Barak UpdatesHappeningsBreaking News
জনপ্রিয় শিক্ষিকা সুলেখা দেবের জীবনাবসান
ওয়েটুবরাক, ২২ মার্চ: শিক্ষাব্যবস্থায় আজকের মত অন্ধকার ঘনায়নি। শিক্ষকরা ছিলেন সত্যিকার অর্থেই মানুষ গড়ার কারিগর। সেই উজ্জ্বল দিনে শিক্ষকতার পবিত্র পেশাকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি । মানবিক দায়বদ্ধতা এবং মূল্যবোধের শিক্ষায় গড়ে তুলেছেন বহু ছেলে মেয়েকে। বিস্তীর্ণ তারাপুর অঞ্চলে শিক্ষার প্রচার প্রসারেও তার অসামান্য অবদান। কালের নিয়মে এবার স্তব্ধ হয়ে গেল একটি কর্মমুখর জীবন। রবিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তারাপুরের একসময়ের বহু জনপ্রিয় শিক্ষিকা সুলেখা দেব। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৮।
৩৩৫ নং তারাপুর পাঠশালা স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সুলেখা দেব। ওই স্কুলে প্রায় ৩০ বছর শিক্ষকতা করে ২০০৩ সালে প্রধান শিক্ষিকার পদে থেকে অবসরে যান তিনি । কর্মজীবনে একজন সফল শিক্ষিকা হিসেবে বিরাট সুনাম অর্জন করেছিলেন। প্রখর জ্ঞান, ছাত্রদের প্রতি আন্তরিকতা, ব্যতিক্রমী পাঠদান শৈলী এবং ব্যক্তিত্বের জন্য সব মহলেই জনপ্রিয় ছিলেন। ছাত্রদের শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রাথমিক ভিত রচনায় তাঁর নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার দৃষ্টান্ত আজও অনেকের মুখে মুখে। তাঁর শিক্ষায় শিক্ষিত ওই পাঠশালা স্কুলের বহু ছাত্র-ছাত্রী আজ দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। এমনকি অবসর জীবনেও অঞ্চলের শিক্ষার প্রসার ও দুস্থ ছাত্রদের বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন তিনি । ভাষা শহিদ স্মারক সমিতি, তারাপুর জনকল্যাণ সংঘ, বরাক বার্তা সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংগঠন তাঁর কর্মতৎপরতাকে সম্মান জানিয়েছে। তবে বেশ কিছুদিন থেকে দুরারোগ্য ব্যাধি বাসা বেঁধেছিল শরীরে। এর মধ্যে দু-তিন বছরের মাথায় ৪০ বছরের ছেলে প্রশান্ত প্রতীম দেব (পিকলু)’র অকাল মৃত্যু দেখেছেন চোখে এবং হারিয়েছেন স্বামী অবসরপ্রাপ্ত ডাক অধীক্ষক পরিমল দেবকে। অসুস্থতা এবং আঘাতের পর আঘাতে শরীর ভেঙে পড়েছিল। বাঙ্গালোরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হলেও কোনও কাজ হয়নি। শারীরিক অবস্থার খুব বেশি করে অবনতি হওয়ায় ১৩ মার্চ শিলচরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। কিন্তু সবার প্রার্থনা, চিকিৎসকদের প্রয়াসকে ব্যর্থ করে রবিবার বেলা ১১ টা ৩৭ মিনিটে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। খবর শুনে পুরনো ছাত্র-ছাত্রী সহ পরিচিত মহলের অনেকেই তাঁর তারাপুর বীর টিকেন্দ্রজিত সরণীর বাড়িতে হাজির হন। ভিড় জমে ওঠে শিলচর শ্মশান ঘাটেও। শুধু একজন শিক্ষিকা নন, নির্ঝঞ্ঝাট, সদা পরোপকারী এবং অঞ্চলের দায়িত্বশীল একজন অভিভাবক সমূহ ব্যক্তিত্বকে হারিয়ে তারাপুর অঞ্চলে শোকের আবহ তৈরি হয়েছে। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন ছেলে প্রজ্জোল দেব, দুই মেয়ে সুস্মিতা দেব ও সুদীপ্তা দেব, দুই পুত্রবধূ, দুই জামাতা, দুই নাতি সহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণমুগ্ধকে৷