NE UpdatesHappeningsBreaking News
ফের উত্তপ্ত মণিপুর, কুকি জঙ্গিদের গুলিতে হত সেনা কমান্ডো
ওয়েটুবরাক, ১২ মে: ফের উত্তপ্ত মণিপুর। বৃহস্পতিবার বিষ্ণুপুর জেলার ট্রোংলাওবি এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালালো কুকি জঙ্গিরা। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন পুলিশ কমান্ডো হেইশনাম জিতেন। আরও চার পুলিশকর্মী জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। বুধবারে পূর্ব ইম্ফলে আসাম রাইফেলেসের টহলদার বাহিনীর উপরে গুলি চালানো হয়েছিল। জখম হয়েছিলেন এক জওয়ান। এই ঘটনার পরে রাজ্যে সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৭। নিখোঁজ আছেন দু’জন।
এই পরিস্থিতিতে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার দাবি জানাল কংগ্রেস। মণিপুর, মিজোরাম ও বিহারের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতীয় কংগ্রেস নেতা ভক্ত চরণ দাস দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, “মণিপুরে পুরোপুরি অরাজকতা চলছে। রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। রাজ্যের প্রকৃত ছবি যাতে বাইরে আসতে না পারে তার জন্য ইন্টারনেট বন্ধ।”
ভক্তচরণ প্রশ্ন তোলেন, “এত বড় হিংসার পরেও কেন্দ্র এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চুপ? কেন একটা টুইটও করেননি তিনি? কেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখনও মণিপুরে আসেননি?”
কংগ্রেসের তরফে অবিলম্বে জখমদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ঘরছাড়াদের নিরাপত্তা দেওয়া ও ঘরে ফেরানোর মতো সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরি করা, নিহতদের পরিবারের জন্য ২০ লক্ষ ও ঘর পোড়ানো পরিবারগুলির জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য দীর্ঘকালীন পুনর্বাসন প্যাকেজের দাবি জানিয়েছে।
ভক্তচরণ বলেন, ভোটে জেতার জন্য বিজেপি হিল এরিয়া কমিটির হাতে বেশি ক্ষমতা প্রদান, ৬টি স্বশাসিত জেলা পরিষদ তৈরি করা ও মেইতেইদের জনজাতিকরণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু জেতার পরে তারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দাবি পূরণের চেষ্টা করেনি, বরং ক্রমাগত বিভাজনের খেলা খেলেছে। হঠাৎ ৩৮টি গ্রামে উচ্ছেদ চালিয়ে বিজেপি সরকার অশান্তির আগুন জ্বালিয়েছে। ফলে এমন হিংসা ছড়িয়েছে যা রাজ্যে নজিরবিহীন। জনরোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে।
রাজ্য সরকার জানিয়েছে, হামলাকারীরা মণিপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, ৯ম মহিলা ব্যাটেলিয়ন ও ১৫-২০টি থানা থেকে অন্তত ১০৪১টি অস্ত্র লুঠ করেছে। তার মধ্যে ২৮৮টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়া ৩০ হাজার মানুষকে। সংঘর্ষের সময় লুঠতরাজে জড়িত ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে অর্থসাহায্যের জন্য ব্যাঙ্কের বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে।
কংগ্রেসের অভিযোগ, যদি হামলার পিছনে সরকারি মদত না থাকে, তবে যে রাজ্যে পুলিশের হাত থেকে সহস্রাধিক অস্ত্র লুঠ হয়ে যায় সেই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়াই একমাত্র দাওয়াই।
মেইতেই সংগঠনগুলি দাবি করেছে, সংঘর্ষের সময় বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার আগে মেইতেইদের জমির পাট্টা ছিনিয়ে নিয়েছিল সশস্ত্র কুকিরা। সংঘর্ষের পরে জনহীন গ্রামগুলিতে ‘জনজাতি জমি’-র সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেইতেই সংগঠনের তরফে সব কুকি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি বাতিল করা, ১৯৪৯ সালের পরে রাজ্যে আসা সব বহিরাগতকে শনাক্ত করা, উচ্চপদস্থ কুকি কর্তাদের শিকড় সন্ধান করা ও কঠোর হাতে ভুল খবর প্রচার বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে।
এ দিকে মণিপুরে থেকে পালিয়ে মিজোরামে ঢোকা মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৬০০। শান্তির বার্তা ছড়াতে মিজোরাম থেকে পদব্রজে ইম্ফলযাত্রা শুরু করেছেন ৬৫ বছরের লালবিয়াকথাঙ্গা। আইজল থেকে একলা পথিক লালের যাত্রা সূচনা হয়েছে বুধবার। পাড়ি দেবেন মোট ৪৪৫ কিলোমিটার রাস্তা। তিনি বলেন, “মণিপুরে ভ্রাতৃঘাতী হিংসা ও প্রাণহানি আমায় অস্থির করে তুলেছে। তাই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই আমি শান্তির বার্তা ছড়াতে বেরিয়ে পড়েছি।”