Barak UpdatesAnalytics
নাগরিকত্ব/৩৫ঃ অসমের জন্য হয় পৃথক ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল অর্ডার
(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনাই হয়নি। তবে সংসদে সুযোগ না থাকলেও বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছে। আজ এর ৩৫-তম কিস্তি।)
২০ মার্চঃ ৫.৭ পরিষদীয় বিভাগ জানায়, অসম চুক্তি মূল আইনে ৬(এ) ধারার সন্নিবেশ ঘটিয়েছে। এই ৬(এ) ধারা মূলত ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যে যে সব ভারতীয় মূলের মানুষ বাংলাদেশ থেকে অসমে প্রবেশ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। প্রস্তাবিত বিলে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের ছাড় দেওয়া হয়েছে এবং সারা দেশে একই নিয়ম করা হয়েছে।
১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যে যে সব ভারতীয় মূলের মানুষ বাংলাদেশ থেকে অসমে প্রবেশ করেছেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আসা সংখ্যালঘুদের অসম চুক্তি থেকে ছাড় দেওয়া হলে ২০১৬ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের ২(১)(বি) ধারায় দুইয়ের মধ্যে কোন বিরোধ বাঁধে না।
এ ছাড়া মূল আইনের ৭(ডি) ধারার সংশোধনীর সঙ্গে অসম চুক্তির কোনও সম্পর্ক নেই। এই সংশোধনীর উদ্দেশ্য হল, কোনও ভারতীয় আইন লঙ্ঘন করলে ওসিআই কার্ডধারীদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা।
মূল আইনের তৃতীয় তফশিলের সংশোধনীতে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশ করা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর যারা ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন, তাদের বসবাসের যোগ্যতাসূচক সময় ১১ বছর থেকে ৬ বছর করার কথা বলা হয়েছে।
মূল আইনের ৬(এ) ধারার ৩ নং উপধারায় ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স অ্যাক্টে তৈরি ১৯৬৪ সালের ফরেনার্স (ট্রাইব্যুনাল) অর্ডারে গঠিক কোনও ট্রাইব্যুনাল যারা বিদেশি হিসেবে শনাক্ত, তাদের কথা বলা হয়েছে।
অসম চুক্তির ৫.৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরে আসা বিদেশিদের শনাক্ত করা, ভোটার তালিকা থেকে নাম কর্তন ও দেশ থেকে বহিষ্কার আইন মেনেই চলতে থাকবে। কিন্তু ওই তারিখের পরে আসা বিদেশিদের কীভাবে শনাক্ত করা হবে, ভোটার তালিকা থেকে নাম কর্তন হবে ও দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে, ৬(এ) ধারায় এর উল্লেখ নেই। ১৯৮৩ সালের ইল্লিগ্যাল ইমিগ্রান্টস (ডিটারমিনেশন বাই ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্টের ৫ নং ধারায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিতকরণ এবং ভারত থেকে বহিষ্কারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়েছিল। ওই আইন ১৯৮৩ সালের ১৫ অক্টোবর অসমে কার্যকর হয়।
২০০৫ সালের ১২ জুলাই সর্বানন্দ সোনোয়াল বনাম ভারত সরকার মামলা সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ আইএমডিটি আইন এবং এর রুলগুলিকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেয়। ওই রায়ের ৪০ নং অনুচ্ছেদে সর্বোচ্চ আদালত বলে যে, ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স অ্যাক্টের ৯ নং ধারায় ভারতীয় নাগরিক বলে দাবির ক্ষেত্রে, তাকেই সে কথা প্রমাণ করতে হবে, কিন্তু আইএমডিটি আইনে একই কথা না বলে প্রমাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রের আইন কার্যকর করা বিভাগগুলির ওপর, যাদের পক্ষে কোনও মানুষকে আইএমডিটি আইনের ৩(১)(সি) ধারা অনুসারে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে প্রমাণ করা শুধু কঠিনই নয়, অসম্ভবও। আদালত আরও বলে, সংবিধানের ৩৫৫ ধারায় বিদেশি আক্রমণ ও অভ্যন্তরিণ সমস্যা থেকে প্রতিটি রাজ্যকে রক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রের কাঁধে সঁপা হয়েছে। আইএমডিটি অ্যাক্ট এবং রুল সেই সাংবিধানিক বাধ্যতার জায়গাকে অস্বীকার করে। তাই ৮৪ নং অনু্চ্ছেদে আদালত নির্দেশ দেয়,
১. আইএমডিটি আইনে গঠিত সমস্ত ট্রাইব্যুনাল ও অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালকে বাতিল করা হল।
২. আইএমডিটি-র ট্রাইব্যুনালে ঝুলে থাকা সমস্ত মামলা ১৯৬৪ সালের ফরেনার্স (ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার দ্বারা গঠিত ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত করতে হবে। ওইসব মামলার রায় হবে ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স অ্যাক্টে উল্লিখিত রুল অনুসারে এবং ১৯৬৪ সালের ফরেনার্স (ট্রাইব্যুনাল) অর্ডারে উল্লিখিত প্রক্রিয়ায়।
৩. অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে ঝুলে থাকা সমস্ত আপিল খারিজ করা হল।
এ ছাড়াও, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে ১৯৬৪ সালের ফরেনার্স (ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার মত যথেষ্ট সংখ্যক ট্রাইব্যুনাল গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়, যাতে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে আসা এবং অসমে বসবাস করা বিদেশিদের মামলাগুলোর বিচার হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৪ সালের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল অর্ডার সংশোধন করা হয়। জিএসআর নং ৫৭(ই), ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৬। তাতে এই অর্ডার অসমে কার্যকর নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একই দিনে ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স অ্যাক্টের ৩ নং ধারা মতে ফরেনার্স (ট্রাইব্যুনালস ফর আসাম) অর্ডার, ২০০৬ গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। জিএসআর নং ৫৮(ই)। এই অর্ডারে অসমে প্রবেশ করা বিদেশিদের ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স অ্যাক্ট মতে শনাক্ত করার জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়েছে।
চোখ রাখুন—–নাগরিকত্ব/৩৬ঃ মামলা থেকে রেহাই পেতেন ১৯৭১-র পরে আসা উদ্বাস্তুরা