Barak UpdatesHappeningsBreaking News
ডলু : শিলচরে বিক্ষোভ দেখাল বিভিন্ন সংস্থা
ওয়েটুবরাক, ১৩ মে : ডলু, ময়নাগড় ও লালবাগ চা বাগানের শ্রমিকদের গণশুনানির মতামতের বিরুদ্ধে গিয়েই দুদিন ধরে ফলনশীল চা গাছ উপড়ে ফেলে গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দর তৈরির কাজ চলছে৷ এর বিরুদ্ধে আজ শুক্রবার শিলচরে ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়। চা শিল্পকে ধ্বংস করা চলবে না, চা বাগান ধ্বংস না করে পতিত জমিতে বিমানবন্দর নির্মাণ কর, ১৪৪ ধারা জারি করে চা শ্রমিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা চলবে না ইত্যাদি স্লোগানে আজ ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশ মুখরিত হয়ে ওঠে।
অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের অরিন্দম দেব, এআইইউটিইউসি’র সুব্রতচন্দ্র নাথ, বরাক হিউম্যান রাইটস প্রটেকশন কমিটির তানিয়া সুলতানা লস্কর, মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের নির্মলকুমার দাস, বিডিওয়াইএফ-এর কল্পার্ণব গুপ্ত প্রমুখ সেখানে বক্তব্য রাখেন। তাঁরা বলেন, বিমানবন্দর স্থাপনের উদ্যোগের বিরোধী কেউ নয়, কিন্তু যে কায়দায় শ্রমিকদের মতামতকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে চূড়ান্ত স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে চা শিল্পকে ধ্বংস করা হচ্ছে, তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্র এই ঘটনায় আবারও জনসম্মুখে উন্মোচিত হল।
তারা বলেন, যারা আজ বলছেন চুক্তিপত্ৰে শ্রমিকদের ছাঁটাই না করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তাই শ্রমিকস্বার্থ বিঘ্নিত হবে না, তারা হয় চা শিল্প সম্পর্কে কিছু জানেন না বা জেনেও মিথ্যাচার করছেন। কারণ বর্তমানে চা বাগানে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা কম, বেশিরভাগ শ্রমিক ঠিকা হিসেবে অস্থায়ী রূপে কাজ করেন। বাগানের ২১টি সেকশনের চা গাছ উপড়ে ফেলে প্রস্তাবিত গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দর তৈরি হলে চা বাগানের কাজের পরিসর সংকুচিত হবে, ফলে অস্থায়ী শ্রমিকরা ভবিষ্যতে কাজ পাবেন না। স্থায়ী শ্রমিকদের ছাঁটাই না করার প্রতিশ্রুতি চুক্তিতে থাকলেও, অস্থায়ী শ্রমিকদের কাজ দিতে চা বাগান কর্তৃপক্ষ বাধ্য নয়।
শ্রমিকদের আন্দোলনের পেছনে মাওবাদীদের মদত রয়েছে বলে শিলচরের নির্বাচিত সাংসদ যা বলেছেন, এরও সমালোচনা করেন তাঁরা৷ বলেন, উচ্ছেদের পূর্বে, এমনকী উচ্ছেদ চলাকালেও চা শ্রমিকরা সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। অসহায় শ্রমিকদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চালানো আন্দোলনকে এভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে জুড়ে দিয়ে সাংসদ বরাক উপত্যকার চা শ্রমিকদের অপমান করেছেন। তারা এও বলেন, চিনি কল, কাগজ কলের পর বরাক উপত্যকার চা শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার চক্রান্ত স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে। জনগণের অন্যতম গণদাবি মহাসড়ক নির্মাণ, শিলচরের যানজট সমস্যা সমাধানে উড়ালপুল নির্মাণ, কাগজ কল পুনর্বার চালু করা, শিলচর সিভিল হাসপাতালকে তিনশো শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা ইত্যাদি কাজে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বর্তমান সরকার বিমানবন্দর নির্মাণের মাধ্যমে কর্মসংস্হান প্রদানের যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তা যে নিছক মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তাই চা শিল্পকে ধ্বংস করা থেকে সরকারকে বিরত থাকতে ও বিতর্কিত জমি অধিগ্রহণ না করে অনুর্বর জমিতে বিমানবন্দর স্থাপনের জোরালো দাবি উত্থাপন করেন তাঁরা। আজকের প্রতিবাদী সমাবেশে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কোরাসের বিশ্বজিত দাস, এআইডিএসও’র জেলা সম্পাদক গৌরচন্দ্র দাস, টিইউসিসি’র রাজু দেবনাথ, বিশিষ্ট লেখিকা স্বপ্না ভট্টাচার্য, সমাজকর্মী কমল চক্রবর্তী, বিডিএফ-এর ঋষিকেশ দে, জয়দীপ ভট্টাচার্য, লেখিকা আদিমা মজুমদার, সুকল্পা দত্ত, বিজয়া করসোম, কবি তমোজিৎ সাহা, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মধুমিতা দেব, সারওয়ার জাহান লস্কর, প্রাক্তন অধ্যক্ষ দীপঙ্কর চন্দ, হানিফ বড়ভূঁইয়া, পাবলিক ভিউ-এর কনক পাল, এআইডিওয়াইও’র জেলা সম্পাদক বিজিত কুমার সিংহ , পরিতোষ ভট্টাচার্য, এসইউসিআই (সি) দলের জেলা সম্পাদক ভবতোষ চক্রবর্তী, পিপলস্ সায়েন্স সোসাইটির হিল্লোল ভট্টাচার্য সহ বহু বিশিষ্টজনেরা৷