Barak UpdatesBreaking News
নিজের ঘরেই খুন নরসিং স্কুলের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, ক্রীড়া সংগঠক সমরেন্দ্র ভট্টাচার্যFormer Principal of Narsing School murdered inside his house
৬ অক্টোবর : বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক তথা শিলচরের নরসিং স্কুলের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সমরেন্দ্র ভট্টাচার্য শুক্রবার গভীর রাতে নিজের বাড়িতে খুন হয়েছেন। রাত ১২.০৫ মিনিট নাগাদ তাঁর কেয়ারটেকার সবজি কাটার দা দিয়ে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর তড়িঘড়ি শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে রাত ২-১৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
অভিযুক্ত কেয়ারটেকার সঞ্জয় আচার্যকে পুলিশ শিলচর রেলস্টেশন থেকে গ্রেফতার করে। সমরেন্দ্র ভট্টাচার্য বেশ কিছুদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। শনিবার সকালে তাঁর কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালে গিয়ে কেমো নেওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার রক্তপরীক্ষা সহ আনুষঙ্গিক কাজকর্ম সেরে এসেছিলেন।
শিলচর শহরেই সমরেন্দ্রবাবুদের জমিতে পানের দোকান রয়েছে সোনাই রোড নিবাসী সঞ্জয়দের। আত্মীয়তার সুবাদে তার বাবা বিনা ভাড়ায় ওই জমিতে দোকান দেন। পরে তার ভাইয়েরাও সেই দোকান চালান। ১৯৮০ সাল থেকে ৫২ বছর বয়সী সঞ্জয়ই দোকানের মালিক। সমীরবাবু ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তাকে ডেকে আনা হয় কেয়ারটেকার হিসেবে। ৮ মাস ধরে সঞ্জয় রাতে সমীরবাবুর শিলংপট্টিস্থিত বাড়িতেই ঘুমোতেন। সে জন্য দৈনিক তাকে দেড়শো টাকা করে দেওয়া হতো।
শনিবার সকালে শিলচর সদর থানার লক আপে দাঁড়িয়ে সঞ্জয় শোনায়, প্রথমদিকে হাসিমুখে প্রতিদিন ১৫০ টাকা দিয়ে দিতেন। কিছুদিন ধরে টাকা দিয়েই বলতে শুরু করতেন, বিনা ভাড়ায় এত বছর ধরে দোকান চালাস, আবার ১৫০ টাকা কীসের ! কখনও বলতেন, কাল থেকে আমাকে ১৫০ টাকা করে দিতে হবে। সপ্তাহদুয়েক ধরে নতুন হুমকি, দোকানে তালা লাগিয়ে দেব। শুক্রবার রাতে ঘুমোতে যাব, এমন সময়ে হইচই জুড়ে দিলেন, কাল দোকানদারি করতে পারবি না। সকালেই দোকানে তালা লাগিয়ে দেব। বারবার ঘ্যানরঘ্যানর শুনে মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। মনে হল, তোমাকেই জীবনের জন্য তালা লাগিয়ে দেব। তাঁর রান্নাঘর থেকেই বটি দা এনে কুপিয়ে শেষ করি দিই। পরপর ৫-৬টা কোপ বসাই। কোথায় কোনটা পড়েছে, বলতে পারব না।
সঞ্জয় ৫-৬টা কোপের কথা বললেও ইন্ডিয়া ক্লাবের সভাপতি সমরেন্দ্রবাবুর দেহে অসংখ্য কোপ পড়েছে। মাথা, পেট, ঘাড়, হাত, পা, চোখ কোথাও বাদ নেই। কোথাও একই জায়গায় তিন-চারটা।
নিঃসন্তান সমীরবাবুর সাংসারিক জীবন ছিল অত্যন্ত কমদিনের। আইনি বিচ্ছেদ না হলেও স্ত্রী তাঁর বাড়িতে থাকতেন না। বাড়িতে থাকতেন দিদি, ভগ্নীপতি। তাঁরা উপরের ঘরে, সমরেন্দ্রবাবু নীচের ঘরে ঘুমোতেন। শুক্রবার রাত ১২টা ৫ মিনিটে তাঁর চিতকার শুনে প্রতিবেশীরা বেরিয়ে আসেন। ছুটে আসেন বাড়ির মানুষজনও। পুরো ঘর রক্তে ভেসে গিয়েছে। দ্রুত তাঁকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত সোয়া ২টায় আইসিইউ-তে ঢোকানোর সময়েই তিনি চিরবিদায় নেন।
তাঁর প্রতিবেশী, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, রাতেই খবর পেয়ে দৌড়ে যাই। দেখি, তিনি বিছানাতেই ক্ষতবিক্ষত। কোন জায়াগায় যে কোপ পড়েনি! তিনি জেলা ক্রীড়া সংস্থায় বিভিন্ন দায়িত্ব সামলেছেন। কিছুদিন আগেও ছিলেন সহসভাপতি। সম্প্রতি ইন্ডিয়া ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে ক্রীড়াজগতের ক্ষতি হল।
জেলার ক্রীড়া মহলে সমরেন্দ্রবাবুর মৃত্যু গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে। শনিবার সকালে সতীন্দ্রমোহন স্টেডিয়ামে রুটিন প্র্যাকটিস, প্রাতর্ভ্রমণ বাদ দিয়ে সবাই নীরবে স্মরণ করেছেন সমরেন্দ্র ভট্টাচার্যকে। বিজেন্দ্র প্রসাদ সিংহ, চন্দন শর্মা, নিরঞ্জন রায় সবাই মর্মাহত।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসম্পাদক বিজেন্দ্রবাবু জানান, খুবই মর্মন্তুদ ঘটনা। সমীর স্যারকে উপযুক্ত মর্যাদায় শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাব আমরা।
রাতে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত সঞ্জয় আচার্যকে শনিবারই আদালতে তোলা হয়। বিচারকের নির্দেশে পরে বিচার বিভাগীয় হেফাজত তথা জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
The accused caretaker Sanjay Acharjee was arrested by the police from Silchar Railway Station. Samarendra Bhattacharjee was suffering from cancer since the past few months. Today morning, he was supposed to be administered chemotherapy in the hospital.