Barak UpdatesHappeningsBreaking News

দাবি পূরণে ক্যাবিনেট বৈঠক পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিল বিডিএফ, রবিবার সর্বদলীয় বৈঠক

ওয়েটুবরাক, ২৩ নভেম্বর : গত ১৮ নভেম্বরের সফল বনধ পালনের জন্য আপামর বরাকবাসীকে কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানিয়ে সরকারকে বনধের দাবিগুলো মেনে নিয়ে আগামী কেবিনেট বৈঠকে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য দাবি জানাল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।

মঙ্গলবার স্থানীয় পেনসনার্স ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিডিএফের মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, ১৮ নভেম্বরের ঐতিহাসিক বনধ বিডিএফ বা সহযোগী কোনও রাজনৈতিক দলের বনধ ছিল না। এই বনধ ছিল জনগনের বনধ। এই বনধ ছিল বিগত কয়েক বছর ধরে সরকারের একের পর এক জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ। শাসক দলের ঔদ্ধত্য, এনকাউন্টার ও বুলডোজার নীতি, বিগত বন্যায় স্থানীয় নেতাদের ভূমিকা, অনৈতিক পুরকর বৃদ্ধির চক্রান্ত এবং বরাকের কর্মপ্রার্থীদের প্রতি বঞ্চনা সব মিলিয়ে জনগণের মধ্যে যে প্রচণ্ড ক্ষোভ রয়েছে, তার প্রমাণ মিলল এই বনধে। তিনি বলেন, সরকার যদি এই দেয়াল লিখন পড়তে না পারে তবে অবশ্যই এর মূল্য তাদের চোকাতে হবে।

দুদিন আগে এখানে যে একটি ইউনানি চিকিৎসালয়ের উদ্বোধন করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, এর উল্লেখ করে প্রদীপবাবু অভিযোগ করেন, সেখানেও কোন স্থানীয় নিযুক্তি হয়নি। যারা এই হাসপাতালের জমি দান করেছিলেন এবং স্থানীয় যারা এখানে নিযুক্তির জন্য আন্দোলন করেছিলেন, তাঁদের দাবিকে নস্যাৎ করে ফের যোগ্যতার দোহাই দিয়ে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে নিয়োগ করে এখানে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, বিডিএফ এই ইস্যু সহ বরাক বঞ্চনা নিয়ে যেমন গত তিনবছর ধরে প্রতিবাদ জানাচ্ছে তেমনি আগামীতেও সক্রিয় থাকবে এবং মাঠ ছেড়ে দেবার কোনও প্রশ্নই নেই। দমনপীড়ন বা গ্রেফতার করে তাদের কন্ঠরোধ করা যাবে না। তিনি তাদের আগামী আন্দোলনে সমগ্র বরাকবাসী বিশেষতঃ যুবসমাজকে সক্রিয় সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, এরকম একটি সফল বনধ পালনের পরও বনধের দাবিগুলি নিয়ে সরকারি তরফে এখন অবধি কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। আগামী ২৯ নভেম্বর শিলচরে ক্যাবিনেট বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তাঁরা আশাবাদী, এই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে বরাক থেকে অন্তত ১০০০ চাকরির নিশ্চয়তা দেবেন। তিনি বলেন, যদি এসব চাকরি বিজেপি দলের ক্যাডারদের দেওয়া হয়, তাতেও আপত্তি নেই। কিন্তু এখানকার স্থানীয় চতুর্থ ও তৃতীয় শ্রেণীর পদে স্থানীয়দেরই নিযুক্তি দিতে হবে। এছাড়া, নেডার সভাপতি হিসেবে আসামের মুখ্যমন্ত্রীকে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা ক্রমে মেঘালয় সহ উত্তর পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যে অ-জনজাতি নির্যাতন বন্ধে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে, প্রশাসনিক জটিলতা থেকে মুক্ত করতে হবে বরাকের সুপারি বাণিজ্যকে। যদি ২৯ নভেম্বর অবধি এইসব ব্যাপারে সরকারের তরফে ইতিবাচক কোনও সাড়া না মেলে তবে অবশ্যই বিডিএফ পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেবে। এই নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী ২৭  নভেম্বর বিডিএফ একটি সর্বদলীয় বৈঠকের আয়োজন করেছে।

বিডিএফ কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক খাইদেম কান্ত সিং বলেন, সরকার যদি দাবি করে যে, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সঠিক হয়েছে, তবে দুটো ব্যাপারে উদ্যোগ নিক। প্রথমতঃ বরাকের তিন জেলার মনোনীত প্রার্থী তালিকা প্রাপ্ত নম্বর সহ প্রকাশ করুক। দ্বিতীয়তঃ গৌহাটি হাইকোর্টের কোনও নিরপেক্ষ বিচারককে দিয়ে বরাকের কর্মপ্রার্থীদের উত্তরপত্র আবার যাচাই করার ব্যাবস্থা নিক। এছাড়া মেঘালয় তথা উত্তর পূর্বে অজনজাতিদের নিরাপত্তার ব্যাপারে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বিবৃতি দিতে হবে বলে দাবি জানান তিনি।

বীর লাচিত নিয়ে বরাক থেকে লক্ষাধিক রচনা পাঠানো হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর উচ্ছ্বাস প্রসঙ্গে বিডিএফের আরেক আহ্বায়ক আইনুল হক মজুমদার দাবি করেন, মানুষ যে আসামের ইতিহাস, সংস্কৃতি নিয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল, এটা তারই প্রমাণ। ভূপেন হাজারিকাকেও আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি এরকমই আপন করে নিয়েছে। তিনি গুয়াহাটিতে বীর লাচিতের পাশাপাশি জাতীয় বীর নেতাজি সুভাষচন্দ্র ও জাতীয় কবি রবীন্দ্রনাথের মূর্তি প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker