ওয়েটুবরাক, ৮ জানুয়ারি : “১৯৬১ সালের সংশোধিত রাজ্যভাষা আইনের ৫ নং ধারায় পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছে, বরাক উপত্যকায় আঞ্চলিক সরকারি ভাষা বাংলা। এ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে জল ঘোলা করা হচ্ছে।” স্পষ্ট ভাষায় এই অভিমত ব্যক্ত করেন বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সমিতির সহসভাপতি তথা আইনজীবী ইমাদউদ্দিন
বুলবুল।
বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা দিবসে শনিবার শিলচর বঙ্গভবনে রাজ্য ভাষা আইন প্রসঙ্গে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। তাতে আলোচক হিসেবে আইনজীবী বুলবুল জনপ্রতিনিধিদের আইনের দিকগুলো ভালোভাবে পর্যালোচনা করার আবেদন রাখেন । তিনি বলেন, রাজ্য ভাষা আইনের ভুল ব্যাখ্যা করে বরাকের ভাষার অধিকার হরনের চেষ্টা হচ্ছে।
অপর আলোচক অধ্যাপক জয়দীপ বিশ্বাস পরিষ্কারভাবেই বলেন, অসম সরকারি ভাষা আইন একটু লক্ষ্য করলেই স্পষ্ট হয়, তাতে কোনও জটিলতা নেই। এই আইনের ৫ নং ধারায় বলা হয়েছে, ৩ নম্বর ধারা অক্ষুন্ন রেখে কাছাড় জেলায় (এখন বরাক উপত্যকা) সরকারি কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার হবে। আর ৩ নম্বর ধারায় রয়েছে, ভারতীয় সংবিধানের ৩৪৬ ও ৩৪৭ নম্বর ধারা অক্ষুন্ন রেখে অসমের সরকারি কাজে অসমিয়া ভাষা ব্যবহৃত হবে। সংবিধানের ৩৪৬ এবং ৩৪৭ ধারাও পড়ে শোনান তিনি। সেখানে মূলত ভারতের সমস্ত সরকারি কাজে হিন্দিভাষার ব্যবহারের কথাই বলা হয়েছে। ”অক্ষুন্ন রেখে” শব্দবন্ধে জোর দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বিধানসভায় লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন, ৩ নম্বর ধারা অক্ষুন্ন রেখে বরাক উপত্যকার সরকারি কাজে অসমিয়ার সঙ্গে বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হবে। জয়দীপের প্রশ্ন, তাহলে কি সংবিধানের ৩৪৬ ও ৩৪৭ ধারা অক্ষুন্ন রেখে অসমে অসমিয়াটা বাধ্যতামূলক নয়, শুধু হিন্দির সঙ্গে সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আইনজীবী বুলবুল জানান, “অক্ষুন্ন রাখা” শব্দবন্ধ আইনি পরিভাষা মাত্র। সমস্ত আইনের শুরুতেই বলা হয়, পূর্ববর্তী আইন বা ধারাগুলিকে ক্ষুন্ন না করে এই সংশোধনী আনা হচ্ছে, বা এই ধারা সংযোজিত হচ্ছে। এর মানে এই নয় যে, পূর্বের সবকিছুই বলবৎ থাকবে। তা-ই যদি হয়, তবে আর সংশোধনীর কী প্রয়োজন!
এদিন আলোচনা সভায় উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ উপস্থিত থেকে বরাকের ভাষার অধিকার রক্ষায় তিনি বিধানসভার ভেতরে ও বাইরে সোচ্চার থাকবেন বলে অঙ্গীকার করেন। তিনি জানান, “আমি মুখ্যমন্ত্রীর জবাবে সন্তুষ্ট নই, বিধানসভায় তা স্পষ্ট জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পরবর্তী অধিবেশনে এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হবে। কমলাক্ষ সেই আলোচনায় এই বিষয়গুলিও তুলে ধরবেন বলে উল্লেখ করেন।
বরাক উপত্যকার অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে শনিবার শিলচরেও বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা দিবস বিভিন্ন কার্যসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে । সম্মেলনের কাছাড় জেলা সমিতি শিলচর শহর আঞ্চলিক সমিতির সহযোগিতায় দিনটি উদযাপন করে। দিনের কার্যসূচি সূচনা হয় সকাল সাড়ে দশটায় বঙ্গভবনে পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে । পতাকা উত্তোলন করেন কাছাড় জেলা সমিতির সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী । পতাকা উত্তোলনের পর তিনি বরাকবঙ্গের গৌরবময় ইতিহাসের দিকগুলো তুলে ধরেন। প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখেন শিলচর শহর আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি সঞ্জীব দেবলস্কর। পরে বঙ্গভবনের সভাগৃহে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলে সম্মেলনের গোড়াপত্তনের ইতিহাস তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত ।
তৈমুর রাজা চৌধুরীর পৌরোহিত্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই অঞ্চলের সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়। তাঁরা হলেন মুজাম্মিল আলি লস্কর, অমলকান্তি দে, অমলেন্দু ভট্টাচার্য, গৌরী দত্তবিশ্বাস, মুকুলরঞ্জন বর্মন, ব্রজেশ্বর সিংহ ও দিব্যজ্যোতি পুরকায়স্থ। তাঁরা নিজেদের প্রতিক্রিয়ায় এই অঞ্চলের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করার দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জেলা সম্পাদক ড. জয়ন্ত দেবরায়। সবশেষে অধ্যাপক-সাংবাদিক-সমাজকর্মী জ্যোতিলাল চৌধুরীর প্রয়াণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।