিত্য সভার বিজয়া সম্মেলনে সমন্বয়ের কথা বললেন রাজ্যপাল
ওয়েটুবরাক, ৩১ অক্টোবর : বাংলা সাহিত্য সভা, অসম-এর উদ্যোগে গুয়াহাটির মালিগাঁওয়ের পাণ্ডবনগরস্থিত কর্মশ্রী হিতেশ্বর শইকিয়া প্রেক্ষাগৃহে গত ২৯ অক্টোবর “বিজয়া সম্মেলন” অনুষ্ঠিত হল। এই বিজয়া সম্মেলনে মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অসমের রাজ্যপাল গুলাব চান্দ কাটারিয়া। বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে ছিলেন গুয়াহাটিস্থিত বাংলাদেশের সহকারী উচ্চায়ুক্ত রুহুল আমিন, পদ্মশ্রী অজয় দত্ত, অসম সরকারের ভাষিক সংখ্যালঘু উন্নয়ন পর্ষদের অধ্যক্ষ শিলাদিত্য দেব।
এদিন সভার উদ্যোগে “বিজয় দিবস” রূপে গণ্য করে অসমের সামাজিক-সাংস্কৃতিক- সাহিত্যিক কল্যাণকর্মে বিশেষ অবদানের জন্য “বিজয় সম্মাননা” প্রদান করা হয়। এই সম্মাননার তিনটি পর্যায় ছিল। যাঁরা প্রয়াত, তেমন ব্যক্তিবর্গের পুণ্য স্মৃতিতে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয়। এবারে যোরহাটের প্রয়াত তরণীমোহন দেব আর ভৌরিলাল আগরওয়ালকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। দেব পরিবারের হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করেন তাঁর পৌত্র তুহিন কাশ্যপ দেব ও ভৌরিলাল আগরওয়ালের হয়ে মরণোত্তর পুরস্কার গ্রহণ করেন তাঁর পুত্র বিকাশ আগরওয়াল।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ছিল বর্তমান কৃতী ব্যক্তিবর্গ। এদিন যাঁদের বিজয় সম্মাননা প্রদান করা হয় তাঁরা হলেন— নির্মলেন্দু চট্টোপাধ্যায়, কৃষ্ণাঞ্জন চন্দ, কমল দত্ত, রবিশংকর মজুমদার, ডা. সৈকত পাত্র, অজন্ত তালুকদার ও মৌসুমি বাগচি।
তৃতীয় পর্যায়ে ছিল সংস্থা হিসেবে সম্মাননা প্রদান। এটি দেওয়া হয় সংস্কৃতভারতী, দক্ষিণ অসম প্রান্তকে। সংস্থার হয়ে অর্জুন নাথ সেটা গ্রহণ করেন।
এদিন রাজ্যপাল তাঁর ভাষণে বিজয়া সম্মেলন ও নবরাত্রির তাৎপর্য বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বাংলা সাহিত্য অসমের সমন্বয়মূলক কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বাংলা সাহিত্য সভা সমগ্র অসমের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সৌহার্দ্য, মৈত্রী, সমন্বয় ও দেশভাবনার প্রসারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য কাজ করে চলেছে। বিশিষ্ট অতিথি সহকারী উচ্চাযুক্ত রুহুল আমিন তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বত্রিশ হাজার দুর্গোৎসবের মধ্য দিয়ে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণ ও মিলনের ছবি তুলে ধরেন। সেইসঙ্গে বাংলা সাহিত্য সভার এই আয়োজনের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেন তিনি। সকলকে স্বাগত জানান বাংলা সাহিত্য সভার রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ড. প্রশান্ত চক্রবর্তী। তিনি বলেন, মাতৃভাষা মাতৃসংস্কৃতি বিসর্জন দিয়ে কোনো জাতির অস্তিত্ব থাকতে পারে না। তিনি আরও বলেন, বাংলা সাহিত্য সভা সব ভাষাকেই সম্মান করে এবং নিজেদের ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য দায়বদ্ধ। অনুষ্ঠানে রামভজন পরিবেশন করেন টুকটুক ভট্টাচার্য। দ্বিতীয় পর্বে ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে বরাকের বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী সুমিতা ভট্টাচার্য একের পর এক গানে মাতিয়ে তোলেন। বাচিকশিল্পী অনির্বাণজ্যোতি গুপ্তর গম্ভীর কণ্ঠে আবৃত্তি সকলকে আপ্লুত করে। বরাকের কন্যা তথা গুয়াহাটির বধূ মাল্যশ্রী চৌধুরীর নৃত্যানুষ্ঠান দর্শক শ্রোতাদের চিত্ত জয় করে। এদিন সারা অসমের জ্ঞানীগুণী শিল্পী সাহিত্যিক সুশীল সমাজের বহু কৃতবিদ্য মানুষ অংশগ্রহণ করেন। গুয়াহাটির বিশিষ্ট শিল্পীদের নাচে-গানে গোটা পরিবেশ আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। সব শেষে সুমিতা ভট্টাচার্য যখন ধামাইল ধরেন তখন দলে দলে নারীরা ধামাইলে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
বিজয়া সম্মেলন শেষে আয়োজকদের পর্যালোচনা, “বাংলা ভাষায় লেখা বিশাল শোভিত মঞ্চে জমকালো অনুষ্ঠানটি ছিল সর্ব অর্থে সাহসী পদক্ষেপ। কেননা, এই প্রথম অসমের সমস্ত অঞ্চলের বাঙালিদের জড়ো করে এরকম একটি বিজয়া সম্মেলনী অনুষ্ঠিত হল। এছাড়া, এই প্রথম অসমের দুই উপত্যকার বাঙালিদের বিজয়া সম্মেলনে স্বয়ং রাজ্যপালের অংশগ্রহণ ছিল খুব তাৎপর্যপূর্ণ। উল্লেখ্য যে, দুর্গাপূজার মরশুমে অসমের বিভিন্ন জায়গায় বাংলা ভাষার ওপর একটি প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের আক্রমণ ঘটে। বাংলা সাহিত্য সভা ইতিমধ্যে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি করেছে। এরপরও খোদ গুয়াহাটিতে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির এমন আয়োজন সত্যিই সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ রূপে চিহ্নিত হয়ে রইল।”