NE UpdatesHappeningsBreaking News
নেট নেই, বাড়ছে জ্বালানি সঙ্কট : এখনও ছন্দ ফিরে পায়নি মণিপুর
ওয়েটুবরাক, ১৪ মে : দাঙ্গা-পরবর্তী মণিপুরে জীবনযাত্রা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে এলেও ১২ দিন ধরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় সবেতেই যেন ছন্দপতন। ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পুরোপুরি বিঘ্নিত। এটিএম বুথগুলিতে টাকা নেই। সরকারি-বেসরকারি অফিসের নানা কাজকর্ম ইন্টারনেটের অভাবে আটকে রয়েছে।
নৈশকার্ফু বহাল থাকলেও সারাদিন বাজার-হাটের সুযোগ মিলছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ক্রমে বেড়ে চলেছে। জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়েছে। রাস্তায় যানবাহন বার করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সকলে। রাজ্য সরকার রেশনিং করে দুই চাকার বাহন এবং গাড়িগুলিতে তেল দিচ্ছে।
সরকারি কর্তারা আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করলেও প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত হিংসাত্মক ঘটনা ঘটছে। শনিবার রাতেও সন্দেহভাজন কুকি জঙ্গিরা চূড়াচাঁদপুর জেলায় বেশ কিছু বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। ওই সব বাড়ির মানুষ এখন শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত। একই জেলায় সেনাবাহিনী এবং আসাম রাইফেলসের একটি যৌথ টহলদারি দলের ওপরও জঙ্গিরা হামলা করে। আসাম রাইফেলসের দুই জওয়ান গুলিবিদ্ধ হন। পাল্টা জবাব দিলে জঙ্গিরা পালিয়ে যায়। অনুরূপ ঘটনা ঘটে সেনাপতি জেলার সিপিজাঙে। সেখানে সেনার জবাবে জঙ্গিরা বন্দুক ছেড়ে পালায়। দুটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং বেশ কিছু কার্তুজ উদ্ধার করেন জওয়ানরা।
মণিপুর সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদীপ সিংহ সংঘর্ষবিরতি মেনে চলা কুকি জঙ্গিদের কয়েকটি শিবির পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, একাংশ জঙ্গি যেমন শিবিরে অনুপস্থিত, তেমনি কিছু আগ্নেয়াস্ত্রও পাওয়া যায়নি। নানা পরিসংখ্যান তুলে ধরে কুলদীপ বলেন, দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার পর নিরাপত্তা রক্ষীদের কাছ থেকে ১০৪১টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৭৪৬০টি কার্তুজ ছিনতাই হয়েছে। এর মধ্যে ৪২৩টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৬৬৯৭টি কার্তুজ উদ্ধার করা গিয়েছে। তাঁর কথায়, দাঙ্গায় ৭১ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলা হলেও আসলে হিংসা-হানাহানিতে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা অতিরিক্ত মাদক সেবন সহ নানা কারণে মারা গিয়েছেন। পুলিশের কাছে এ পর্যন্ত দাঙ্গা সংক্রান্ত ৩৩৯টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে বলে কুলদীপ জানিয়েছেন।
এ দিকে, রবিবার মেইতেইদের একটি দল মণিপুরে এনআরসি প্রণয়নের দাবিতে দিল্লির জন্তরমন্তরে ধরনা দেয়। তাঁদের কথায়, বহিরাগতদের চিহ্নিত করে বিতাড়িত করা গেলেই রাজ্যটিতে শান্তি ফিরে আসবে। ওয়ার্ল্ড মেইতেই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হেইগ্রুজাম নবশ্যাম বলেন, কুকি জঙ্গিরা বন্দুক হাতে জঙ্গলে আত্মগোপন করে রয়েছে। কখনও সেনা জওয়ান, কখনও সাধারণ জনতার ওপর হামলা করছে। তাই মেইতেইরা বাড়িঘরে ফিরতে পারছেন না। তিনি মেইতেইদের তফশিলি জনজাতি ভুক্ত করার পক্ষে নানা যুক্তি দেখান।
মণিপুর হাই কোর্ট আগেই রাজ্য সরকারকে মেইতেইদের তফশিলি জনজাতিভুক্ত করার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় জনজাতি কল্যাণ দফতরে সুপারিশ পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছিল। ২৯ মে পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দিয়েছিল। দাঙ্গা-হাঙ্গামার প্রেক্ষিতে মণিপুরের অ্যাডভোকেট জেনারেল ওই সময়সীমা বাড়ানোর আর্জি জানালে হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এমভি মুরলিধরন তা মেনে নেন। তিনি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সুপারিশ পাঠানোর জন্য এক বছর পর্যন্ত সময় দেন।