Barak UpdatesHappeningsBreaking News
ডিলিমিটেশনে বরাকের জনমত উপেক্ষিত, ক্ষুব্ধ বরাক বঙ্গ
ওয়েটুবরাক, ১৫ আগস্ট : কেন্দ্র পুনর্বিন্যাস নিয়ে বরাক উপত্যকার সাধারণ মানুষের যে ভাবাবেগ গত ২০ জুলাই গুয়াহাটিতে নির্বাচন কমিশন আহুত শুনানিতে ধ্বনিত হয়েছিল তা স্বীকার করে নিয়েও চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অগ্রাহ্য করার ঘটনাকে জনমত উপেক্ষাই বলল বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি সত্বেও যুক্তিহীনভাবে বরাক উপত্যকার আসন সংখ্যা ১৫ থেকে কমিয়ে ১৩ করে প্রতিটি কেন্দ্র যেভাবে কাটাছেঁড়া করা হয়েছে তাতে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি দলিত হয়েছে। শিলচর, করিমগঞ্জ ও বদরপুরের মত ঐতিহাসিক শহরের নির্বাচন এলাকা একেবারে তছনছ হয়ে গেছে। এই ঘটনা অসমের পরিষদীয় রাজনীতির ইতিহাসে নজিরবিহীন হিসেবে চি হ্নিত হয়ে থাকবে।
নির্বাচন কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত সোমবার বলেছেন, কেন্দ্র পুনর্বিন্যাসের এই নতুন ছবি উপত্যকার রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিচিতিকে এলোমেলো করে দিয়ে এ অঞ্চলের সম্মিলিত কন্ঠস্বরকে দুর্বল করে দিতে চাওয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করেননি । কমিশনের শুনানিতে আমন্ত্রিত সম্মেলনের প্রতিনিধিদলের তরফে কেন্দ্র কাটাছেঁড়ায় যে বাস্তব সমস্যা তৈরি হবে সে চিত্রটি সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছিল বলে সাধারণ সম্পাদক দত্ত এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন।
বরাক উপত্যকার সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রীয় চেতনাকে মজবুত করার জন্য বরাবর সদর্থক ভূমিকা পালন করে এসেছে। কেন্দ্র ও রাজ্যে যে পটপরিবর্তন ঘটেছে তাতেও বরাক উপত্যকার একটা ভূমিকা ছিল। বিবৃতিতে এ প্রসঙ্গ টেনে এনে বরাকবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত বলেন, পরিতাপের বিষয়, উপত্যকার এই অবস্থান ক্ষমতার অলিন্দে মোটেই গুরুত্ব পাচ্ছে না । কেন্দ্র পুনর্বিন্যাসের হটকারি সিদ্ধান্তের প্রভাব আগামী দিনে এ অঞ্চলে কোন খাতে বইবে তা গভীরভাবে বিবেচনা না করেই কিছু নির্দিষ্ট মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া মোটেই বাস্তববুদ্ধির পরিচায়ক হয়নি। সময়েই সেটা প্রমাণিত হবে। সাধারণ সম্পাদক দত্ত বলেছেন, রাষ্ট্রীয় পরিসরে উপত্যকার যে আত্মপরিচয় রয়েছে তাকে ভূমিপুত্রের স্বঘোষিত সংজ্ঞায় নির্মূল করে দেওয়ার প্রণালীবদ্ধ তৎপরতাকে কেন্দ্র পুনর্বিন্যাসের এই প্রক্রিয়া সহায়তা করবে। ‘অসম চুক্তি যা পারেনি, এনআরসি যা পারেনি, এবারের কেন্দ্র পুনর্বিন্যাসে সেই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হয়েছে ‘ এ ধরনের স্বদম্ভ আস্ফালন এই প্রেক্ষাপটে এক অশনি সংকেত। রাজ্যস্তরে, বিধানসভার ভেতরে উপত্যকার কণ্ঠস্বর যাতে ক্ষীণ হয়ে পড়ে সেজন্যে অনেকদিন ধরেই নানাভাবে তৎপরতা চলছিল । উপত্যকার রাজনৈতিক নেতৃত্বের আত্মকেন্দ্রিক ভূমিকায় এবার তাতে নতুন মাত্রা যোগ হল ।
অসম চুক্তি সম্পাদনের সময় বরাক উপত্যকার অভিমতকে উপেক্ষা করে এখন ঘুরপথে চুক্তির ৬ নং দফা রূপায়ণের প্রক্রিয়ায় এই উপত্যকার মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক অধিকারসমূহ কেড়ে নেওয়ার প্রয়াস চলছে বলে বিবৃতিতে অভিমত ব্যক্ত করেন বরাকবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক। বলেন, উগ্র জাতীয়তাবাদী ইন্ধনে ভূমিপুত্রের সংজ্ঞা নির্ধারণে একপেশে মনোভাব নিয়ে উপত্যকার ভাষিক পরিচয় সুকৌশলে বদলে দেবার চেষ্টা চলছে। দেশভাগের বলি ভারতীয়দের পিঠে বিদেশি তকমা সেটে নানাভাবে নিগ্রহ করা, নিযুক্তিতে সীমাহীন বঞ্চনা করে উপত্যকায় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জনবিন্যাসের দীর্ঘদিনের চরিত্র বদল এবং শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ক্রমাগত উপেক্ষা এ উপত্যকার ভবিষ্যতকে বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামোয় অনিশ্চিত করে তুলেছে বলে বিবৃতিতে মত পোষণ করেন সাধারণ সম্পাদক দত্ত। বলেন, এ নিয়ে উপত্যকায় জনমনে যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছে বিভাজন নীতি নিয়ে রাজনৈতিক স্তরে তাকে এড়িয়ে চলার প্রবণতা আত্মঘাতী অবস্থানের পরিচয়ই তুলে ধরছে। বিগত সাড়ে সাত দশকে বার বার উপত্যকার রাজনীতির রং বদল হয়েছে, মুখ বদল হয়েছে। সময়ই শেষ কথা নয়। ইতিহাস থেকে সবার পাঠ নেওয়া উচিত বলে বিবৃতিতে সাধারণ সম্পাদক দত্ত পরামর্শ দেন।