Barak UpdatesHappeningsBreaking News
প্রকাশিত এনআরসিই চূড়ান্ত, রায়ে বলল করিমগঞ্জ ফরেনার্স ট্রাইবুনাল
ওয়েটুবরাক, ১৭ সেপ্টেম্বরঃ করিমগঞ্জ ফরেনার্স ট্রাইবুনালের রায়ে উঠে এসেছে এনআরসি এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব প্রসঙ্গ। ট্রাইবুনালের সদস্য (বিচারক) শিশির দে তাঁর রায়ে জানান, ১৯৫৫ সালের ভারতের নাগরিকত্ব আইন এবং ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব বিধি অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে এনআরসি তৈরি হয়েছে। এর জন্য সময়সীমাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট বার বার এর সময়সীমা বাড়িয়েছে। কিন্তু যতবারই এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে, এর শেষ প্যারায় উল্লেখ করা হয়েছে, চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশের তারিখ। ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট সরকারি ওয়েবসাইটে যে এনআরসি তালিকা ঘোষণা করা হয়েছিল, তাতেও লেখা ছিল চূড়ান্ত এনআরসি। ফলে এনআরসিভুক্ত নাগরিকদের জাতীয় পরিচয় পত্র এখনও ইস্যু না হলেও ওইটাই চূডা়ন্ত এনআরসি। এ ছাড়া, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে রায়ে তিনি উল্লেখ করেন, সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের বিবেচনাধীন মানেই শীর্ষ আদালত একে খারিজ না করা পর্যন্ত তা বৈধ এবং কার্যকর।
পাথারকান্দি থানার জামিরালার বিক্রম সিংহকে ভারতীয় নাগরিক বলে রায় দিতে গিয়ে সদস্য-বিচারক এই তাৎপর্যপূর্ণ অভিমত প্রকাশ করে। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে টানা ২৯ বছর ভারতীয় বিমান বাহিনীতে চাকরি করেছেন ভরতচন্দ্র সিংহ। তাঁর ছেলেকেই পুলিশ বিদেশি বলে সন্দেহ করে ডি ভোটার চিহ্নিত করে। করিমগঞ্জ ফরেনার্স ট্রাইবুনালে (২ নং) বিক্রম শুধু বাবার চাকরি সংক্রান্ত নথিই নয়, ১৯৬৮ সালে কেনা ঠাকুর্দা মদনকুমার সিংহের জমির দলিলও পেশ করেন। ট্রাইবুনালের সদস্য শিশির দে তাঁর রায়ে জানান, বিক্রমের বাবা-মা যে ভারতীয়, তা নথিতে প্রমাণিত। ফলে তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন বা সংশয়ের অবকাশ নেই।
কিন্তু এই মামলার রায় শুধু বিক্রমের নাগরিকত্ব নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মামলার শুনানিতে আইনজীবীরা এনআরসি এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। উভয়পক্ষের আইনজীবী এই ব্যাপারে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেন। বিক্রম বিভিন্ন নথির সঙ্গে চূড়ান্ত এনআরসি-তে তাঁর নাম থাকার প্রমাণপত্রও পেশ করেছিলেন। তাতে আপত্তি জানান সরকারি কৌশুলি শংকর চক্রবর্তী। তাঁর যুক্তি, এনআরসি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ফলে তাতে নাম থাকা বা না থাকা উল্লেখের ব্যাপার নয়। দ্বিতীয়ত, কোনও ডি ভোটার এনআরসিতে আবেদনই করতে পারেন না। ফলে অবৈধ উপায়ে বিক্রম এনআরসি-র জন্য আবেদন করেছেন। বিরোধী পক্ষের আইনজীবী মঞ্জরি দাস পাল্টা যুক্তি দেখান, সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে যে চূড়ান্ত এনআরসি তৈরি হয়েছে, এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে না। বিক্রমের নাগরিকত্বের পক্ষে যথেষ্ট নথি ছিল বলেই এনআরসি কর্তৃপক্ষ তাঁর নাম তুলেছেন।
বিক্রমের জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের তত্ত্বটিও সরকারি আইনজীবী মানতে নারাজ। তিনি বলেন, সামগ্রিক বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের বিবেচনাধীন। তাই এখনই একে গ্রহণ করা যায় না। মঞ্জরি দাস অসম সরকার প্রকাশিত বিদেশি ইস্যুতে শ্বেতপত্র দেখিয়ে বলেন, তাতে লেখা রয়েছে, ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ও ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইর মধ্যে যারা ভারতে জন্ম নিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার নাগরিকত্ব থাকল কি থাকল না, সে প্রশ্ন নেই। এরা জন্মসূত্রে ভারতীয়।
এই দুই ইস্যুতেই ট্রাইবুনালের সদস্য শিশির দে নিজের অভিমত উল্লেখ করেছেন। এনআরসি এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে ফরেনার্স ট্রাইবুনালের এই রায় বহু মামলার জট ছাড়াতে সাহায্য করবে বলে আইনজীবীদের অনেকের অভিমত।