Barak UpdatesHappeningsBreaking News
শান্তিচুক্তি করতে গিয়ে বাঙালিদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না, পরামর্শ বরাক বঙ্গের
বাংলাকে দ্বিতীয় রাজ্যভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি কেন্দ্রীয় সাধারণ সভায়
ওয়েটুবরাক, ২ মে : অসমে হিংসার অবসান ঘটিয়ে স্থায়ী শান্তি স্থাপনে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে ভালো প্রয়াস বলে স্বাগত জানিয়ে আলফা এবং অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিতে কৌশলে রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী বাঙালিকে সংবিধানিক অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। রবিবার হাইলাকান্দি জেলার দক্ষিণ প্রান্তের শহর কাটলিছড়ায় ইমাদ উদ্দিন বুলবুলের সভাপতিত্বে সম্মেলনের ৪১-তম বার্ষিক সাধারণ সভা থেকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে এই পরামর্শ দেওয়া হয়।
বরাক উপত্যকার তিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও বৌদ্ধিক পরিমণ্ডলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করে বলা হয়েছে, ১৯৮৫ সালে অসম চুক্তি সম্পাদনের সময় তৎকালীন কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার রাজ্যের বাঙালি এবং অন্যান্য জনগোষ্ঠীর অভিমত গ্রহণ করার আর্জিকে গুরুত্ব দেয়নি । অসম চুক্তিতে কোথাও ‘ খিলঞ্জিয়া ‘ বা ‘ ভূমিপুত্র ‘ শব্দ উল্লেখিত না থাকলেও পরে ওই শব্দবন্ধকে সামনে রেখে বাঙালি জনগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতি, নিযুক্তি, জমি কেনাবেচা সহ অন্যান্য সংবিধানসম্মত অধিকারগুলো কেড়ে নেওয়ার কৌশলী উদ্যোগ নেওয়া হয় ।কেন্দ্র সরকার গঠিত বিপ্লব শর্মা কমিটির প্রতিবেদন সরকারিভাবে গ্রহণ না করা হলেও তার আধারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে । ফলে একদিকে বিদেশি সন্দেহে নোটিশ দিয়ে ও অন্যান্যভাবে এই জনগোষ্ঠীর লোকদের ক্রমাগত হয়রানি ও নিগ্রহ চলছে, অন্যদিকে ভাষা-সংস্কৃতি চর্চা ও বিকাশ, সরকারি অনুদান ও নিযুক্তিতে বৈষম্য এবং জমি সংক্রান্ত অধিকারগুলো বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় হরণ করার চেষ্টা হচ্ছে। আলফার সঙ্গে প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তিতে যদি তাকে আরও পাকাপোক্ত করার ব্যবস্থা সন্নিবিষ্ট হয়, তবে সেটা রাজ্যে সার্বিক শান্তি ও প্রগতির সহায়ক হবে না। রাজ্যের সমৃদ্ধি প্রয়াসে বাঙালিও সমান অংশীদার। জাতিবিদ্বেষপ্রসূত মনোভাব কোনওভাবে কল্যাণকর হয় না। এ বিষয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক নেতৃত্বকে সরকারের দরবারে উপযুক্ত পরামর্শ প্রদানের জন্য সভা থেকে আহবান জানানো হয়।
সভায় বরাক উপত্যকায় ভাষা আইনের বিধান লংঘন করে সরকারি সাইনবোর্ডে বাংলা বর্জন, নিযুক্তির ক্ষেত্রে এই উপত্যকার কর্মপ্রার্থীদের ক্রমাগত বঞ্চনা, মাতৃভাষা মাধ্যমের বিদ্যালয়গুলো একত্রীকরণের নামে অবলুপ্তি ঘটানো, মাতৃভাষা শিক্ষার অধিকারকে সংকুচিত করার প্রতিবাদ জানিয়ে, বরাকের ভৌগোলিক মানচিত্র পরিবর্তনের উদ্যোগ, প্রতিবেশী মণিপুর ও মেঘালয়ে বাঙালিদের বিদেশি সন্দেহে হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করার দাবি জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
একই সঙ্গে বাংলাকে রাজ্যের সহযোগী রাজ্যভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, কেন্দ্র সরকারের ‘অ্যাক্ট ইষ্ট’ নীতির আধারে বরাক উপত্যকার যোগাযোগ ও পরিকাঠামো ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্থানীয় সম্পদকে কাজে লাগিয়ে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয় । সভা থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, এই উপত্যকার জনবিন্যাসের চরিত্র বদল করার কোনও চেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না । সম্মেলনের দুই সহ-সভাপতি ইমাদ উদ্দিন বুলবুল ও মানিক চক্রবর্তী যৌথভাবে সম্মেলনের পতাকা উত্তোলন, প্রদীপ প্রজ্বলন শেষে সাধারণ সভার কাজ শুরু হলে সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত গত এক বছরের কাজকর্মের খতিয়ান তুলে ধরে সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেন । কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ আশিস চৌধুরী পেশ করেন সম্মেলনের সাংগঠনিক এবং দূর শিক্ষা কেন্দ্রের আয় ব্যয়ের হিসেব।
সভায় সামগ্রিক আলোচনায় অংশ নেন নীতিশ ভট্টাচার্য, বিনোদলাল চক্রবর্তী, সঞ্জীব দেব লস্কর, সব্যসাচী রায়, দীপক কান্তি আইচ, আশিসরঞ্জন নাথ, সেলিম খান, অরবিন্দ পাল, বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, মাশুক আহমেদ, মন্দিরা দেবরায়, আশুতোষ দাস, দীপক সেনগুপ্ত, দয়াল চন্দ্র সরকার, অনিল পাল, হিমাংশু শেখর দেবরায়, সব্যসাচী পুরকায়স্থ, সন্তোষ দত্ত, আলিমুদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ। সাম্প্রতিককালে উপত্যকার তিন জেলায় প্রয়াত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সভায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভা পরিচালনায় সভাপতি ইমাদ উদ্দিন বুলবুলকে সহায়তা করেন অধ্যাপক দেবজিৎ দে। সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশ নেন কাটলিছড়া অঞ্চলের শিল্পীরা।