Barak UpdatesBreaking NewsFeature Story
পরিমল দে শুধু অধ্যক্ষা ছিলেন না, ছিলেন অতি কাছের মানুষ, লিখেছেন মঞ্জুশ্রী দে
২৮ ডিসেম্বর : দিদি পরিমল দে-র সঙ্গে পরিচয় চাকরি জীবনের শুরু থেকে। দিদি ছিলেন খুব স্নেহশীলা। দক্ষতার সঙ্গে কলেজ পরিচালনা করেছেন।প্রত্যেকটা জিনিসকে তিনি এমনভাবে দেখতেন যে, সব কিছুর মধ্যে তাঁর একটা মন লুকিয়ে ছিল। শুধু আমরা কলেজে চাকরি করছি, দিদি আমাদের প্রিন্সিপাল, সেই হিসেবে নয়। দিদিকে আমরা পেয়েছি, একেবারে মাতৃসমা যাকে বলে। খুব স্নেহ করতেন, কোনও দোষ হলেও আমরা অনায়াসে দিদির কাছে খুলে বলতাম। দিদি সবকিছু স্নেহের চোখে বিচার করতেন। আর এত সহজসরল চলাফেরা ছিল যে, আমি কোনওদিন দিদিকে দেখিনি দিদি একেবারে পরিপাটি হয়ে এসেছেন। আমি একটা কলেজ চালাই, সেই মনোবৃত্তি তাঁর মধ্যে ছিল না। এ ছাড়া, আমাদের ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়েও দিদির সঙ্গে বলে ফেলতে পারতাম। দিদি তখন বিষয়টির ভেতরে ঢুকে সমাধান কিছুটা খুঁজে দিতেন। আসলে দিদি শুধু একজন অধ্যক্ষা ছিলেন না, দিদি আমাদের জীবনের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে ছিলেন যে, সুখে-দুঃখে আমরা তাঁর কাছেই ছুটে যেতাম। আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে বলতে পারি, আমি যখনই কোনও সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে গিয়েছি, খালি হাতে ফিরতে হয়নি। এ ছাড়া, কলেজের কাজেও যখন মনে হয়েছে, দিদিকে বলেছি, এটা বোধ হয় এভাবে নয়, ওভাবে করলে ভাল হবে। দিদি কিন্তু আমাদের কথা গ্রাহ্য করতেন। আমাদের কথার মূল্য দিতেন।
দিদির একটা মস্ত বড় গুণ ছিল, এটা অবশ্য সবাই জানেন, তিনি খুব ভালো গান করতেন। সেই সব গান যে কী। কলেজের যে কোনও প্রকার উতসব-অনুষ্ঠান, দিদির গান ছাড়া চলত না। সেই সব গানের অধিকাংশই রবীন্দ্রসঙ্গীত। এত দরদ দিয়ে গাইতেন, দিদির গানে অনুষ্ঠান শুরু হতো, আবার দিদির গানেই যেন অনুষ্ঠান শেষ হতো। মনে আছে, দিদি যখন অবসর নিয়ে চলে যাচ্ছেন, সবাই বলছেন, গান তো অবশ্যই আপনাকে গাইতে হবে। দিদি যে গানটা সে দিন করেছিলেন, আজও আমার মনে পড়ে, আমি যে গান গেয়েছিলেম জীর্ণ পাতা ঝরার বেলায়। এই যে রবীন্দ্রসঙ্গীতটা এত প্রাণস্পর্শী যে, মনে হচ্ছিল, দিদির সমস্ত অনুভূতি এই কলেজকে ভালবেসে এবং কলেজের প্রত্যেকের একেবারে কাছের মানুষ হয়ে তিনি গানটা আমাদের শুনিয়ে গিয়েছিলেন। আবার আমরা কলেজে যখন নাটক-টাটক করতাম, তিনি সামনে দাঁড়িয়ে থেকে সক্রিয় ভূমিকা নিতেন। তাঁর সাংস্কৃতিক দিকটা বড় উজ্জ্বল ছিল।
দিদি কিন্তু শিলঙের লেডিকিন কলেজে পড়াতেন। আমিও তখন লেডিকিনের ছাত্রী। তিনি হিস্ট্রি পড়াতেন। আমার অবশ্য এই বিষয়টা ছিল না। শিলচরে উইমেন্স কলেজ যখন শুরু হল, তখন কলকাতার এক শিক্ষিকা কলেজ চালাতেন। তিনি চলে গেলে জায়গাটা যখন খালি হয়ে গেল, দিদি তখন চেয়েছিলেন নিজের জায়গায় ফিরে আসতে। আমরাও দিদিকে পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলাম। দিদি যখন দায়িত্ব নিলেন, তখন আমাদেরও মনে হল যেন, নিজের কে যেন এসে দাঁড়াল। দিদির কথা বলার ধরনও উল্লেখের দাবি রাখেন। কিছু বললেই পরে আবার আমাদের ডেকে নিতেন। বলতেন, আমি যে তোমাদের কথাগুলি বললাম, ওই ভাবে বলতে আমি বাধ্য। তাই বলে ভেবো না, আমি তোমাদের ভালবাসি না।
দিদি আমার মেয়েকে খুব ভালবাসতেন। এত ভালবাসতেন যে, কোনও কিছু হলেই ওর কথা বলতেন। ও তখন একটুআধটু কবিতা লিখত। ওগুলো দিদির খুব পছন্দ ছিল। আমাকে বলতেন, ওকে উতসাহ দিও, ও যেখানে থাকুক, যেভাবে থাকুক, ও যেন এগুলি চালিয়ে যায়। আর আমার মনে হতো, দিদি যেন অধ্যক্ষা নন, অফিসিয়াল রিলেশনে নন। আমার অতি কাছের মানুষ, যার কাছে একেবারে মন খুলে সুখ, দুঃখের সব কথা বলতে পারি।
(মঞ্জুশ্রী দে শিলচর উইমেন্স কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান)
Also Read: Retired Principal of Women’s College Parimal De passes away at 93