NE UpdatesBarak UpdatesHappeningsBreaking News
ডি মামলা থেকে গোর্খাদের রেহাই দিলে বাঙালিদের নয় কেন, প্রশ্ন বিডিএফের
ওয়েটুবরাক, ৯ আগস্ট : আসামে বসবাসকারী গোর্খাদের উপর চলতে থাকা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে এবং ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন অনুযায়ী গোর্খাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আর কোনও মামলা করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের জন্য গোর্খাদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি রাজ্যের বাঙালি হিন্দুদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির বৈমাত্রেয়সুলভ মনোভাবের জন্য তীব্র নিন্দায় মুখর হল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
ফ্রন্টের নেতা প্রদীপ দত্তরায় বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে গোর্খারা ডি ভোটার, ডিটেনশনের নরক যন্ত্রণা থেকে চিরতরে মুক্তি পেলেন। এই জনগোষ্ঠীর যাদের নাম এনআরসিতে ওঠেনি তাদেরও নাগরিকত্ব পেতে আর কোনও সমস্যা রইল না।এরজন্য তাদের উষ্ণ অভিনন্দন জানান তিনি।
তিনি বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত থেকে কয়েকটি ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে পড়ল। প্রথমত, সরকার চাইলে যে কোনও জনগোষ্ঠীকে এ রকম ঘুরপথে নাগরিকত্ব দিতে পারে। তাই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদে পাশ হবার পরও দেড় বছর ধরে নিয়মনীতি প্রবর্তন না করা এবং তার জন্য এনআরসি তালিকা থেকে বাদ লক্ষ লক্ষ বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্ব অনিশ্চয়তায় ঝুলিয়ে রাখা, এগুলো ইচ্ছাকৃত। বাঙালিদের ক্ষেত্রে ডি সমস্যাও যে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে জিইয়ে রেখেছে তাও আবার প্রমাণিত হল। দ্বিতীয়ত, নেপালের সাথে ‘ইন্দো নেপাল ফ্রেন্ডশিপ ট্রিটি’র জন্য যেমন নেপাল থেকে এদেশে গোর্খারা যে কোনও সময় এসে যে কোনও জায়গায় বসবাস করতে পারেন তেমনি ইন্দো-মায়ানমার সীমান্তের’ ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’এর ঢিলে নজরদারির সুযোগ নিয়ে বর্মীরাও এদেশ এবং আসামে এসে বসবাস করেছেন, ভূমিপুত্র হিসেবে নাগরিকপঞ্জিতে নামও অন্তর্ভুক্ত করছেন।
তাঁর কথায়, একমাত্র বাঙালিরা ছাড়া অন্য কোনও বিদেশি জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব নিয়ে আসাম সরকারের কোনও সমস্যা নেই। অথচ বাঙালিরা দীর্ঘকাল ধরে এই রাজ্যে বসবাস করছেন৷ ১৮৭৪ সালে ব্রিটিশ সরকার তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি থেকে কেটে শুধুমাত্র রাজস্ব বৃদ্ধির স্বার্থে বাঙালি অধ্যুষিত সিলেট, গোয়ালপাড়া ও কাছাড় জেলাকে আসামের সাথে জুড়ে দিয়েছিলেন৷ তাতে বাঙালি বাসিন্দাদের কোনও হাত ছিল না। এমনকী যাদের অবৈধ বাংলাদেশি বলে আখ্যা দেওয়া হয়, তারাও সবাই অবিভক্ত ভারতেরই নাগরিক যা গোর্খা বা বর্মীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। প্রদীপবাবু বলেন, আসামের অর্থনীতি তথা অসমিয়া ভাষা, সংস্কৃতির উন্নয়নে রাজ্যের বাঙালিদের অবদান ইতিহাস স্বীকৃত কিন্তু তারপরও নাগরিকত্ব পেতে তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। এসবই হচ্ছে জাতি বিদ্বেষ প্রসূত। বর্তমান সরকারও যে একই মনোভাব নিয়ে চলছেন সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্তে তা আবার সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হল। তিনি বলেন, যেহেতু অন্য সব জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব প্রদানে সরকারের অসুবিধা নেই তাই একমাত্র বাঙালিদের জন্যই রাজ্যে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল চালু রাখা হচ্ছে । এইসব ট্রাইব্যুনালকে তাই ‘বেঙ্গলি ট্রাইব্যুনাল’ আখ্যা দেওয়াই যুক্তিযুক্ত। তাহলে আর কারও কোনও সংশয় থাকবে না।
বিডিএফ যুব ফ্রন্টের কল্পার্ণব গুপ্ত ও ইকবাল নাসিম চৌধুরী বলেন, রাজ্যের বাঙালি হিন্দুরা বারবার ঝুলি ভরে ভোট দিয়ে বিজেপিকে জেতানোর পরও তাদের প্রাপ্তির ঝুড়ি শূন্যই রয়ে গেল। লক্ষ লক্ষ বাঙালি হিন্দুর নাম এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি, অসংখ্য বাঙালি হিন্দুদের নামে ট্রাইব্যুনালে মামলা ঝুলছে। হঠাৎ করে বাঙালি হিন্দুদের বাদ দিয়ে গোর্খাদের এইভাবে নাগরিকত্ব দিয়ে সরকার আবার বাঙালি হিন্দুদের বঞ্চিত করলেন। তারা বলেন, আগামীতে এর যোগ্য প্রত্যুত্তর বিজেপিকে অবশ্যই পেতে হবে। এই ব্যাপারে বরাকের বিজেপি সাংসদ ও বিধায়কদের বক্তব্য জানতে চায় বিডিএফ।
উল্লেখ্য, গোর্খারা জনসংখ্যার দিক দিয়ে এই রাজ্যের ষষ্ঠ জনগোষ্ঠী এবং তাদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘ভারতীয় গোর্খা পরিসংঘ’র’ হিসেব অনুযায়ী প্রায় এক লক্ষ গোর্খা জনগোষ্ঠীর লোক নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।