Barak UpdatesHappeningsCultureBreaking News
বরাক মূলের কিংবদন্তি সুষেণ স্মরণ শিলচরে
ওয়েটুবরাক, ৭ মে: সানুরাগ শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হলো বরাক মূলের কিংবদন্তি ভাস্কর সুষেণ ঘোষকে৷ সম্প্রতি শান্তিনিকেতনে প্রয়াত হয়েছেন দেশবন্দিত এই ভাস্কর। শিল্পীর প্রয়াণে শোকের ছায়া এ অঞ্চলের শিল্পী মহলেও। শনিবার তাই ‘স্মরণে, মননে ভাস্কর সুষেণ ঘোষ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করল বরাক ভাস্কর সংস্থা ‘রূপকার’। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এ অঞ্চলের বিশিষ্ট শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতি কর্মী ও চারুকলার ছাত্র-ছাত্রীরা, গবেষকরা।
শনিবার সন্ধ্যায় তারাপুরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সুষেণ ঘোষের জীবন ও সৃষ্টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বিশিষ্ট বক্তারা। একসময় শিক্ষক হিসেবে কাছ থেকে দেখতে পাওয়া আজকের সুপ্রতিষ্ঠিত বহু শিল্পী সুষেণ ঘোষকে নিয়ে তাদের স্মৃতিকথা বয়ান করেন। ‘তুমি রবে নীরবে..’ রবীন্দ্র গান দিয়ে অনুষ্ঠানকে শুরুতেই ভাব, গাম্ভীর্যে মুড়ে দেন শিল্পী রাজু নন্দী। এর পরই এক প্রান্তিক অঞ্চলের ছেলের ভারতখ্যাত শিল্পী সুষেণ ঘোষ হয়ে ওঠা, কিভাবে বরাকের প্রকৃতি, পরিবেশ এবং শান্তিনিকেতনী আবহ তার সৃষ্টিকে গতি দিয়েছে সে ব্যাপারে আলোকপাত করেন ‘রূপকার’ সভাপতি তথা আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যকলার সহকারী অধ্যাপক ড. গণেশ নন্দী । সুষেণ ঘোষের ভাস্কর্য নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছিলেন প্রতিভাবান ভাস্কর তথা ‘রূপকার’ সম্পাদক ড. বিনয় পাল। তিনি সুষেণের কাজের ধরন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এরপর নিজের শিল্পী দাদাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন কাছাড় কলেজের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা ড. সুমিতা ঘোষ। দায়িত্বশীল দাদা থেকে ব্যতিক্রমী শিল্প ব্যক্তিত্ব — বিভিন্ন পরিসর নিয়ে বহু অজানা তথ্য তুলে ধরেন তিনি। ১৯৭৯ থেকে কলাভবনে পড়ার সময় প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর সুষেণ সান্নিধ্যে কাটিয়েছিলেন শিল্পী বিমলেন্দু সিনহা। একজন শিক্ষক, একজন ব্যতিক্রমী শিল্পব্যক্তিত্ব হিসাবে নিজের অভিজ্ঞতার নিরিখে সুষেণ ঘোষের মূল্যায়ন করেন তার বক্তব্যে। সুষেণ ঘোষের সরাসরি ছাত্র ছিলেন এ অঞ্চলের বিশিষ্ট ভাস্কর ড. স্বপন পাল। শিক্ষকের সঙ্গে অন্তরঙ্গতা ও দ্বান্দ্বিকতার অমূল্য মুহূর্তগুলির স্মৃতিচারণ করেন তিনি তাঁর বক্তব্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যকলার বিভাগীয় প্রধান ড. নির্মল কান্তি রায় তাঁর বক্তব্যে ব্রিটিশ ভাস্কর হেনরি ম্যুর সহ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সুসম্পর্ক, শিল্পজগতে সুষেণ ঘোষের প্রকৃত অবস্থান নিয়ে আলোচনা করেন। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যকলার আরও দুই অধ্যাপক রাজকুমার মাজিনদার এবং সোমাদিত্য দত্ত কিভাবে শান্তিনিকেতন পরম্পরা সুষেণ ঘোষের মত ব্যক্তিত্বদের তৈরি করতে সাহায্য করল, সে ব্যাপারে আলোকপাত করেন । এছাড়া প্রত্যেক বক্তাই তাদের বক্তব্যে বলেন যে সুষেণ ঘোষের প্রয়াণে এ অঞ্চলের শিল্প প্রজন্ম সত্যিকার অর্থেই গর্ব করার মতো এক নক্ষত্রকে হারালো । তবে তিনি বেঁচে থাকবেন তার সৃষ্টিতে, অবদানে সবার কাছে অনুপ্রেরণার আলোকবর্তিকা হয়ে।