Barak UpdatesHappeningsBreaking News

জয়লক্ষ্মী দেবীর অর্থানুকূল্যে লাখুদার সর্বোদয় স্কুলে পাঠাগার উদ্বোধন

ওয়েটুবরাক, ২০ অক্টোবরঃ দশদিনের ব্যবধানে দুই বড় প্রকল্প মাথা তুলে দাঁড়াল মধুরামুখে। লাখুদার স্মৃতি জড়িত সর্বোদয় স্কুলে উদ্বোধন হল কল্যাণী ভট্টাচার্য স্মৃতি পরিষেবা কেন্দ্র এবং উপেন্দ্রকুমার চক্রবর্তী-সুমতিপ্রভা দেবী পাঠাগার। সর্বোদয় ট্রাস্টের উদ্যোগে নির্মিত পরিষেবা কেন্দ্রের জন্য ড. সুখময় ভট্টাচার্য দিয়েছেন সাত লক্ষ টাকা এবং পাঠাগার তৈরির জন্য জয়লক্ষ্মী দেবী প্রদান করেছেন আড়াই লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও এই প্রকল্পে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সুকল্পা দত্ত (এক লক্ষ) এবং প্রয়াত সুশীল বণিকের প্রবাসী পুত্রকন্যা (এক লক্ষ)।

পরিষেবা কেন্দ্র উদ্বোধনের ঠিক দশদিন পর মঙ্গলবার সাংসদ ডা. রাজদীপ রায়ের হাত ধরে উদ্বোধন হল উপেন্দ্রকুমার চক্রবর্তী-সুমতিপ্রভা দেবী পাঠাগারের। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জয়লক্ষ্মী দেবী তাঁর মা-বাবার স্মৃতিতে এই পাঠাগার নির্মাণে সর্বোদয় ট্রাস্টকে অর্থ প্রদান করেন। দুইশোটি বইও তিনি পাঠাগারে দান করেন। উদ্বোধনী পর্বে উপস্থিত ছিলেন ডা. কুমারকান্তি (লক্ষণ) দাস, জয়লক্ষ্মী দেবীর প্রতিনিধি শিবব্রত ভট্টাচার্য, প্রাক্তন পুরপ্রধান শান্তনু দাস, ট্রাস্টের কার্যকরী সভাপতি ভাস্কর দত্ত,  সাধারণ সম্পাদক শেখর পালচৌধুরী, সদস্য রঞ্জিত নাগ, রোটারি ক্লাব গ্রেটার শিলচরের কর্মকর্তা জয়জিৎ বিশ্বাস প্রমুখ। ছিলেন প্রজাপিতা ঈশ্বরীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপালী মাতা, দীপ্তি মাতা ও শৈবা মাতা।

অনুষ্ঠানেই দাবি ওঠে মধুরামুখে হাই স্কুল নির্মাণের। শেখর পালচৌধুরী বলেন, তাহলে দুধপাতিল ও মালুগ্রাম, ঘনিয়ালা অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবে। সাংসদকে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে তিনি ট্রাস্টের তরফে অনুরোধ জানান। সাংসদ অবশ্য ছাত্র পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ছাত্রছাত্রীর অভাবে বহু সরকারি স্কুলকে অন্য স্কুলের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি তাদের দাবি খারিজ করে দেননি। আগামী মাসে ক্যাবিনেট বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী রণোজ পেগু শিলচরে আসছেন। তখন তিনি বিষয়টি তাঁর নজরে নেবেন। পরে বিভাগীয় তরফে সব ধরনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হবে। সাংসদ ডা. রায় সর্বোদয় ট্রাস্টের কাজকর্মে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ঘোষণা করেন, তাঁর সাংসদ এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা দেবেন। এই ধরনের কাজে তাঁর যে আরও বেশি অর্থ দেওয়ারই ইচ্ছে হয়, সে কথা উল্লেখ করে জানান, করোনার জন্য তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। গত দুই বছরে করোনা মোকাবিলায় সাংসদদের প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে দশ কোটি টাকা করে দিতে হয়েছে। ফলে এখন বাকি টাকায় তাঁকে সাত বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতে হবে। তিনি ট্রাস্টকে একশো বছরের একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে পরামর্শ দেন।

প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা ট্রাস্টের সদস্য শান্তনু দাস পাঠাগার নির্মাণের জন্য তাঁর সন্তোষ প্রকাশ করেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জয়লক্ষ্মী দেবীর প্রতি। তিনি জানান, তাঁর বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী সরোজকুমার দাসও মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন এখানে একটি পাঠাগার তৈরি হোক।

আইআইটি দিল্লির অধ্যাপক ড. রজতকুমার বৈশ্য এখানে এডুকেশন সেন্টার ফর স্কিল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এন্ট্রেপ্রেনারশিপ খোলার প্রস্তাব দিয়েছেন। চলছে সদ্ভাবনা মণ্ডপের কাজ। ২ কোটি টাকার এই প্রকল্পে এখন প্রথমে পাচিল নির্মাণ হচ্ছে।

সেদিনের অনুষ্ঠানে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে প্রাক্তন বিধায়ক বিমলাংশু রায়কে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাঁর পুত্র সাংসদ রাজদীপ রায় ওই সম্মান গ্রহণ করেন। ট্রাস্টকর্তারা বলেন, তাঁদের কাজকর্মে তাঁরা বিমলবাবুর সহযোগিতা সবসময় পেয়েছেন। দুই দফায় ট্রাস্টকে টাকাকড়িও এনে দিয়েছিলেন। সম্মান জানানো হয় বিশিষ্ট চিকিৎসক, সমাজসেবী ডা. কুমারকান্তি দাসকেও। প্রায় বিনা বেতনে শিক্ষাদান করে চলা সর্বোদয় স্কুলের শিক্ষিকাদেরও ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সম্মাননা দেওয়া হয়। শিক্ষিকারা হলেন মাধুরী চম্পা চৌধুরী, মৌসুমী চৌধুরী, অনিতা বসু, রূপশ্রী পুরকায়স্থ, মধুমতী আচার্য, শর্মিষ্ঠা দে চৌধুরী এবং বিপা চক্রবর্তী। ডোনার রাজীব দেব, দীপককুমার দাস, পার্থ দাস, অভিজিত দাস, এবি চৌধুরী, শান্তনুনন্দন ভট্টাচার্য, অনির্বাণ দত্ত, মলয়রঞ্জন চক্রবর্তী এবং জয়দীপ ধরকেও স্মারক সম্মান প্রদান করা হয়েছে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অশোক কুমার দেব। শুরুতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন কল্যাণী দাম। গণেশ বন্দনা পরিবেশন করে তৃষা ভট্টাচার্য।

(প্রথম ছবিটি সম্মাননা গ্রহণের, দ্বিতীয় ছবিতে  নিজের বাড়িতে বসে পাঠাগারের জন্য বই তুলে দিচ্ছেন জয়লক্ষ্মী দেবী৷)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker