India & World UpdatesHappeningsBreaking News
বাংলাদেশে সংরক্ষণ বিরোধী বিক্ষোভ : সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যু
ওয়েটুবরাক, ১৮ জুলাই : বাংলাদেশে সংরক্ষণ বিরোধী বিক্ষোভ সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই পড়ুয়া। বয়স ৩০-এর নীচে। কারও গুলির আঘাতে, কারও ধারালো অস্ত্রের কোপে মৃত্যু হয়েছে। একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রেরও মৃত্যু হয়েছে বৃহস্পতিবার।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে বৃহস্পতিবার চার জনের দেহ আনা হয়। তাঁদের মধ্যে কারও ছররা গুলির আঘাতে, কারও ধারালো অস্ত্রের কোপে মৃত্যু হয়েছে। কারও মাথায় রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন হাসান মেহেদী, তিনি পেশায় সাংবাদিক। ছররা গুলির আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, ৩০ বছরের ওয়াসিম (মাথায় আঘাত), আনুমানিক ২০ থেকে ২২ বছর বয়সি ব্যবসায়ী নাজমুল (ধারালো অস্ত্রের কোপ) এবং ২০ বছরের মহম্মদের (ছররা গুলি) মৃত্যু হয়েছে। নরসিংদীতে ১৫ বছরের তাহমিদ তামিম, ২২ বছরের ইমন মিঞার মৃত্যু হয়েছে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে। চট্টগ্রামের হিংসায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৮ বছর বয়সি মহম্মদ ইমাদের, তিনি উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। মৃত্যু হয়েছে ২২ বছরের আরও এক যুবকের, যাঁর পরিচয় জানা যায়নি। নিহতদের মধ্যে ১৩ জনই ঢাকার।
সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ এবং আওয়ামি লিগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে ছাত্রছাত্রীদের। পুলিশের বিরুদ্ধে পরিস্থিতি সামাল দিতে গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে। আবার সংঘর্ষে কয়েক জন পুলিশকর্মীও জখম হয়েছেন। দিকে দিকে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের হিংসায় আহতের সংখ্যা শতাধিক। শেখ হাসিনা সরকার বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নীতিগত ভাবে সহমত। তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসতেও চেয়েছেন দেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এর মাঝে বাংলাদেশের আদালতে বৃহস্পতিবার সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলাটি ওঠে। আগামী রবিবার শুনানির দিন ধার্য করেছে বাংলাদেশের আদালত।
বিক্ষোভের মাঝে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ব্যাহত হয়েছে যান চলাচল। ঢাকায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মেট্রো পরিষেবা। দেশ জুড়ে ইন্টারনেট ব্যবস্থাতেও অশান্তির প্রভাব পড়েছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়ে দিয়েছেন, সমাজমাধ্যম ব্যবহার করে কিছু মানুষের গুজব এবং অপপ্রচার রুখতে এবং জাতীয় সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে ইন্টারনেটে রাশ টানা হয়েছে। তবে ইন্টারনেট পরিষেবা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন অংশে তা ধীর গতিতে চলছে।
বাংলাদেশের এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতরও চলছে। সরকারের নীতির বিরোধিতা করে এবং পুলিশের আচরণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরোধী নেতৃত্ব। অন্য দিকে, শাসকদল আওয়ামি লিগের অভিযোগ, পড়ুয়াদের আন্দোলনকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে বিএনপি-জামাত। তাই এই আন্দোলন শুধু ছাত্র আন্দোলনের পর্যায়ে আর নেই। শাসকদলের নেতা-কর্মীদের রাস্তায় নেমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের সড়ক পরিবহণ এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বাংলাদেশে অশান্তির সূত্রপাত সংরক্ষণের নিয়ম নিয়ে। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সে দেশে মোট ৫৬ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল এবং ৪৪ শতাংশ আসন সাধারণের জন্য নির্ধারিত ছিল। এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত পদ ছিল। এর আগে ২০১৮ সালে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা নির্দেশ জারি করে মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং জেলা খাতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বাতিল করে দেন। রাখা হয় শুধু জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ সংরক্ষণ। তখনকার মতো আন্দোলনে ইতি টানেন ছাত্রেরা। পরে সাত জন মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ২০১৮-র সংরক্ষণ বাতিলের নির্দেশনামার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১-এ হাই কোর্টে যান। গত ৫ জুন হাই কোর্ট রায় দেয়, হাসিনা সরকারের নির্দেশ অবৈধ। নির্দেশনামা বাতিলের অর্থ ফের আগের মতো সংরক্ষণ ফিরে আসে। তার প্রতিবাদেই ফের আন্দোলনে নামেন ছাত্ররা। তাঁরা দাবি করেন, স্থায়ী ভাবে সরকারি নিয়োগ থেকে সব ধরনের কোটা ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। হাসিনা সরকার হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছে। রবিবার সেই মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।