Barak UpdatesHappeningsBreaking News
দিব্যাঙ্গ শিক্ষক ও দিব্যাঙ্গদের সহায়তাকারী শিক্ষকদের সংবর্ধনা
ওয়েটুবরাক, ৭ সেপ্টেম্বর : দিব্যাঙ্গ ছাত্রছাত্রীদের নিঃস্বার্থ শিক্ষা প্রদান করছেন এমন শিক্ষকদের শিক্ষক দিবস উপলক্ষে ডিডিআরসি কাছাড়ের পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়৷ সম্মান জানানো হয় কাছাড় জেলার দিব্যাঙ্গ শিক্ষকদেরও৷ সক্ষম সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে মোট দশজনকে সংবর্ধনা জানায় তারা। মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জিসি কলেজের অধ্যক্ষ ডা. বিভাস দেব, বিশেষ অতিথি সুভাষচন্দ্র নাথ, অপ্রতিম নাগ, ডাঃ রঞ্জনা ধর, সক্ষমের উপদেষ্টা শঙ্কর দাস, পঙ্কজ চক্রবর্তী প্রমুখ।
প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে আরম্ভ হয় অনুষ্ঠান৷ উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন দিব্যাঙ্গ শিল্পী রুদ্রাণী দাস । পরে অনুষ্ঠানের বক্তা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা কাবুগঞ্জ জনতা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুভাষচন্দ্র নাথ প্রাঞ্জল ভাষায় শিক্ষক দিবসের মাহাত্ম্য উপস্থিত সকলের সামনে তুলে ধরেন । তিনি ভারতের শিক্ষককুল সহ বিভিন্ন মনীষীর জীবন কাহিনীর উদাহরণ তুলে ধরে তাদের পথ অনুসরণ করে যুব সমাজকে এগিয়ে চলার আহ্বান জানান । মুখ্য অতিথি ডা. বিভাস দেব সক্ষমের কাজের ভুয়সী প্রশংসা করে বলেন, দিব্যাঙ্গদের জীবনে আশার আলো সঞ্চার করেছে সক্ষম । তার জন্য সংগঠনের সকল কর্মকর্তাদের তিনি সাধুবাদ জানান ।
সম্মান প্রাপক দিব্যাঙ্গ শিক্ষকরা হলেন আবুল কালাম আজাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রন্টু চন্দ্র দাস, রাধামাধব সরকারি নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের মোঃ খাইরুল হক, উজ্জীবন সোসাইটির শিক্ষিকা শিখা মিত্র, শ্রীকোণা দিশা রিহেবিলেটেশন স্কুলের শিক্ষিকা ময়না দেব ও গীতা পাল এবং উধারবন্দের দৃষ্টীহীন দিব্যাঙ্গ সঙ্গীতশিক্ষক পঙ্কজ চক্রবর্তী । নিজে দৃষ্টীহীন হয়েও সঙ্গীত শিক্ষাদান করে সুরের মাধুর্য বিস্তারে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন পঙ্কজবাবু । এছাড়াও দিব্যাঙ্গ ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার প্রসারে নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করছেন এমন কয়েকজন শিক্ষকও সম্মানিত করা হয়৷ সুচরিতার মত একজন দিব্যাঙ্গকে মেট্রিক পরীক্ষার সময়ে বিশেষ সহায়তার জন্য সম্মান জানানো হয় দুধপাতিল অঞ্চলের শিক্ষক যোগেশ চন্দ্র দাসকে। সুনীতা নমঃশূদ্রের কথা বলা ও কানে শোনার সমস্যার জন্য গ্রুপে পড়াশোনায় সমস্যা হলেও দরিদ্র পরিবারের পক্ষে আলাদা করে শিক্ষকের ব্যবস্থা করা ছিল কঠিন । সক্ষমের আহ্বানে সাড়া দেয় লিও ক্লাবের কুইক রেসপন্স টিম । তাদের সাহায্যে বর্তমানে সুনীতাকে নিঃস্বার্থ সেবায় পাঠদান করছেন শ্যামলী চক্রবর্তী । তার এই অবদানকে সম্মান জানানো হয় ।
দৃষ্টিহীন রুদ্রাণী সঙ্গীতের জগতে আগামীর এক নক্ষত্র । মেঘা দাস সহ অনেকের মাধ্যমে সঙ্গীতে তার প্রাথমিক তালিম । বর্তমানে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত তালিমের দায়িত্ব নিয়েছেন স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী সুতপা বক্সী । সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ তার এই সেবার জন্য তাকেও সম্মান জানানো হয় । থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত প্রায় একশত শিশুর জীবন রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন মহাকল এলাকার সিআরসিসি তথা শিক্ষক শাহআলম লস্কর । তাঁর এই অসামান্য অবদানের জন্য তাকে সম্মান জানানো হয়। তাছাড়া এদিন সম্মান জানানো হয় অংশুমান দাসকে । তিনি শিক্ষক নন, তবে তার দায়িত্ব কোনো অংশেই কম নয় । দৃষ্টীহীনদের জন্য ব্রেইল মেথড উপলব্ধ না হওয়ায় পরীক্ষার সময়ে প্রশ্ন পড়তে তাদের একজন সহায়ক দরকার পড়ে। এই সহায়ককে বলে স্ক্রাইব । রুদ্রাণীর মতো দৃষ্টিহীনদের পড়াশোনার উত্থানে যার গুরুত্ব অপরিসীম । গত ছয়টি বছর থেকে এক নাগাড়ে সে রুদ্রাণীর পরীক্ষার স্ক্রাইব । তাকে সম্মান জানান হয় তার এই অবদানের জন্য ।
‘সৌগম্য ভারত অভিযান’-এর লক্ষ্যে ভারত সরকারের উদ্যোগে প্রতিটি রাজ্যে প্রতিষ্ঠান, অফিস, মল গড়ার বিশেষ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে । এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা বিল্ডিংয়ে হুইলচেয়ার, ক্রাচ, হোয়াইটকেন ব্যবহারকারী দিব্যাঙ্গ তথা প্যারালাইসিস, আর্থ্রাইটিস, জয়েন্ট পেন, বার্ধক্য জনিত সিনিয়র সিটিজেন প্রত্যেকের চলার উপযোগী করে তোলা । বরাক উপত্যকায় হাতে গোনা কটি বিল্ডিংয়ে রেম্প থাকলেও বাকি ব্যাবস্থা নেই বললেই চলে । সম্প্রতি আসাম সরকারও প্রতিটি জেলাতে এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে । সক্ষম দীর্ঘদিন থেকে এনিয়ে সরকারি স্তরে দাবি জানিয়ে আসছিল । অবশেষে আশার আলো নিয়ে এগিয়ে এলো বরাক উপত্যকার অগ্রণী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জি সি কলেজ । ইউজিসি গাইডলাইন মেনে আগামী ন্যাক ভিজিটের পূর্বে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে বেরিয়ার-ফ্রি করে তুলতে উদ্যোগী হলেন কর্তৃপক্ষ । কয়েক দফা বৈঠকও হয় সক্ষম সংস্থার সাথে । তাদের উদ্যোগকে সম্মান জানাতে সোমবার সন্ধ্যায় শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জিসি কলেজের অধ্যক্ষ ডা. বিভাস দেব ও অধ্যাপক অপ্রতিম নাগের হাতে একটি হুইলচেয়ার ও ব্লাইণ্ড স্টিক তুলে দেওয়া হল। হুইলচেয়ারটি দান করেছেন লায়ন্স ক্লাব অফ শিলচর স্মাইল-এর সৌমিত্রশঙ্কর দত্ত ও শঙ্কর দাস।