Barak UpdatesHappeningsBreaking News
অমিতাভ বচ্চনের মুখোমুখি হয়ে কান্নান বললেন, সব ক্যানসার রোগীর চিকিৎসা হওয়া চাই
ওয়েটুবরাক, ১৮ আগস্টঃ চেন্নাইর ক্যানসার ইনস্টিটিউটে তিনি শিখেছিলেন, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকল ক্যানসার রোগীর চিকিৎসা হওয়া চাই । শিলচরে এসে কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালে ডিরেক্টরের দায়িত্ব নিয়ে একেই কার্যকর করতে চেয়েছেন। চালু করেছেন ল কস্ট অ্যান্ড নো কস্ট ক্যানসার ট্রিটমেন্ট।
এনডিটিভি-ডেটল প্রযোজিত “লক্ষ্য সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য কা” অনুষ্ঠানে অমিতাভ বচ্চনের মুখোমুখি হয়ে পদ্মশ্রীতে সম্মানিত ডা. রবি কান্নান বলেন, যারা একেবারেই চিকিৎসা বাবদ খরচে অসমর্থ, তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ দিলেও লাভ হয় না। সঙ্গে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। কান্নান জানান, কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালে তা-ই করছেন তাঁরা। এর পরও অনেক রোগীর পরিবারের এক সদস্যকে হাসপাতালে কাজের ব্যবস্থা করে দিতে হয়। কারণ রোগীরা হাসপাতালে এলে তাদের রুজিরোজগার বন্ধ হয়ে যায়। একদিন উপার্জন না হলে পরিবারের সদস্যদের উপোষ থাকার মতো আর্থিক অবস্থা তাদের। আর ক্যানসার হয়ে গেলে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা করাতে হয়। বারবার হাসপাতালে আসা-যাওয়াতেই তাদের প্রচণ্ড আর্থিক টানাপোড়েনে পড়তে হয়।
তাঁর কথায়, এ তো গেল হতদরিদ্র একশ্রেণির কথা। আবার আরেকটি শ্রেণি রয়েছে, যারা ভাবেন ক্যানসারের চিকিৎসা মানেই সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ নিঃশেষ করে দেওয়া। তাই ওই এনডিটিভি-ডেটল প্রযোজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কান্নানের আর্জি, এমন একটা ব্যবস্থা গড়ে উঠুক, যেখানে ক্যানসার হলে চিকিৎসার জন্য মানুষ টাকাপয়সা নিয়ে ভেবে আধমরা না হয়।
ক্যানসার বিশেষজ্ঞ কান্নান জানান, এই রোগ এখন আর মোটেও দুরারোগ্য নয়। বরং অন্য অনেক রোগের চেয়ে দ্রুত আরোগ্য হয়। কারণ এই রোগের সৃষ্টি ও সমাধান অধিকাংশ নিজের জীবনধারার সঙ্গে সম্পর্কীত। শরীরচর্চা বাদ দিয়ে অতিরিক্ত আরামপ্রিয় জীবনযাপন, তামাক ও সুপারি খাওয়া, অনিয়মিত খাবার গ্রহণ ইত্যাদি কারণেই মূলত ক্যানসার হয়। সমস্ত ভারতবাসী এ সবের দিকে লক্ষ্য রেখে চললে, ক্যানসার রোগীর সংখ্যা সত্তর শতাংশ কমে যাবে বলে জোর গলায় দাবি করেন ডা. কান্নান। তাঁর কথায়, তখন ক্যানসার চিকিৎসা নিয়ে আরও অনেক কাজ করার সুযোগ মিলবে। তাঁর পরামর্শ, ‘ধূমপান ছাড়ুন, ওই অর্থে ফল-সবজি বেশি করে খান। অ্যালকোহল ত্যাগ করুন, শরীর চর্চা নিয়মিত করুন। তাহলে শুধু ক্যানসার থেকেই নয়, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের ঝুঁকি ইত্যাদি থেকেও রেহাই মিলবে।”
২০০৭ সালে ডা রবি কান্নান চেন্নাইর ক্যানসার ইনস্টিটিউটে ইস্তফা দিয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে শিলচরে চলে আসেন। অমিতাভের কৌতূহলোদ্দীপক প্রশ্ন, চেন্নাই থেকে শিলচর—উল্টোযাত্রার সিদ্ধান্তটা কী করে নিলেন? খুব সহজ ভাবে ডা. কান্নান বলেন, চেন্নাই থেকে শিকাগোতেও অনেকে যান। সেটা বিদেশ। শিলচর আমার স্বদেশ। সেখানে আমাকে কখনও এমন জিজ্ঞাসার মুখে পড়তে হয়নি যে, কোথা থেকে এসেছেন বা এখানে কেন এসেছেন?
এর পরই তাঁর সংযোজন, “শিলচরে গিয়ে দেখেছি, সেখানে এত এত গরিব মানুষ রয়েছেন। ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য তাদের তিনশো কিলোমিটার দূরে গুয়াহাটিতে যেতে হয়। তখনই আমার মনে হয়েছে, শিলচরেই আমার কাজের প্রয়োজন।” সে থেকে তিনি কাছাড় ক্যানসার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে ৭০ হাজার ক্যানসার রোগীর চিকিৎসা করেছেন।
তবে আমিত্বে বিশ্বাসী নন ডা. কান্নান। তাই বারবার জোর দিয়ে বলেন, শিলচরে এখন যে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার হাসপাতাল গড়ে উঠেছে, এর পেছনে রয়েছে টিমওয়ার্ক। ডোরম্যান টু ডিরেক্টর, সবাই এক লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি আশাকর্মীদের কথাও উল্লেখ করেন।
বলেন, বরাক উপত্যকায় ক্যানসার সচেতনতা এখন এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, এক মহিলার স্তনে টিউমারের মতো একটা দেখা গিয়েছিল। লজ্জায় তিনি কাউকে বলতে পারছিলেন না। আশাকর্মী সে কথা শুনেই তাঁকে কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালে যেতে পরামর্শ দেন। কিন্তু ওই মহিলা কিছুতেই ডাক্তার দেখাতে রাজি নন। শেষে আশাকর্মী নিজে তাঁকে কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা করে ধরা পড়ে, মহিলা ক্যানসারে আক্রান্ত। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু হয়। ওই মহিলা এখন সুস্থ। আশাকর্মীর দরুন একটি প্রাণ বেঁচে গিয়েছে।