Barak UpdatesIndia & World UpdatesHappeningsBreaking News
দিল্লিতে জাতীয় সম্মেলন, বরাকের ভাষাশহিদদের নামে রক্তদাতাদের পুরস্কার
শিলচরের আশু পাল জাতীয় সম্পাদক মনোনীত
ওয়েটুবরাক, ২২ জুন : বরাকের ভাষাশহিদদের লড়াই ও আত্মত্যাগের ঘটনা এবার পৌছে গেল জাতীয় মঞ্চে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দিল্লিতে জাতীয় কর্মশালায় যোগ দিতে আসা বিশিষ্ট রক্তদাতা ও রক্তদান শিবির আয়োজনকারীদের এবার পুরস্কৃত করা হলো রক্তদান আন্দোলনের বিশিষ্ট প্রয়াত ব্যক্তি এবং বরাকের ভাষা শহিদদের নামাঙ্কিত পুরস্কারে।
বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উপলক্ষে ভারত সরকারের সংস্থা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বায়োলজিক্যালস (এন আই বি) এবং ফেডারেশন অফ ব্লাড ডোনার্স অর্গানাইজেশন্স অফ ইন্ডিয়ার যৌথ আয়োজনে গত ১৪, ১৫ ও ১৬ জুন দিল্লির উপকণ্ঠে নয়ডায় আয়োজন করা হয়েছিল তিন দিবসীয় জাতীয় কর্মশালা।
১৪ তারিখ সকালে পথ পরিক্রমার পর কর্মশালায় যোগ দেন দেশের ২৩টি রাজ্য থেকে আসা ১১৪ জন বিশিষ্ট রক্তদাতা, রক্তদান শিবির আয়োজক, থ্যালাসেমিয়া সোসাইটির পরিচালক ও দেশের রক্তবিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। শতাধিকবার রক্তদাতা ছিলেন ৩৭ জন, রক্তবিজ্ঞানী ছিলেন ১৪ জন, জাতীয় স্তরের থ্যালাসেমিয়া সোসাইটির পরিচালক-পরিচালিকা ছিলেন ৯ জন এবং দিল্লির এইমস ও মুম্বইয়ের টাটা ক্যান্সার হাসপাতালের ব্লাড সেন্টারের দুইজন ডিরেক্টর। এ ছাড়াও ছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় রক্ত সঞ্চারণ পরিষদের উচ্চ পদে আসীন ৫ জন বিজ্ঞানী আধিকারিক। দেশের হাসপাতালগুলিতে রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপদ রক্তের ব্যবস্থা করতে দেশের ব্লাড সেন্টার গুলিতে সে সব বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে, এ নিয়ে দশজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী দৃশ্য-শ্রাব্য মাধ্যমে তাদের পরিবেশনা উপস্থাপিত করেন।
১৫ জুন সারা বিশ্বের রক্তদান আন্দোলনের অভিজ্ঞতার নিরিখে আমাদের দেশের রক্তদান আন্দোলন কতটা অগ্রগতি করেছে, আর্ত, রোগাক্রান্ত মানুষের চিকিৎসার জন্য নিরাপদ রক্তের জোগান নিশ্চিত করতে কী কী নতুন আবিস্কার হয়েছে, কোথায় ব্যর্থতা রয়েছে, কী পদ্ধতিতে আরো বেশি মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করা যায়, এইসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য প্রতিনিধিরা। রক্ত সঞ্চারণ পরিষেবাকে আরো উন্নত ও প্রসারিত করার জন্য সরকারের আর কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, বিশেষত, চিকিৎসা পরিষেবায় এখনও অনেকটাই পিছিয়ে থাকা উত্তর পূর্বাঞ্চল, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, জম্মু ও কাশ্মীর প্রভৃতি অঞ্চলে অধিকতর গুরুত্ব আরোপ সহ বেশ কিছু পরামর্শ সম্বলিত একটি স্মারক পত্র কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সব ক’টি রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের কাছে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানস্থল সংলগ্ন এলাকায় মোমবাতি মিছিলও অনুষ্ঠিত হয়।
তৃতীয় দিন অনুষ্ঠিত হয় ফেডারেশন অফ ব্লাড ডোনার অর্গানাইজেশনস অফ ইন্ডিয়া-র সর্ব ভারতীয় সম্মেলন। দিল্লির রামকৃষ্ণ মিশনের প্রবীণ সন্ন্যাসী স্বামী শুভ্রানন্দজী মহারাজ ছিলেন এ দিনের মুখ্য অতিথি। তিনি বলেন, একজন ভালো রক্তদাতা হিসেবে নিজেকে তৈরি করার জন্য প্রয়োজন সদাচারী জীবন যাপন, সৎ চিন্তা, সুস্বাস্থ্য ও মানব প্রেম। আর এই গুণাবলী আত্মস্থ করার জন্যই দেশের যুব সমাজের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। এফ বি ডি ও আই তাঁর জন্মলগ্ন থেকেই স্বামীজীর আদর্শকে সামনে রেখে রক্তদানের কাজে এগিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি আনন্দ প্রকাশ করেন। সম্মেলনের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ বর্ষের জন্য নতুন সর্বভারতীয় কমিটি নির্বাচন করা হয়। দিল্লি এইমসের ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের অবসরপ্রাপ্ত ডিরেক্টার, দেশের রক্ত সঞ্চারণ বিজ্ঞানের বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডাঃ সঙ্গীতা পাঠক সর্ব সম্মতিতে সভানেত্রী পদে নির্বাচিত হয়েছেন। সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন রক্তদান আন্দোলনে পাঁচ দশকের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সংগঠক অপূর্ব ঘোষ। কার্যকরী সভানেত্রী হিসেবে ভারতীয় থ্যালাসেমিয়া সোসাইটির প্রধান ডাঃ শোভা তুলি ছাড়াও ৫ জন সহ সভাপতি, ৫ জন সর্বভারতীয় সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ ও একজন সহকারী সাধারণ সম্পাদক সহ মোট ৩১ সদস্যের জাতীয় পরিচালন সমিতি গঠিত হয়েছে। পূর্বোত্তর থেকে সহ-সভানেত্রী হিসেবে অরুণাচল প্রদেশের শ্রীমতী আইনি তালো ও সর্বভারতীয় সম্পাদক পদে আশু পাল নির্বাচিত হয়েছেন।
ডাঃ কার্ল ল্যান্ড স্টাইনার, ডাঃ নর্মান বেথুন, মাদার টেরিজা, অটল বিহারী বাজপেয়ী সহ কয়েকজন বিশ্ববন্দিত ব্যক্তির পাশাপাশি বরাকের ভাষা শহিদদের নামাঙ্কিত স্মারক ও সার্টিফিকেট দিয়ে দেশের বিশিষ্ট রক্তদাতা ও রক্তদান আন্দোলনের নেতাদের সম্মানিত করা হয়। মোট ২৮ জন পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে বরাক উপত্যকা থেকে বরুণ দাসগুপ্ত, করুণাময় পাল এবং আশু পাল রয়েছেন। অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে সম্মানপ্রাপকদের হাতে পুরস্কার গুলি তুলে দেন স্বামী শুভ্রানন্দ মহারাজ, এন আই বি-র ডিরেক্টর ডাঃ অনুপ অনভেকার, জম্মু মেডিক্যাল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডাঃ টি আর রায়না, হায়দরাবাদ থালাসেমিয়া অ্যান্ড সিকল সেল সোসাইটির অধ্যক্ষ চন্দ্রকান্ত আগরওয়াল সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষিত হয়।